আহ্ তিতা...

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 24 Sept 2020

2220 বার পড়া হয়েছে

Shoes
শাম্মী মারজিয়

খাবারের শুরুতে পাতে তিতা কোন পদ না পড়লে আমার মুখটাই যেন তেতো হয়ে যায়।

আহা্, তিতা করলা!

লোকে বলে তিতা, আমার মুখে তো সবসময়ই মিঠা লাগে।

না, মিষ্টি স্বাদ পাই না, বলছি এর সুস্বাদের কথা। খেতে এতো যে ভালো লাগে। তিতা করলা বা উচ্ছে ভাজি দিয়েই তো প্লেটের সব ভাত খেয়ে ফেলতে মন চায়।

শুধু তিতা করলাই নয়, ভালো লাগে এধরনের সব খাবারই।

ভালো লাগে মেথির ফোড়নে তরকারী, নিমপাতার সুক্তো, মেথিশাক ভাজা, তিতা পাটশাক, হেলেঞ্চা শাক, নোনা ইলিশ।

মোটকথা, খাবার প্রথম পাতে তিতা কোন পদ দিয়ে দু’লোকমা ভাত না খেলে আমার তৃপ্তিই আসে না।

তিতা সব খাবার ভালোবাসি, তাই রাঁধিও যত্ন করে। অনেক ভাবে। একই জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।

তিতা করলার ঝরঝরে ভাজি। আলু বা কাঁঠালের বিচি সঙ্গে চিংড়ি বা কোন মাছ দিয়ে চচ্চড়ি। ডাল দিয়ে তিতা করলা। তিতা করলায় মাছের ঝোল। কোনদিন শুটকি মাছ দিয়ে চচ্চড়ি। কোনদিন পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষার তেল মেখে জমিয়ে ভর্তা। দুর্দান্ত সবক’টি পদ।

যেদিন উচ্ছে না থাকে ঘরে, তাতে কি! মেথি তো থাকেই বারোমাস। মেথি ধুয়ে বেছে, শুকিয়ে, গুড়ো করে পাঠায় আমার মা। কয়েকপদের সবজি কেটেকুটে, চুলায় কড়াই চাপিয়ে দেই তেল। তাতে দিই গোটা মেথি, শুকনো মরিচ। মধুর সুবাসে রান্নাঘর করে মৌ মৌ। মাংস ভুনার সুবাসও ফেল তার কাছে। মেথির ফোড়নে আরো দিই রসুন কুচি। লালচে হয়ে এলে পেঁয়াজ বাটা, হলুদ, মরিচ, ধনে গুড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেথির গুড়োও দিই। সব মসলা ভালোমতো কষিয়ে উপরে তেল উঠলে দিই কেটে রাখা সবজি। পরিমানমতো লবন। মাখামাখা, ঘন লাবড়া করি। হালকা তিতা, তবে মেথির মিষ্টি সুবাসে ভরা।

মেথির ফোড়নে মাছও রাঁধি। মাংসেও দিই মেথি গুড়া।

আর মেথি শাক! সে এক অপূর্ব খাবার।

আলু কুচিয়ে মেথিশাক ভাজা। টুকরো করে কাটা শিমে মেথি শাক, বেগুন দিয়ে ভাজা।

মাছের ঝোল নামানোর আগে মেথি শাক বিছিয়ে দেওয়া।

সিজনে যতোদিন পাই।

মেথিশাক আমার চাই’ই চাই।

নোনা ইলিশও খুব ভালোবাসি আমি। বর খায় না মোটে। তা বলে কি আর আমি খাবো না!

বাজারে গেলেই খুঁজি শাকওয়ালা। আর লাউ শাক নয়তো মিষ্টি কুমড়ার শাক। সে তো নোনা ইলিশের পাতুরি খাবো বলেই।

খুব ভালো করে নোনা ইলিশ ধুয়ে, তাতে কুচানো পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, হলুদ গুড়ো, ভালো মতো সরিষার তেল দিয়ে মেখে রেখে দিই কিছুসময়।

এরপর শাকের পাতাগুলো ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে তাতে মসলা মাখানো মাছ দিয়ে সুন্দর করে মুড়িয়ে নিই।

এরপর গরম তেলে ভাজি। সঙ্গে দুটো শুকনো মরিচ ভাজি।

গরম ভাতে নোনা ইলিশের পাতুরি সঙ্গে পাতুরি ভাজার তেল। এবার ভাজা মরিচ কচলে, পাতুরির ভাজা পাতা ছিড়ে এক লোকমা খাই। পাতা সরিয়ে মসলা মেখে আরেক লোকমা খাই। এরপর মাছ ভেঙ্গে আরেক লোকমা খাই।

কিসের পোলাও, কিসের বিরিয়ানী, এর সঙ্গে ওসবের তুলনা করতেও আমি রাজি নই।

নিমপাতারও খুব ভক্ত আমি।

কচি নিমপাতা দিয়ে সুক্তো, গরমকালে খুবই তৃপ্তির খাবার। কোন ভাজিভুজিতেও যদি আট, দশটা কচি নিমপাতা দেওয়া হয়, আহা্, সে যে মধুর মতো তিতা।

পাঁচ কি সাত পদের সবজি কেটে ধুয়ে, প্রথমে নিম পাতার ফোড়ন দিই। সঙ্গে গোটা সরিষা, শুকনো মরিচ। লালচে ভেজে সব বাটা মসলা, গুড়ো মসলা কষিয়ে সবজিগুলো দিয়ে আবার ভালোরকম কষাই। এরপর সামান্য পানি ও পরিমানমতো লবন দিয়ে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করি। নামানোর আগে একচামচ ঘি দিই। আমার রান্নাঘরে ভাসে, ঘি এর অমৃত সুবাস, তেতো তেতো মধুর হাওয়া।

কে যেনো বলেছিল, তিক্ত কথা, তিতা জিনিস মানুষের পছন্দ না। এমনকি তিতা জিনিসকে পোকাও পছন্দ করে না।

আমি তো তিতা সব খাবার ভালোবাসি এমনকি পানীয়ও।

চিরতার পানি, প্রিয় বলে মানি।

আর

গরম ভাতে, আমার পাতে

নিমপাতার সুক্তের সাথে

ভালোবাসা মিশে থাকে।

ছবি : লেখক ও গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199