ওয়াদুদ রহমানের ৫টি কবিতা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 18 Jan 2018

3525 বার পড়া হয়েছে

Shoes
ওয়াদুদ রহমান

ফেরার পিপাসা

এই সব আলোছায়া, পুরনো দিনের গান,
ক্রমে ক্রমে জমে ওঠা পানাহার-
অনেক দেখেছি, দেখেছি অসাবধানী হাতের আচরণে,
ছলকে ওঠা পানীয়
তোমার নীল আঁচল ভেদ করে সামিয়ানা অবধি;
বৃষ্টির মতো চমকে দেয়।

তুমি মাথা ঝাঁকিয়ে,
চুল ঠিক করার ছলে সামলে ওঠো,
তোমার সচকিত চোখ স্মৃতির আয়নায়
কেবলই ফিরে যায় বার বার-

কারও কারও বাড়ি ফেরা নিয়ে
এখনো উৎকন্ঠিত হই,
ফেরার সময় কেউ আমার হাত চেপে উষ্ণতা দিয়েছিল
ঠিক এই জন্য নয়।

তীব্রতা

যে গ্রহের আলো এখনো স্পর্শ করেনি
পৃথিবীর সবুজ অন্ধকার
কিংবা অতল জল থেকে যারা তুলে আনে
ডাকাতের মতো পাথর
তেঁতুলের চিরলপাতা ঝরে পড়ে পথে
যারা চায়ের কাপে অপেক্ষার প্রহর গুনে
নদীতে ভেসে আসা কাঠ কয়লার
জীবিকায় যারা প্রতিদিন বাঁচে
যারা সুউচ্চ ভবনের লিফটের দরজা খুলে
বেরিয়ে যায় বনের পথে একাকী
যারা স্মৃতির কোডাকে তুলে রাখে
ঝরা পাতার ছায়া, নিঃসঙ্গ চাঁদ
আন্তঃনগর ট্রেন থামে না যেসব লোকাল স্টেশনে
অথচ শীত অন্ধকারে মশালের প্রহরী যারা
তীব্রতা শব্দটি থাকুক তাদেরই অধিকারে।

অপার্থিব

আমি অনেকবার গিয়েছি তোমার সাথে
কালো সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ
দুপাশে বাঁশবন, । উঁচুনিচু পাহাড়, গভীর খাদ
সমতল জনপদ, স্ট্রবেরি ক্ষেত, টানেলের ভেতর
টায়ারের শব্দ, অতিক্রমের আলোক উদ্ভাসিত
করেছে তোমার চশমার কাঁচ।

দুই পাহাড়ের খাঁজ থেকে অজস্র সাদা চুলের মতো
ঝর্ণার দ্যুতি আবার তোমার চশমার কাঁচে,
তুমি আমাকে গাড়ি থামাতে বললে-
বাঁশ কিংবা কাঠের রেলিং কিন্তু শক্ত আর নিরাপদ
তুমি ডান হাত রেলিংয়ে রেখে-

পাহাড়ে জলের উৎস খুঁজতে খুঁজতে
মাথা নিচু করে ব্রিজের অতল জল
দেখতে দেখতে হঠাৎ পরনের টকটকে লাল
টপসে চশমা ঘষতে ঘষতে আমার কাছেই ফিরে
আসছো...

আসলে অপার্থিব এমন দৃশ্য সারাজীবন
আমার স্বপ্নের সমান বয়সী...

নিমগ্নতা

অমলতাসের ছায়া,
বাসস্টপে চা দোকানের কিশোরের হাসি
আর ভোর হবার আগে রাত ফুরিয়ে
যাবার ভয়ে কান্নার আর্তি
যেন সত্যি হয়
যেন সত্যি হয় অপেক্ষা
বাস ছেড়ে দেবার পরের নিমগ্নতা।

অবকাঠামো

পৃথিবী এক বিশাল বাড়ি
বাড়ির ভেতরে ঘাসের মাঠ কাশবন
কৃষ্ণঞচূড়া সুইমিংপুল, মেহগনির দীর্ঘ ডাইনিং টেবিল
মাটির বাসন কোসন স্ফটিকের দাগহীন পানপাত্র
আর খড়ের গাদার মতো নরম শয্যা
অনেক দিন এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছিল আমাদের দিন।

হঠাৎ এক সন্ধ্যায় আমাদের নজরে এলো
সারা বাড়িতে কোথাও কোনো আয়না নেই,
আরো মনে হলো যা কিছুই দেখছি বাড়ির ভেতর
সবই বাহুল্য আর ঐরাবতের সঞ্চয়।

আমরা দুজন মানুষ প্রাণপন চেষ্টায় অ্যাসট্রে
তৈজসপত্র, সাবান, তোয়ালে শয্যা, সুইমিংপুল
কাঠের দরজা, কাঁচের সব জানালা
বাড়ির সমস্ত কিছু বাইরে ছুড়ে ফেললাম।

এমনকি অনেক কষ্টে বাড়ির ছাদ একপাশে কাত করে
রাতের নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে ক্লান্ত আমরা তারা ভরা
মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তারপর পুরো দৃশ্যপট
উদ্যম ক্লান্তির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি
বাজে কাগজের মতো ছুঁড়ে ফেলে
আমরা আয়নাহীন বাড়িতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম;
যেন-এই প্রথম কেউ কাউকে দেখলাম।

অলংকরণ: গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199