ঝড়ের কেন্দ্র

ইরাজ আহমেদ

সাহিত্য সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 19 Sept 2024

1575 বার পড়া হয়েছে

Shoes

ঝড়ের কেন্দ্র থাকে। আগুনের যেমন থাকে উৎসমুখ। ওই সূচনা বিন্দু থেকেই জেগে ওঠে রুদ্র ঝড়, সর্বগ্রাসী আগুন। জনরোষেরও একটা উৎসমুখ থাকে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পৃথিবীর দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসক আর তাদের ক্ষমতার ড্রাগনকে নিশ্চিহ্ন করতে বিদ্রোহী মানুষ একটা জায়গায় সমবেত হয়। তাদের প্রতিবাদের ভাষা সেই জায়গা থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে সর্বত্র তরল আগুনের মতো। ক্রোধ আর মুক্তির আকাঙ্খা তছনছ করে দেয় ক্ষমতার মসনদ।

বাংলাদেশের ছাত্র জনতার এক প্রচণ্ড অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে ষোল বছর ধরে চেপে বসে থাকা আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের কথা  এ দেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে।

বাংলাদেশের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগ চত্বরের নাম জড়িয়ে আছে গভীর ভাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেকগুলো গণপরিসর বা পাবলিক স্কোয়্যারের সঙ্গে সে দেশের জন অভ্যুত্থানের নাম জড়িয়ে আছে। সেই জায়গাগুলিতে মানুষ জড়ো হয়ে তাদের বিদ্রোহ আর অনাস্থার তীব্র ভাষাকে প্রকাশ করেছিলো। প্রাণের বাংলার এবারের প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো নানান কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠা অভ্যুত্থানের সূচনা বিন্দু ‘ঝড়ের কেন্দ্র’ নিয়ে।

তাহরির স্কোয়্যার
তাহরির স্কোয়্যার

একটা গোটা দেশ, দেশের রাজধানী ঢাকা ছাত্র এবং জনতা প্রতিবাদ আর আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল এই জুলাইতে। যে আন্দোলন পূর্ণতা পায় অগাস্ট মাসের ৫ তারিখ। অনেকে এই অভ্যুত্থানকে ‘মনসুন আপরাইজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ‘আরব স্প্রিং’-এর আদলে। খাতা কলমে বছরের এই সময়ে বর্ষা মৌসুমের সূচনা ঘটে। কিন্তু এবার বৃষ্টির বদলে গোটা দেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠেছিল। পুলিশের ছোঁড়া রাউন্ডের পর রাউন্ড গুলির খোসা আর ছাত্র-জনতার লাশের স্তুপ জমে উঠেছিলো। আন্দোলনকারীদের সেই পিছু হটে না-যাওয়ার তীব্র উপাখ্যান শেষ অবদি পাল্টে দিলো ইতিহাস। এই আন্দোলনের সূচনায় সলতে পাকানোর কাজটা কিন্তু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

চীনের তিয়েনানমেন স্কোয়্যার
চীনের তিয়েনানমেন স্কোয়্যার

লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে তাদের ঐক্য প্রকাশ করেছিল শহীদ মিনারে ছাত্রদের সঙ্গে। তারপর তারা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ঢাকা শহর জুড়ে।

সত্তরের দশকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলন, সংগ্রামের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল পল্টন ময়দান। পল্টন অবশ্য গণপরিসর বা পাবলিক স্কোয়্যার ছিলো না। জনসভার মাঠ হিসেবেই ঢাকা স্টেডিয়ামের সামনের খোলা চত্বর ব্যবহৃত হতো।

চীনের তিয়েনানমেন স্কোয়্যার সুপরিচিত জায়গা। ১৯৮৯ সালে এই বিশাল চত্বরে ধ্বনিত হয়েছিল ছাত্রদের প্রতিবাদ। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার একনায়কতান্ত্রিক বিকাশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ছাত্ররা সেখানে সমবেত হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণের ছবি গোটা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সেংবাদ শিরোনাম হয়েছিলো। ছাত্রদের সেই জাগরণকে নির্মম ভাবে দমন করেছিল তখনকার চীনের সরকার। সেই ঘটনার পর থেকে এই স্কোয়্যারটিতে আর জনসমাবেশের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। তুলে ফেলা হয়েছে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা মানুষের বসার জায়গাও। উপড়ে ফেলা হয়েছে চারপাশে লাগানো বড় বড় গাছ।  ১৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই বিশাল চত্বর এখনও জনমানুষহীন। গণপরিসর  পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে জায়গায়।

মস্কো শহরের রেড স্কোয়্যারে ১৯৬৮ সালে ঘটেছিল প্রতিবাদী মানুষের বিশাল সমাবেশ। তৎকালীর চেকশ্লভাকিয়ায় রুশ সরকারের চালানো আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেছি রুশ জনগণ আর ছাত্ররা।

আরব বিশ্বে মিশরের তাহরির স্কোয়্যার ‘আরব বসন্ত’ বিপ্লবের জন্য এখন বিখ্যাত হয়ে আছে। এই আরব বসন্ত বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল তিউনেশিয়ায় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। মিশরের তাহরির স্কোয়্যারে তৎকালীন হোসনী মোবারকের সরকারকে উৎখাত করতে সমবেত হয়েছিলো লক্ষ মানুষ। সেই আন্দোলনে পতনও ঘটেছিলো সরকারের। তাহরির স্কোয়্যারের ইংরেজি করলে অর্থ দাঁড়ায়, লিবারেশন স্কোয়্যার। ১৮ শতকে রাজধারী কায়রোতে অবস্থিত এই গণপরিসরের নাম ছিলো তখনকার মিশরের শাসক কেদিভে ইসমাইলির নামানুসারে ইসমাইলি স্কোয়্যার। ১৯১৯ সালে মিশরে বিপ্লবের পর নামটা পাল্টে গিয়ে হয়ে যায় তাহরির স্কোয়্যার। ১৯৭৭ সালে এই জায়গাতেই কায়রোর মানুষ ‘ব্রেড রায়ট’ নামে আরেকটি আন্দোলনের সময় জড়ো হয়েছিলো।

তিউনেশিয়ায় ২০১১ সালে ঘটে যায় এক অভ্যুত্থান। দেশটির রাজধানী তিউনিশের বুর্গেভিয়া এভিনিউয়তেইশুরু হয় তাদের জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই। বিশাল এই জায়গাটি বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা। আছে সরকারী অফিস আর বিভিন্ন ক্যাফে। দাঈপের মতো সেই জায়গায় অভ্যুত্থানের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে জড়ো হয়েছিলো তাদের প্রতিবাদ জানাতে। পতন ঘটেছিল ২৩ বছরের স্বৈরশাসনের।

তথ্যসূত্র ও ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199