দেশের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান এবং গায়ক আশিকুজ্জামান টুলু। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন কিন্তু গানের পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে তার নিয়মিত যোগাযোগ।  লেখালেখির সঙ্গেও তার নিযমিত বসবাস । এবার প্রাণের বাংলায় গান আর গান বিষয়ক নানান ভাবনা নিয়ে সময় পেলেই লিখবেন তিনি।

ব্যান্ড করার সময় কতগুলি ফর্মুলা মিউজিশিয়ানরা ব্যবহার করে থাকে । অন্তত আমাদের ওই সময়টায় তাই হতো । তবে এই অলিখিত ফর্মুলার বিষয়টা মুখে কেউ প্রকাশ করতো না, কিন্তু আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে নিজেই একটা ধারনায় উপনীত হয়েছি ফর্মুলা গুলির ব্যাপারে । যখন নিজেও দুই দুইটা ব্যান্ড ফর্ম করেছি কিংবা লিড দিয়েছি, নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমি কোন ফর্মুলা ফলো করছি কিনা । না বোঝার কারন হচ্ছে তখন আমি ব্যস্ত ব্যান্ডকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে, কিভাবে নিয়ে যাচ্ছি, কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কোনটা ভালো হচ্ছে বা কোনটা খারাপ হচ্ছে, এতকিছু বিশ্লেষণ করার সময় পাইনি বিধায় ঐ মুহূর্তে বুঝতে পারিনি কোন ম্যাকানিজম কাজ করছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে । ঐ সময়ে আমার সমসাময়িক অন্য যারা ব্যান্ড গড়তে ব্যাস্ত, তাদের পদক্ষেপ বোঝা বা দেখারও আমার সময় ছিলোনা । তবে আজ যখন পিছনে ফিরে তাকাই চোখের সামনে পরিস্কার হয়ে ওঠে কোন কোন স্টেপ আমি নিয়েছিলাম কিংবা অন্যরা কি কি স্টেপ নিয়েছিলো ব্যান্ডকে সারটেইন স্ট্রাকচারে নিয়ে যেতে । ব্যাসিক একটা স্ট্রাকচার কিংবা ফরম্যাটের ওপরই ব্যান্ডটা দাঁড়িয়ে থাকে, পরিবর্তিত হয় শুধু সদস্য কিংবা ডিসিশন । আমার মতে ব্যান্ডের সাধারণত কয়েকটা স্ট্রাকচার আছে, স্ট্রাকচার গুলোর নাম আমার দেওয়া তাই এগুলিকে কোথাও খুজলে পাওয়া যাবেনা । জাস্ট বোঝানোর জন্য টার্মগুলো ব্যাবহার করেছি । যেমন, সবাই মিলে ব্যান্ড এই ধরনের ব্যান্ড ফর্ম হয় ব্যান্ড মেম্বারদের যুগ্ম ডিসিশনের ফলশ্রুতিতে, অর্থাৎ সবাই মিলে একটা ব্যান্ড করার সিদ্ধান্তে উপনিত হয় এবং পরবর্তীতে ব্যান্ডের কার্যক্রম শুরু হয় । এই ধরনের ব্যান্ডে সবাই সব ব্যাপারে মতামত দেয় এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে ব্যান্ডের কার্যক্রম চলে । এই ধরনের ব্যান্ডে সব মেম্বারকেই ভাল যন্ত্রী হওয়া প্রয়োজন । সবার সমান না হলেও কাছাকাছি পরিমান ডিসিশন মেকিং কেপাবিলিটি থাকা খুব জরুরী । এই ব্যান্ডগুলিতে কম্পোজিশনের দায়িত্ব সবার বিধায় সবাইকেই কম্পোজার হিসাবে সারটেইন স্ট্যান্ডার্ডে থাকতে হয় । কোন লিডার না থাকায় মাঝে মাঝে কিছু ডিসিশনে সবার মত এক হওয়া খুব কঠিন হয়ে যায় । লিডার ভিত্তিক ব্যান্ড, এই ধরনের ব্যান্ডের সৃষ্টি হয় কোন একজনের ডিসিশনের ফলশ্রুতিতে এবং পরবর্তীতে সে ব্যান্ডের লিডার হিসাবে নির্বাচিত হয় । লিডার মেম্বার সংগ্রহ করে এবং তাদেরকে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করে ব্যান্ডকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে । তবে লিডার হওয়ার প্রিরিকুইজিট হিসাবে অবশ্যই একটা প্রতিষ্ঠানকে চালিয়ে নেওয়ার বেসিক নলেজ থাকা একান্ত প্রয়োজন, সঙ্গে কোন একটা যন্ত্র বাজানোতে পারদর্শী, মিউজিক কম্পোজিশনে স্কিল্ড এবং অর গানাইজেশনাল ডিসিশন নেওয়ার কেপাবিলিটিও থাকতে হয় । এছাড়া ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, প্রফেশনাল বিহেভিওর, এক্সেলেন্ট টিম ওয়ার্ক, সেন্সিবল অ্যাটিচিউড এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং হওয়া অতীব জরুরী । লিডার ভিত্তিক ব্যান্ডে যেকোন ধরনের ডিসিশন সবার মতের ভিত্তিতে নেওয়া হয় এবং সবাই তাদের কনসেপ্ট শেয়ার করতে পারে । সাধারণত লিডাররা সিঙ্গার হয়না । ব্যান্ডের সিঙ্গার বা মেইন লিড ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট সাধারণত অন্যরা হয়ে থাকে । তবে লিডার যদি লিড গিটারিস্ট ও গায়ক হয়, তাহলে ব্যান্ডটা লিড মিউজিসিয়ান ভিত্তিক ব্যান্ড হয়ে যায় । লিড মিউজিসিয়ান ভিত্তিক ব্যান্ডের সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হলো । লিড মিউজিশিয়ান ভিত্তিক ব্যান্ড এই ধরনের ব্যান্ড একজন দক্ষ যন্ত্রবাদকের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে । কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই দক্ষ বাদক ভালো গান গায় এবং ভালো সুরও করে । ভালো বাদক যখন ভালো গায় এবং ভালো সুর করে, তখন ব্যান্ডটার এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ হয়ে যায় । ব্যান্ডের সব ধরনের ডিসিশন নেওয়া সম্পূর্ণভাবে ওই দক্ষ মিউজিশিয়ানের ওপর নির্ভর করে । এই ব্যান্ডে মেম্বার নির্বাচিত হয় ওই দক্ষ বাদকের মনমতো । এই বাদক বা গায়ক সাধারণত এই ধরনের ব্যান্ডের লিডার হয়ে থাকে । এই ব্যান্ডগুলো সাধারণত কোনদিনও ভাঙে না কারন যেখানে একজন মেম্বার একাধারে প্রধান গায়ক, প্রধান যন্ত্র বাদক, প্রধান কম্পোজার এবং দলনেতা সেখানে অন্য মেম্বারদের অংশগ্রহনের বিষয়টা ঠিক অন্য ব্যান্ডের মেম্বারদের মতো হয়না । এসব ব্যান্ডে থেকে অন্য মেম্বাররা চলে গেলেও ব্যান্ডের কোন ক্ষতি হয়না কারন দলনেতা তার পছন্দ মতো আরেকজনকে নিয়ে নিতে পারে । তবে উপরোক্ত প্রধান যন্ত্রবাদক এবং গায়ক যদি কিবোর্ডিস্ট হয়, তাহলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যান্ডের অগ্রগতি সেভাবে হয় না, হলেও খুব কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে হয় । তবে যদি সে ভালো লিড গিটারিস্ট হয়, তাহলে ব্যান্ড লক্ষে পৌঁছানোর বিষয়টা অবধারিত হয়ে যায় । আমার কাছে মনে হয় একটা ব্যান্ডের কিবোর্ডিস্টের চাইতে লিড গিটারিস্টের গ্রহণযোগ্যতা দর্শকদের কাছে বেশী । দর্শক শ্রোতা কিবোর্ডের চাইতে গিটার পছন্দ করে বেশী ।

গায়ক ভিত্তিক ব্যান্ড, এই ধরনের ব্যান্ডে গায়ক ব্যান্ড পরিচালনা করে থাকে । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গায়কটি কোন যন্ত্র বাজাতে পারেনা এবং কম্পোজিশনেও পারদর্শী নয় । এই কারনে এদের অনেক সময় লিড গিটারিস্ট কিংবা কিবোর্ডিস্টের কাছে এক ধরনের জিম্মি হয়ে থাকতে হয় । লিড গিটারিস্ট বা কিবোর্ডিস্ট যদি দক্ষ হয়, ওরা মেম্বারশিপ হারানোর ভয় পায়না কারন এই ব্যান্ড থেকে বের হয়ে গেলেও ওদের দক্ষতার কারনে অন্য যেকোন ব্যান্ড যোগ দিতে পারে । এই ধরনের ব্যান্ডগুলিতে প্রধান সদস্য ছাড়া অন্য মেম্বাররা ব্যান্ডকে ঠিক নিজের মতো করে ভালবাসতে পারেনা বিধায় একধরনের এলিয়েনেশনে ভোগে । উপরের শ্রেণীবিভাগ ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যান্ড থাকতে পারে । আমি জাস্ট বেসিক কয়েকটাকে বিশ্লেষণ করেছি বোঝানোর সুবিধার্থে । ব্যান্ড করতে গিয়ে তুমি কোন ক্যাটাগরি বেছে নেবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ওপর নির্ভর করে । তবে লিড মিউজিশিয়ান ভিত্তিক ব্যান্ড ও গায়ক ভিত্তিক ব্যান্ডের মৃত্যু নাই অর্থাৎ এই দুই ধরনের ব্যান্ডের ভেঙ্গে যাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকেনা বিধায় বহুদিন টিকে থাকে । আমার মতের সঙ্গে অন্যের মত নাও মিলতে পারে বা আমার লব্ধ ধারনাকে সেকেল বলেও মনে হতে পারে । আমি যতটুকু বুঝেছি ওই টুকুই সবার সঙ্গে শেয়ার করেছি । এই শেয়ারের অভাবে অনেক টেকনিকই না বলা থেকে যায় এবং নতুন প্রজন্ম জানতে পারেনা কিছু সহজ পন্থা । ব্যান্ডের স্ট্রাকচারটা আগে বুঝে নিলে অগ্রগতির যাত্রাটা সহজ হয় । আমাদের মতো ঠেকে শেখার বিষয়টা থাকেনা বিধায় জীবনটা সহজ হয়ে যায়, কারন ঠেকে শেখার চাইতে দেখে শেখায় সময় কম লাগে এবং লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সময়টা পাওয়া যায় ।

ছবিঃ গুগল