গোয়েন্দা কাহিনি এখন…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 1 Oct 2024

1600 বার পড়া হয়েছে

Shoes

একদা গোয়েন্দা গল্প মানেই মনে শিহরণ তৈরি করা অনুভূতি। বৃষ্টির রাত, নির্জন পথ অথবা কুয়াশায় মোড়া কোনো নির্জন শহরে কোথায় অজ্ঞাতে ঘুরছে ভয়ংকর খুনী আর তার সন্ধানে পথে নেমেছে দুঃসাহসী গোয়েন্দা। হয়তো তার পরনে কালো ওভারকোট, মাথায় হ্যাট…রহস্যময় আর ভয় জাগানো গল্পের আবহের ভিতরে পাঠকরাও খুঁজে পেতাম অমোঘ এক টান। রহস্য সমাধানের জন্য তাদের মাথায় ধীরে ধীরে মাকড়সার মতো দুর্বোধ্য জাল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করতো। যে অনুভূতির কথা লিখছি তার ওপর কয়েক দশক কিংবা আরও বেশি সময়ের ধূলো জমে গেছে। এখন গল্পের বই থেকে শুরু করে বাস্তব জীবনের গোয়েন্দারা অনেক বেশি ভয়ংকর আর নিরাভরণ। দেশ অথবা দেশের সীমানার বাইরে তাদের কার্ক্রম রাজনৈতিক সরকার কাঠামোকেই অস্থিতিশীল করে দিতে পারে। দেশে দেশে বাঁধিয়ে দিতে পারে যুদ্ধ, স্নাইপার রাইফেলের নিখুঁত নিশানায় খতম হয়ে যেতে পারে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই গোয়েন্দারা প্রায় ছায়া সরকারের মতো আলাদা একটা সরকার পরিচালনা করে। সেখানে কখনো তাদের অঙ্কটাই শেষ কথা।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো গোয়েন্দা কাহিনি এখন।

ফেলিক্স জেরেনস্কি তৎকালীন সোভিয়েট রাশিয়ায় ইতিহাসের পাতায় এক ভয়ংকর নাম হয়েই আছেন আজও। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব দমনের জন্য রাশিয়ায় তৈরি হয় চেকা নামে নিরাপত্তা বাহিনী। অল্প বয়সে সেই বাহিনীর প্রধান হয়ে বসেন ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন জেরেনেস্কি। সমাজতান্ত্রিক রুশ দেশে কোথাও যাতে প্রতিবিপ্লবীরা দানা বাঁধতে না-পারে সেজন্য এই চেকা কমিটির নামে জেরেনেস্কি গড়ে তোলেন গোপন গোয়েন্দা বাহিনী। জনগণকে নজরদারীর পর্দার আওতায় নিয়ে আসাই ছিলো তাদের কাজ। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় জেরেনেস্কির এই বাহিনী সফলতার সঙ্গে প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য কাজ করে। তখন রাশিয়ার বন্দর নগরী ক্রনস্টাডিটে নাবিক এবং জনগণ মিলে এক বিদ্রোহ সংগঠিত করে। সেই বিদ্রোহ দমনে জেরেনেস্কি যে ভয়ংকর পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তার কোনো কিছুই রুশ জনগণ জানতে পারেনি। ১৯৯০ সালে সোভিয়েট রাশিয়ার পতনের পর সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সেই সময়ে প্রায় আড়াই লক্ষ সদস্যের চেকা বাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে ১৪০,০০০ মানুষকে হত্যা করে।

জেরেনেস্কির চেকা বাহিনী নাম পাল্টে  কাউন্সিল অফ দ্য কমিসার হয়ে গেলে তাকেই সেই নতুন বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যময় ভাবে ১৯২৬ সালের ২০ জুলাই বলশেভিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে ট্রটস্কির বিরোধীতা করে বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ থোকে নামার কিছুক্ষণ পরেই ৪৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জেরেনেস্কি। তার সেই মৃত্যু আজও এক রহস্যময় ঘটনা হয়েই রয়ে গেছে।

যোশেফ স্তালিনের শাসনামলে পাভেল সুডোপ্লাতভকে বলা হতো ‘এ জিনিয়াস অফ টেরর’। অর্থাৎ সন্ত্রাসের এক শিল্পী। রুশ গোয়েন্দা সংস্থার বড় কর্তা এবং স্তালিনের অস্থাভাজন সুডোপ্লাতভই সেই ব্যক্তি যার নিখুঁত পরিকল্পনায় মেক্সিকোতে বসে খুন হন সোভিয়েত রাশিয়ার আরেক বিপ্লবী নেতা লিওন ট্রটস্কি। স্তালিন ট্রটস্কির কারণে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা হুমকীর মুখে ছিলেন। তাই তিনি সুডোপ্লাতভকে নির্দেশ দেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেয়ার। সুডোপ্লাতভ ১৯৩৯ সালে চলমান স্পেনের গৃহযুদ্ধ থেকে লেফটেনেন্ট রেমন মারসেডারকে নির্বাচিত করেন ট্রটস্কিকে হত্যা করার জন্য। সুডোপ্লাতভের পরিকল্পনা অনুযায়ী রেমন একজন ট্রটস্কি ভক্ত সেজে মেক্সিকোতে চলে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে ট্রটস্কির নিকটজনে পরিণত হয়। তারপর ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট এক সুযোগে সে হত্যা করে লিওন ট্রটস্কিকে।

আজকের পৃথিবীতে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে। কোনো সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটানো অথবা বাণিজ্যিক ভাবে কোনো দেশের অর্নৈতিক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়ার কাজেও গোয়েন্দারা কাজ করে থাকে। নিজের দেশে জনমতকে কবর দেয়ার কাজটা গোয়েন্দাদের পুরনো পেশা। কথাশিল্পী জর্জ অরওয়েলের ৭৫ বছর বয়সী উপন্যাস ‘১৮৮৪’ সেই ভয়ংকর নিঃশব্দ সন্ত্রাসের কথা আজও ধরে রেখেছে। আজকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বের হয়ে আসছে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের ভয়ানক সব খবর, বিরোধী মতের মানুষদের গুম করে দেয়ার কাহিনি।

গোয়েন্দারা এখন আর বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বের হয়ে আসে না। একদা বইয়ের পাতায় যাদের বলা হতো টিকটিকি তারা এখন ড্রাগন;খেয়ে ফেলতে পারে তার নিজের সরকারকেই। এরাই এখন দেশে দেশে তৈরি করে সরকারের পাশাপাশি ছায়া সরকার। সরকারের অজান্তে নিজেরাই পরিচালনা করে পৃথক আরেকটি সরকার।

তথ্যসূত্রঃ সোভিয়েত রাশিয়া বিয়ন্ড

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199