নন্দিনীর সংসার..

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 13 Apr 2023

3355 বার পড়া হয়েছে

Shoes
মৈয়েত্রী মিত্র

এক.

বিয়ের পর নন্দিনী পা রাখলো তাদের নতুন ফ্ল্যাটে। সঙ্গে শুধু বর। পুরো ফ্ল্যাটটা খালি, না আর একজনও মানুষ আছে, না কোনও জিনিস আছে। আসলে বিয়ের দু’দিন আগেই তো রেজিস্ট্রেশন হয়ে ফ্ল্যাটের চাবি পেলো হাতে। আর বাবাকে বলেই রেখেছিলো সে আগে থেকে কিছু কেনাকাটা করো না। অগত্যা ফুলসজ্জার রাতটা একদম অন্যরকম হলো। ফুলদিয়ে সাজান ম্যাট্রেস, এক বোতল খাবার জল, আর সদ্য বিবাহিত দম্পতি।

সকাল বেলা পুবের জানলা দিয়ে রোদটা চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো। হঠাৎ করে ঠাওর করতে পারছিলো না কোথায় আছে। কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র, দিনের আলোর মত ঝকঝক করে করে উঠলো গত তিন চার দিনের কথা। কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কেটেছে তার। হাজারো নিয়ম, ব্যস্ততা, কত আত্মীয় স্বজন, হইচই, জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়টা বোঝার আগেই কেটে গেলো। পাশে তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে সাত্যকি। নিজের মনেই হেসে ফেললো সে, বাসর ঘরে যখন সব ভাই বোনেরা তুমুল হইচই করছিলো, গান গাইছিলো, সাত্যকি তখন তাকিয়াটা মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। না আর বসে থাকলে হবে না। কাকু এসে যাবে তাদের নিয়ে যেতে, আজ ধুলোপা করতে যেতে হবে।

বাপের বাড়ি থেকে আসা তত্ত্বের ট্রেগুলো ভাগ্যিস রাতে এখানেই পৌঁছে দিয়েছিলো সবাই।সেখান থেকেই এক এক করে সব বার করে বাথরুমটা রেডি করলো, ভালো করে স্নান সারলো। এই কদিনের ক্লান্তি যেন জলের সঙ্গে ধুয়ে গেলো।

যৌথ পরিবারের মেয়ে নন্দিনী, কখনও নিজেকে কোন কাজ করতেই হয়নি। মুখ থেকে কথা খসাবার আগেই সেটা হয়ে যেতো। বাবা তো তুলোয় মুড়ে রাখতো মেয়েকে। তবে মা রাগ করতো বাবার ওপর। বলতো শ্বশুর বাড়ি গিয়ে মেয়ে যখন কিচ্ছু করতে পারবে না তখন দেখ তোমার কাছে ফেরত দিয়ে যাবে। বাবার তাতে কোন হেলদোল ছিলো না। আজ এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে বসে নন্দিনীর দু’চোখ জলে ভরে এলো। সকালে বাবা কফির কাপটা নিয়ে এসে ঘুম থেকে তুলতো, সব জামা কাপড় আগে থেকেই ইস্ত্রি করে রেডি থাকতো, ফ্রিজ খুললেই দেখতাম পছন্দের মিষ্টিগুলো সব রাখা আছে, এমনকি মাকে লুকিয়ে কখন যে নন্দিনীর জুতোগুলোও ঝকঝকে করে রাখতো বাবা, টেরটিও পেতো না কেউ। খুব কান্না পাচ্ছে তার, বড্ড মন কেমন করছে যে বাবার জন্য, মায়ের জন্য, বাড়ির সকলের জন্য। কিন্তু পাশের ঘরে সাত্যকি আছে। সে চায় না তার কান্না কেউ শুনুক। তার ওপর সাত্যকিকে তো এখনও তেমন চেনেই না। হ্যাঁ বিয়ের আগে ফোনে কথা হয়েছে অনেকবার, সবাই মিলে বেড়াতে গেছে, জন্মদিনে সে আর সাত্যকি রেস্তোরাঁতে একসঙ্গে খেতেও গেছে। তবুও কেমন যেন অচেনা, অজানা। তার সামনে মনের দুর্বলতা প্রকাশ করতে কখনই পারবে না নন্দিনী।

হাজারো কাজের মধ্যে এখন নন্দিনীর প্রধান কাজ হলো খালি ফ্ল্যাটটাকে সাজিয়ে একটা বাড়ি তৈরী করা।

এর মধ্যে দিন চলে যায়।শ্বশুরবাড়ির অনেকেই এসেছেন, নানারকম পরামর্শ দিয়ে গেছেন কিভাবে সংসার গোছাতে হবে। নন্দিনী শুধু শোনে আর ঘার হেলিয়ে সম্মতি জানায়। সাত্যকি বেশিরভাগ সময়েই থাকে না। কাজের জন্য বাইরে বাইরে থাকতে হয়। নন্দিনী ফ্ল্যাটে একা, গোটা বিল্ডিং এ একা। বাড়িটা তো পুরো তৈরীই হয়নি, তাই অন্য ফ্ল্যাটে আর কেউ আসেনি। একা থাকতে ও ভয় পায় না তবে কষ্ট হয়। কখনও একা থাকেনি তো, বাড়ি ভর্তি সবাইকার মধ্যে বড় হয়েছে যে। বিয়ের আগে দুপুর বেলা মা,জেঠিরা, বাড়ির মেয়েরা সবাই একসঙ্গে খেতে বসতো। সে এক দারুণ ব্যাপার , কত গল্প, কত কথা, খেয়ে উঠতে ঘন্টা পেরিয়ে যেতো। এখানেও নন্দিনী একটা বড় খাবার টেবিল কিনেছে, সবাই মিলে খেতে বসবে বলে, কিন্তু রোজ দুপুরে খেতে বসলে চোখের জল ছাড়া আর কেউ সঙ্গ দেয় না।

সামনের বাড়ির মাসিমা অল্প দিনেই ভালো বেসে ফেলেছেন নন্দিনীকে। বারে বারে জানলা দিয়ে ডাকেন, খোঁজ নেন, রান্না করে পাঠিয়ে দেন । একদিন ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলেই ছেলেকে পাঠিয়ে দেন, যা দেখে আয় আগে মেয়েটা ঠিক আছে কিনা, একা একা থাকে। ছোট্ট বনি এসে কলিং বেল বাজায়, আমার খোঁজ নিয়ে ছুট্টে বাড়ি গিয়ে মাসিমাকে খবর দেয় ,মা দিদি ঘুমোচ্ছিলো তো। নন্দিনী এখন মাসিমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে আর সাত্যকি জামাই।

নন্দিনী একটু একটু করে বাড়িটাকে সাজাতে শুরু করেছে। একাকীত্বকে মানিয়ে নিতে শিখছে। শুধু নিজেকে যেন সামলাতে পারে না বাপের বাড়ি থেকে কেউ এলে, তাকে জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে। অবশ্য যেদিন যেদিন সাত্যকি বাড়িতে থাকে, সেদিন কাঁদে, তবে কম, গলা দিয়ে যেন আওয়াজ না বেরোয়। এতটাই আত্মাভিমান তার, যদিও এতদিনে সাত্যকির সামনে সে একটু একটু সহজ হয়েছে। কিন্তু নিজের দুর্বল মনকে কারোর সামনে প্রকাশ করতে নারাজ।

দ্বীপান্তরে পড়ে থাকার মত একাকীত্বকে জয় করে সংসারকে সাজিয়ে তুলতে কি পারবে নন্দিনী না কি অবসাদ গ্রাস করতে শুরু করবে তাকে ?? (চলবে)

 

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199