পুজোর গন্ধ…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 5 Oct 2023

6370 বার পড়া হয়েছে

Shoes
সৌম্য চট্টোপাধ্যায়

রংচটা যে দূরপাল্লার বাসটা এসে থামলো শহীদ মিনারের সামনে, বাসটার পিছনে লেখা আছে ‘মায়ের আশীর্বাদ’ আর একটা জবাফুল আঁকা। বাসটা থেকে একটা লালচে কাপড়ের ব্যাগ, কয়েকটা প্লাস্টিক, আর কোলে দেড় বছরের বাচ্চা নিয়ে নেমে আসছে দুলাল আর পিউ বাউড়ি।বাচ্চাটা সারা রাস্তা কেঁদে ভোরের দিকে নেতিয়ে গ্যাছে। শাঁখা পলা, একমাথা সিঁদুর নিয়ে পুরুলিয়ার পিউ বাউড়ি প্রথমবার কোলকাতা দেখছে। প্লাস্টিকের প্যাকেটগুলো ভারী বেশ, হাতের চেটো কেটে বসে আছে, মেয়েকে কাঁধে চাপড়ে দিয়ে সে দুলালকে নীচুস্বরে জিজ্ঞাসা করছে, ভিক্টোরিয়ার ঘোড়াগাড়ি কোথায় থাকে গো? দুলাল হাসছে, পিউ লজ্জা পাচ্ছে, কলকাতা সবে ঘুম থেকে উঠছে। ইডেনের দিক থেকে একটা হাওয়া আসছে মাঝেমাঝে, আকাশের কোণে একটা লালচে আলো। পুরুলিয়ার দুলাল আর পিউ একটা কমপ্লেক্সের দুর্গাপুজোতে মুখোশের প্যান্ডেল বানাতে এসেছে।

বাইপাসের ধারে লম্বা লম্বা বাড়ি উঠে গেছে আকাশের দিকে। আর একটু উঠে গেলেই মেঘ ধরে নিতো খপাৎ করে। তার সাউথ-ইস্ট ফেসিং ডুপ্লেক্সের বারান্দা থেকে নীচের কলকাতাকে ঝুলনের মত দেখতে লাগে। ফ্লোর টু সিলিং কাঁচের দেয়ালে আলকাতরার মত রাত আর তাতে ফুটকির মত দূরের স্ট্রীটল্যাম্পের আলো। গেটেড কমিউনিটির মধ্যে চিৎকার নেই, হাট-বাজারের শব্দ নেই, রাতভোর নেড়ি কুত্তার আওয়াজ নেই। বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে আছেন একজন প্রৌঢ়া। ষাট পেরোবার পর থেকে নবনীতার আজকাল রাতে ঘুম আসে কম। কৃশানু ঠিক এই সময়ে চলে গেছিলো বছর দুয়েক আগে।সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। নিঃশব্দে। পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন নবনীতা, টেরও পাননি।শিশিরের ফোঁটার মত ঝরে গেছিলো সারাজীবনের সঙ্গী।

লিফট লবিটার পাশেই কেয়ারটেকারের ঘর, আর তার লাগোয়া একটা স্টোররুম। ঐইটেই দুলালের মাস-খানেকের সংসার।কাজ অনেকটাই এগিয়ে এসেছে, হয়তো মহালয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। পিউএর আর মন টিকছে না এখানে। মেয়েটা এখানে আসার পর হামাগুড়ি থেকে কিছু একটা ধরে ধরে দাঁড়াতে শিখে গেছে। পিউ চোখ মেলে দ্যাখে বিশাল উঁচু বাড়িটার মাথা মেঘ ঢেকে যায় মাঝেমাঝেই, জানলাগুলো ডুবে যায় মেঘে। আর ঐ মেঘের ওপারে সে দেখতে পায় তাদের গ্রামের বাড়ি, ছোট্ট পানাপুকুর, পুকুরের উল্টোদিকে কুলগাছ, আর এই কুল গাছের পাশ দিয়ে তার বাপের বাড়ি যাবার রাস্তা।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকটাতে ভোরের দিকে বৃষ্টি হয়। ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ভোরের আকাশ ঘোলাটে মেঘে সিগারেটের ছাইয়ের মত ঘেঁটে থাকে। রাস্তার পাশে পার্ক-করা গাড়িগুলোর কাঁচ বিন্দু বিন্দু জলে ভরা। পাউরুটির গাড়ি প্যাডেল করতে করতে একটা লোক যাচ্ছে। নবনীতার ভোরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায় রোজ।বারান্দায় বসে রেডিয়োটা চালিয়ে নীচের দিকে তাকাতেই দেখেন ইট-কাঠ-পাথরের কমপ্লেক্সের পোডিয়ামে টলমল করতে করতে হাঁটছে এক শিশু। এক পা, এক পা করে।শুধু সেই জায়গাটুকুর জন্য বৃষ্টি তফাত হয়ে যাচ্ছে, ফুটছে আশ্বিনের রোদ, ঘোলাটে সকাল ভরে যাচ্ছে আলোতে আলোতে।পোডিয়ামের কংক্রিট ভরে উঠছে সবুজ ঘাসে, দুলছে কাশফুল। রেডিয়োতে ভেসে আসছে সুপ্রীতি ঘোষের গলা, ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’।

চাতালে ফুটে উঠছে এক শিশুর ছোট্ট ছোট্ট পায়ের ছাপ।

ঈশ্বরের পদচিহ্ন।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199