কাফকার আঁকাজোঁকা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 21 Nov 2024

2120 বার পড়া হয়েছে

Shoes

ফ্রাঞ্জ কাফকা ছিলেন পেশাদার নকশাকার। আর সেই আঁকার কৌশলকেই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন নিজের ছবি আঁকার কাজে। চিঠির পাতায়, লেখার মার্জিনের উপরে, কখনও আবার ডায়েরিতে। কাফকার আঁকা ছবিগুলোই পরে বিভিন্ন সময়ে কাফকা-গবেষকদের কাছে মানসিকতার রহস্য ভেদে গবেষকদের উপাত্ত যুগিয়েছে। ১৯১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কাফকা তাঁর প্রেমিকা ফেলিস বাওয়ারের কাছে লেখা এক চিঠিতে ফেলিসকে নিয়ে একটি স্বপ্ন দৃশ্যের বিবরণ দিতে গিয়ে চিঠির মধ্যেই ছবি এঁকে পাঠিয়েছিলেন।কাফকা তাঁর প্রেমিকাকে স্বপ্নে তাদের দু’জনের হাতে হাত রেখে প্রাগ শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যটা ধরতে চেয়েছিলেন।তাঁর মনে হয়েছিলো কখনো কখনো লিখে অনেক অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো যায় না। কাফকার ঘনিষ্ট বন্ধু ফেলিক্স ব্রডও কাফকার ছবি আঁকায় আগ্রহের কথা তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। তখন কাফকা ছাত্র। ক্লাস লেকচার লেখার থাতার মার্জিনে তিনি বিচিত্র সব স্কেচ আঁকতেন।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো কাফকার আঁকা ছবি নিয়ে ‘কাফকার আঁকাজোঁকা।’ 

কাফকা ফেলিস বাওয়ারকে লেখা চিঠিতে নিজের ছবি আঁকায় আগ্রহের কথা জানাতে গিয়ে লিখেছিলেন, তিনি জীবনে একবার এক পেশাদার নারী চিত্রকরের কাছে কিছুদিন আঁকার তালিম নিয়েছিলেন। কিন্তু কাফকার ভাষায়, সেই মহিলা বিশেষ সুবিধার ছিলেন না। তাই শুরুতেই তার অঙ্কন প্রতিভা অপচয়িত হয়। পরে অবশ্য তিনি ফেলিসকে তার প্রথম দিককার আঁকা কিছু স্কেচ পাঠিয়ে লিখেছিলেন, ‘এই ছবিগুলো আশা করি তোমাকে আনন্দ দেবে।’

কাফকা ছবি আঁকা নিয়ে মেতে ছিলেন ১৯০১ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। তখন তিনি ছাত্র। ওই সময়ের মধ্যে কাফকার আঁকা প্রায় ১৫০টি স্কেচের সন্ধান পাওয়া যায়। কাফকার ঘনিষ্টতম বন্ধু ম্যাক্স ব্রডের জবানীতেও ছবি আঁকার বিবরণ পাওয়া যায়। ব্রডের সঙ্গে কাফকার প্রথম সাক্ষাৎ ১৯০২ সালে। ব্রড তাঁর লেখা কাফকার জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন, তাদের প্রথম পরিচয়ের পর বেশ কয়েক বছর ব্রড জানতেনই না যে কাফকা লেখালেখি করেন। কিন্তু তখন ব্রড জানতেন, ছবি আঁকার ব্যাপারে তাঁর এই বন্ধুটির আগ্রহের কথা। কাফকা তখনই ক্লাস লেকচারের খাতায় আঁকা তার বিচিত্র স্কেচগুলো ব্রডকে দেখিয়েছিলেন।গ্রাফ পেপারের মতো একটা খাতায় কাফকার আঁকা স্কেচগুলো সেদিনই সংরক্ষণ করেছিলেন ব্রড। তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে ছবিগুলো আলাদা করে নিজের কাছে রেখেছিলেন। বলা যায়, সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিলো ব্রডের কাফকার খানিক ব্যাঙ্গাত্নক আঁকাঝোকা সংরক্ষণ। ১৯১৩ সালে ফেলিসের কাছে লেখা চিঠিতে যে ছবি পাঠিয়েছিলেন তারও অনেক আগে কাফকার আঁকা ছবির চিহ্ন ধরে রেখেছিলেন প্রিয় বন্ধু ব্রড। কিন্তু সেই সময়ে কাফকার আঁকা সব স্কেচ কি ব্রড জমিয়ে রাখতে পেরেছিলেন? না, তার আগে অনেকগুলো কাফকা নিজেই পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। ব্রড তাঁর বইতে লিখেছেন, কাফকার আঁকা বহু স্কেচ তিনি ময়লা ফেলার বাক্স থেকেও কুড়িয়ে রাখতেন।

কাফকার এইসব চিত্রকর্ম তার অনুরাগী পাঠকরা ইতিমধ্যে বহু বইতেও মুদ্রিত দেখেছেন। কাফকা আঁকতেন মানুষের মুখ। কলম বা পেন্সিলের কয়েকটি দ্রুত টানে আঁকা সেই মানুষের মুখগুলো কিন্তু কখনোই স্থির নয়। সেখানে আছে এক ধরণের গতিবেগ। কখনও দেখলে মনে হবে, একটি চরিত্র ডান থেকে বাম দিকে চলে যাচ্ছে। কখনও কাফকার ইতিহাসবিদ অস্কার বাই মনে করেন, এই স্কেচগুলোতে কাফকার কলমের ছিন্নভিন্ন টানগুলিও অর্থ বহন করে। তার রঙের ব্যবহার তেমন কিছু না হলেও ছবির বক্তব্য দর্শকদের আকর্ষণ করে অবশ্যই।

কাফকার ছবির চরিত্রদের শারীরিক গঠনও সম্পূর্ণ নয়। তাদেরকে কাফকা কয়েকটি টানে অর্ধেক অবয়বেই ছেড়ে দিয়েছেন। চিত্রকর্মবোদ্ধাদের মতে, কাফকার ফিগারগুলো বাস্তবকে অস্বীকার করেই আঁকা হয়েছে। কিন্তু তাদের ভিতর দিয়ে কাফকা অর্থপূর্ণ কিছু বলতে চেয়েছেন যা উপলব্ধি করতে হয়।

কাফকার আঁকা ছবি তাঁর লেখার মতোই লক্ষ্যভেদ করে। কিন্তু যখন তিনি লেখার খাতায় বা ক্লাসনোটের মার্জিনে কলমের টানে ফুটিয়ে তুলছিলেন নানান চরিত্র তখন হয়তো তাঁর মাথার ভিতরে লেখার বিপ্লব সাধিত হয়নি। কিন্তু কাফকা গবেষকদের কাছে এটাই এক বিষ্ময় যে, মানুষ সম্পর্কে জটিল ভাবনগুলো তখনই ছবিতে উঠে এসেছিলো অনায়াসে। তারা কাফকার আঁকা ছবিকে ‘প্রাথমিক দৃশ্যমান নন্দনতত্ত্ব’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ লিটারেরি হাব
ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199