সুচিত্রা সেনের সানগ্লাস

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 4 Jan 2024

4890 বার পড়া হয়েছে

Shoes

সিনেমার নায়িকা আর তাদের সানগ্লাসের অন্তরাল রহস্যময় এক এলাকা। কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, চোখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। নায়িকাদের বেলায় বলা যায়, চোখ ঢেকে যায় সানগ্লাসে। তারা হয়তো আড়াল খোঁজেন। হয়তো লুকিয়ে রাখতে চান চোখজোড়া যেখানে ফুটে ওঠে আবেগ, কান্না, ঘৃণা আর খানিক রহস্য। হলিউডে ১৯২০ সালের পর থেকে নায়িকাদের একান্ত হয়ে ওঠে সানগ্লাস। ৫০-এর দশকে সানগ্লাসকে স্টাইলে পরিণত করেন ইনগ্রিড বার্গম্যান আর তার পর মেরিলিন মনরো। এই বঙ্গদেশে ‘ নবরাগ’ ছবিতে সংক্ষিপ্ত পোশাক আর গোগো সানগ্লাস পরা সুচিত্রা সেন নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছিলেন দর্শকদের।মিসেস সেনের রাগ অনুরাগের খবর ডুবুরি নামিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু রহস্যের অন্তরাল তৈরিতে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন মেরিলিন মনরোকেও এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। সিনেমার পর্দা থেকে নির্বাসন নিয়ে একেবারে শোবার ঘরের আড়ালে চলে যান বাংলা সিনেমার এই অভিনেত্রী। কালো সানগ্লাস তাকে কতোটা আড়াল দিয়েছিলো তা জানা না-গেলেও জীবনযাপনে তিনি তৈরি করেছিলেন কঠিন আড়াল।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো সুচিত্রা সেনের জীবনের আড়াল নিয়ে ‘সুচিত্রা সেনের সানগ্লাস’।

বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারান্তিনো একবার বলেছিলেন, নায়িকাদের জন্য সানগ্লাস হচ্ছে জানালা বন্ধ করে দরজা খুলে দেয়ার মতো একটা ব্যাপার।চোখ মানুষের জানালার মতো। কিন্তু একজন অভিনেত্রী যখন সানগ্লাসে চোখ ঢেকে ফেলেন তখন তিনি নিজের শরীরকে আরও বেশি উন্মুক্ত করেন। হয়ে ওঠেন আরও বেশি আবেদনময়ী।সত্তরের দশকে বিজয় বসুর ‘নবরাগ’ ছবিটি। যেখানে জুটি বাঁধেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। সমুদ্রতটে সুইমিং স্যুট পরে নগ্ন পায়ে খোলা বিভাজিকায় গোগো সানগ্লাস চোখে সুচিত্রা আর উত্তম নগ্ন দেহে শুধু শর্টস। শোনা যায়, উত্তম-সুচিত্রার চিরাচরিত রূপের ছন্দপতন দেখে দর্শক যাতে ক্ষেপে না-যায় তাই ঐ দৃশ্য কিছুটা কাটছাট করতে বাধ্য হন পরিচালক। ‘নবরাগ’ ছবি জুড়েই সুচিত্রা কখনও স্নানপোশাকে সাহসী বা অর্ন্তবাস পরে শাওয়ারের নিচে স্নাত।

সানগ্লাসের মতো সুচিত্রা সেন তাঁর শেষ জীবনটাকেও ঢেকে ফেলেছিলেন আড়ালে। সিনেমা থেকে বিদায় নিয়ে নিজেকেই নিজে বন্দী করেছিলেন চার দেয়ালের মাঝে। মত্যুর আগ পর্যন্ত সেই রহস্যের বাতাবরণেই রয়ে গেলেন এই অভিনেত্রী। কেনো নিজেকে এভাবে সরিয়ে নিলেন,কেনো আর কখনও কোনো ক্যামেরার ক্লিক তাকে ছুঁতে পারলো না তা আজও তাঁর ভক্তদের কাছে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেলো। সুচিত্রা সেনের নিয়মিত ছবি তুলতেন ধীরেন দেব। একবার সাহস করে সুচিত্রা সেনকে প্রস্তাব দিলেন তিনি সুচিত্রা সেনের এমন ছবি তুলবেন যা দেখে ম্যাগাজিন হটকেক হয়ে যাবে। তখনও সিনেমায় একচ্ছত্র রাজত্ব করছেন তিনি। বেশ নিয়ম ভেঙেই রাজি হয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন।

বাথরুম থেকে শুধু তোয়ালে পরে বের হয়ে এলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। কন্যা মুনমুন মায়ের গালে কাজল পেন্সিল দিয়ে লিখে দিলেন ‘নো কিস’। ধীরেন দেব ক্যামেরায় ধরলেন সেই সাহসী মুহূর্ত। তারপর তো ‘নো কিস’ ছবি ইতিহাস।

রোদচশমা ব্যবহারের পেছনের কারণ হিসেবে মনবিজ্ঞান বলছে, লোকচক্ষুর সামনে নিজেকে আড়াল করাটাই মুখ্য।সুচিত্রা সেনের মুখ ঢেকেছিলো কালো চশমায়।উত্তমকুমারের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে নিয়ে গুজব রটেছিলো। অনেক সাংবাদিক তখনও মিসেস সেনের ব্যক্তিত্বের ভয়ে তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হতেন।একটা সময়ে উত্তমকুমার মহাকালের পথ ধরলেন। আর সুচিত্রা সেনও হঠাৎ করেই নিজেকে ঢেকে ফেললেন আরও বড় এক কালো চশমা দিয়ে। সেই সানগ্লাসের আরেক নাম ছিলো হয়তো নির্বাসন। জানা যায়, সেই দীর্ঘ অন্তরাল তিনি শেষবারের মতো ভেঙে বের হয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে ভোটার কার্ডের ছবি তোলার জন্য।তারপর আবার সেই কালো যবনিকা নেমে এসেছিলো।

নিজের এমশ বুড়িয়ে যাওয়া অবয়ব ভক্তকুলের সামনে প্রকাশ করতে ভয় পেয়েছিলেন তিনি? নিজের অনিচ্ছায় সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছিলেন। স্বামী দিবানাথ সেন-ই তাঁকে বাধ্য করেছিলেন অভিনয়ে আসতে। আপত্তি কম করেননি সুচিত্রা সেন। কিন্তু ততোদিনে তাঁর হয়ে অগ্রিমও নিয়ে নিয়েছিলেন ‘উদ্যোগী’ স্বামী’। অভিনয়ের জীবনটা তাঁর খুব প্রিয় ছিলো না হয়তো। তাই আচমকা নিজেকে ঢেকে ফেলা আড়ালে। এও তো নায়িকাদের কালো চশমার আড়ালের কথাই মনে করিয়ে দেয়।মেরিলিন মনরো নিজের চোখ কালো চশমায় আড়াল করে রাখতেন। আড়াল করতেন ইনগ্রিড বার্গম্যানও।মনরোর একাধিক প্রেমকাহিনী হয়তো ওই কালো চশমায় ঢেকে রাখা চোখেই ডুবসাঁতার দিয়ে হারিয়ে গেছে। কেউ জানতেও পারেনি। তেমনি হয়তো আড়াল হয়েছে কোনো অসহায় মুহূর্তের কান্না, ব্যথা। সুচিত্রা সেন হয়তো লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়ে জীবনের অনভিপ্রেত চিহ্নগুলোকেই নির্বাসন দিতে চেয়েছিলেন।

নায়িকাদের সানগ্লাস আসলে বহু গল্পের সাক্ষী। চোখের জানালা বন্ধ করে আড়াল বেছে নেয়ার সঙ্গী সানগ্লাসকে তো অবশ্যই কালো রঙের হতে হয়। সুচিত্রা সেনের সানগ্লাস ছিলো তার রহস্যে ঘেরা নির্বাসিত জীবন। সেই জীবনের আর কিছুই এখন জানা সম্ভব নয়।


তথ্যসূত্রঃ দ্য ওয়াল, আনন্দবাজার পত্রিকা
ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199