সুর করা…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 3 May 2024

4125 বার পড়া হয়েছে

Shoes

 দেশের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান এবং গায়ক আশিকুজ্জামান টুলু। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন কিন্তু গানের পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে তার নিয়মিত যোগাযোগ।  লেখালেখির সঙ্গেও তার নিযমিত বসবাস । এবার প্রাণের বাংলায় গান আর গান বিষয়ক নানান ভাবনা নিয়ে সময় পেলেই লিখবেন তিনি।

আশিকুজ্জামান টুলু

আমার মতে হারমোনিয়াম বাজানোর টিপিক্যাল পদ্ধতিকে অনুসরন করে সুর করলে এক ধরনের সুর। গিটার বাজিয়ে সুর করলে আরেক ধরনের সুর এবং কিবোর্ড বাজিয়ে সুর করলে আরেকটু ভিন্ন ধরনের সুর সাধারণত হয়ে থাকে । তিন যন্ত্র দিয়ে সুর করেই আমার এই উপলব্ধিটা হয়েছে। আবার যন্ত্র ছাড়া সুর করলে স্বাধীনতাটা বেশী উপভোগ করা যায়। কোন যন্ত্রের চলনের ছকে বাঁধা পড়তে হয়না । হারমোনিয়াম বাজিয়ে সুর করলে যে বিষয়টা পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে যেকোন সময় বা তালের যে কোন মাত্রাতে বা যে কোন বারে সুরকে ইচ্ছামতো যে কোন নোটে নিয়ে যাওয়া যায়, ইচ্ছামতো মেজর মাইনরে নেওয়া যায়, কর্ড ফলো করার বাধ্যবাধকতা থাকেনা বিধায় সুরের চলনে এক ধরনের স্বাধীনতা পরিলক্ষিত হয় । সুরকে ইচ্ছামতো প্যাচানো যায়, প্রচুর মিড়ের কাজ করা যায়, যেদিক ইচ্ছা সেদিক যাওয়া যায় (অবশ্যই রাগ বা স্কেল বা মোডকে ফলো করে)। কিন্তু যখনি গিটারে সুর করতে বসি, সুর বাঁধা পড়ে যায় কর্ডের মায়াজালে । যে কর্ড যখন বাজাচ্ছি, সুরগুলি সেই কর্ডের স্কেলে বাঁধা পড়ে যায় পরবর্তী কর্ডে যাওয়ার আগে পর্যন্ত । হ্যাঁ কর্ড চেঞ্জ করলে সুরেরও চেঞ্জ আসে কিন্তু সাধারণত একটা কর্ড বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মিনিমাম ১টা বার পর্যন্ত বাজানো হয় যদি বিফোর দা বিট কোন চেঞ্জ না থাকে (চার বা তিন বা সাত বা দশ মাত্রা, চারটা তালের কথা বলেছি যেগুলি আমাদের বেশীর ভাগ বাংলা গানে ব্যবহৃত হয় । জ্যাজ বা সিম্ফনি বা ব্লুজ বাদ দিয়ে কারন জ্যাজ বা সিম্ফনিতে আবার সেই প্রচুর নোটের খেলা )। এই একটা বারে ঐ কর্ডের বাইরে যাওয়া যায়না বিধায় সুর ওই কর্ডে ওই মুহূর্তে বন্দী থাকে। যখন পরের কর্ডটা বাজানো হয় তখন সুর চলে যায় ঐ কর্ডের নোটগুলিতে অর্থাৎ সুর আবারও বন্দী হয় পরের কর্ডের নোটগুলোতে । একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায় যে সুরকে প্রতিবারই বন্দী করা হচ্ছে কয়েকটা নোটের বেড়াজালে কয়েক মুহূর্তের জন্য অর্থাৎ নির্দিষ্ট বারের মধ্যে থাকাকালীন অবস্থায় । সুর করার ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের পরাধীনতা মনে হয় আমার কাছে । আমাকে কোমলে যেতে হলেই শুদ্ধ থেকে কর্ডকেও কোমলে নিতে হচ্ছে অর্থাৎ মেজর থেকে মাইনরে যেতে হচ্ছে এবং সেই যাওয়াতে একটা সময় বা একটা বার কমপ্লিট করার বিষয়টাকে মাথায় রাখতে হচ্ছে (ইভেন বিফোর দা বিটে গেলেও সেই পর্যন্ত থাকতে হচ্ছে নির্ধারিত কর্ডে)। তবে কিবোর্ড বা পিয়ানোর বিষয়টা একটু আলাদা । হারমোনিয়াম বা কিবোর্ডের নির্মাণশৈলী কিংবা বাজানোর ক্ষেত্রে একটা জায়গায় মিল আছে বিধায় কিবোর্ড বা পিয়ানো দিয়ে সুর করার সময় দুইটা উপায় অনুসরন করা সম্ভব । অর্থাৎ ইচ্ছা করলে হারমনিয়ামের মতো নোট বাজিয়ে সুর করা যায়, আবার গিটারের মতো কর্ড বাজিয়েও সুর করা যায় । সেই কারনে যে কোন ধরনের সুর করতে খুব একটা অসুবিধা হয়না যদি বাদক হারমনিয়াম এবং কিবোর্ড বা পিয়ানো, দুই যন্ত্রেই পারদর্শী থাকে কিংবা প্লেয়াপ বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারে । তবে একাত্তরের মতো স্বাধীনতা খালি গলায় যন্ত্র ছাড়া সুর করার মধ্যে । আমি খালি গলায় সুর করা মাত্র সেটা রেকর্ড প্লেয়ারে রেকর্ড করে ফেলতাম যাতে ভুলে না যাই । গিটার বা কিবোর্ডে করলেও রেকর্ড করতাম । খালি গলায় সুর করতে গেলে ইচ্ছা মতো এদিক সেদিক যাওয়া যায় । তবে আবার সেই একই কথা মাথায় রাখতে হবে সুর কি তার বেসিক চলনের পথে আছে কিনা । এই বিষয়টা একজন প্রফেসনাল বাইডিফল্ট ফলো করে, তার ভুল হয়না কারন সে জানে কি করছে । গরু রচনা করতে গিয়ে গরুকে নদীতে ফেলে দিয়ে নদী রচনা সে কোনদিনও করবেনা এবং সে কারনেই নদী ও গরু সংক্রান্ত ধারনা এবং এদের মধ্যে প্রকার ও আকার ভেদের বিষয়গুলো তাদের জেনে নেওয়া দরকার যারা সুর করতে চায় । মোদ্দা কথা হচ্ছে নদী বা গরু রচনার সঙ্গে সুর করার কোথাও একটা সাদৃশ্য আছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে উল্লেখিত লেখায় ।

ছবি: গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199