জীবন যেখানে যেমন...

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 7 Dec 2023

4725 বার পড়া হয়েছে

Shoes

সকাল সাড়ে দশটা। ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি বিরাট লাইন,একেবারে সদর রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে।মাথার উপর রোদের কড়া শাসন।ভাবলাম লাইনটা একটু ছোট হলে দাঁড়াবো।এদিকে ‘যমুনা ফিউচার পার্ক’ মার্কেটও খোলেনি। জানলাম এগারোটায় মার্কেট খুলবে। কিছুক্ষন মার্কেট খোলার অপেক্ষায় সদর দরজায় দাঁড়িয়ে রইলাম।ধীরে ধীরে আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ জড়ো হচ্ছে। বুঝতে পারলাম বিভিন্ন দোকানের সহকারী। মার্কেট খোলার জন্য অপেক্ষায় আছে। শীতের সকালে মিস্টি রোদে ভেজানো চিবুক সবার।

ভিসা অফিসের সামনে ভারত প্রবেশ করার মানুষের ভীড়। প্রতিদিন এতো মানুষ এভাবে কষ্ট করেই পাশের দেশে যায়। কেউ যায় ডাক্তার দেখাতে। কেউ বেড়াতে। কেউ বা শপিং করতে।আমাদের যাওয়াও স্রেফ বেড়াতে আর বই কিনতে।আমরা কলকাতা যাই অথচ শপিং করি না। এ কথা শুনে আমাদের কলকাতার বন্ধুরা বেশ অবাক হয়। বলে, আমাদের বাংলাদেশের বন্ধুরা তো এখানে আসে শপিং করতে।’ আমাদের কথা বাংলাদেশে এখন সবকিছুই পাওয়া যায়। তাই কষ্ট করে আর ব্যাগ বাড়াই না।

মার্কেটের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম গেট খুলে গেছে।এখানেও লাইন দিয়ে মানুষ ঢুকছে। তবে মনে হলো আমরাই একমাত্র ক্রেতা আর সবাই বিভিন্ন দোকানের সহকারী।ঢুকে যে যার মতো করে দোকান খুলছে।আমরা চলে এলাম মার্কেটের ফুডকোর্টে।ভেবেছিলাম TABAQ COFFEE রেস্টুরেন্টে বসে এককাপ কফি খাবো। এখানে এলে আমরা TABAQ এ বসি সব সময়। কিন্তু আজ তা-ও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কফিশপগুলোও তখন ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙছে। আমরা TABAQ এর পাশে চেয়ারগুলোতে আশ্রয় নিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম দোকানের সহকারীদের বড়ো একটা অংশ ফুডকোর্টের পেছন দিকে চলে যাচ্ছে।ভাবছিলাম ওখানে কি কিছু হয়েছে!কিছুক্ষন পর পায়ে পায়ে হেঁটে ওদিকে এগুলাম।এবার যা দেখলাম তাতে অবাক হলাম।এ এক অন্য জগৎ।ফুডকোর্টের আলো ঝলমলে রেস্টুরেন্টগুলোর পাশে এ যেনো স্ট্রিট সাইড ফুডকোর্ট। ছোট্ট একটা রো। তেমন ঝা চকচকে আলো নেই। মৃদু লাইটের আলোতে অনেকটা অসহায়ের মতো কিছু খাবারের দোকান দাঁড়িয়ে আছে। সামনে  লম্বা লম্বা টেবিলের চারপাশে-চেয়ার ছড়ানো-ছিটানো। ওখানে বসে কেউ ভাত খাচ্ছে। কেউ সিঙ্গারা-পুরি খাচ্ছে। কেউ বা খাবার সেরে চা নিয়ে বসেছে। এ যেনো এক অন্য দুনিয়া। খাবার ঘর,ইন্ডিয়ান স্পাইস,বিসমিল্লা ফুড কর্ণার, মেজবান বাড়ি এমনি সব নাম নিয়ে প্রায় ৬/৭ টা দোকান গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে সাজানো সিঙ্গারা,পুরি,ভাত,সব্জী,ডাল,মাছ, মাংসের তরকারী।

আমরাও একটা খালি টেবিল পেয়ে সিঙ্গারা খেতে বসে পড়ি সঙ্গে প্লাস্টিকের ছোট কাপে লাল চা। স্বাদে মনে হচ্ছিলো টিএসসির বাইরের দোকানের চা সিঙ্গারা খাচ্ছি। সব দোকানের সামনে অনেক পানির বোতল সাজানো। পানি নিতে গিয়ে দেখা গেলো সবগুলো বোতলের মুখ খোলা। দোকানি জানালো, পানির বোতলের দাম বেশী তাই এখানে আমরা বোতল জমিয়ে ফিল্টারের পানি ভরে রাখি। এগুলোই এখানে চলে।’ শুধুমাত্র একটা দোকানে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হচ্ছে। আমরা সেখান থেকেই পানি কিনে নিই। আশপাশে সবগুলো চেয়ার দখল করে সকালের নাস্তা খাচ্ছে শপিং মলের বিভিন্ন দোকানের সহকারীরা।মনে মনে ভাবলাম এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ফুডকোর্টের কফিশপ বা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। সারাদিন কত মানুষকে কত রকমারী খাবার সার্ভ করে অথচ কখনও কি ওরা এসব খাবারের স্বাদ নিতে পারে!ঝলমলে আলোর ফোয়ারা মাখা দামি খাবার থেকে তাদের পাকস্থলীর দূরত্ব চিরকালই অনেক বেশি।

ভাবতে ভাবতে উঠে পড়ি। জীবন আসলে যেখানে যেমন সেখানে মানুষ নিজস্ব নিয়মে বেঁচে থাকে।

ছবিঃ প্রাণের বাংলা

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199