পার্সোনাল সার্ভিস পর্ব. ৭

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 11 Jan 2024

3180 বার পড়া হয়েছে

Shoes
দীপারুণ ভট্টাচার্য

সাত.

কাস্টমারের কাছে সুজনের নাম পাকাপাকি বদলে গেছে। এখন সে শঙ্কর সেন। প্রথম দিকে কোলকাতা ও আশেপাশের কাজ তাকে দেওয়া হতো। সরকারি দপ্তরে কর্পোরেটের বিল আটকে রয়েছে, নতুন কাজ পাওয়ার জন্যে এমএলএ কে খুশি করতে হবে, কিংবা মন্ত্রীর পিএ। কাপুর অনেকদিন থেকেই বলছে, “এবার তোমাকে বাইরের কাজ দেখতে হবে”। বাইরে মানে দিল্লি বা মুম্বাই। কিন্তু ঠিকানা বদলে সেখানে যেতে হবে কিনা, কাপুর বলেনি। সুজনের কোন সমস্যা নেই। তার জীবন বড়ই নিস্তরঙ্গ। যেদিন কাজ থাকে সেই দিনটা বেশ কেটে যায়। কাজ না থাকলে একা ঘরে বসে থাকতে হয়। কত আর সিনেমা দেখে বা খবর শুনে সময় কাটানো যায়! অবশ্য একটা ভালো রাস্তা সুজন খুঁজে পেয়েছে। সেটা হল রান্না। এখন সে রোজ রোজ নতুন কিছু রান্না করে। তবে এটাও বেশি দিন চলবে না। নিজেকে নিজে রান্না করে খাওয়ানোর মধ্যে মজা নেই। সে ভাবছে রান্নার একটা ইউটিউব চ্যানেল খুললে কেমন হয়।

রাতে কাপুরের ফোন এলো, “এবার একটা বড় কাজে যেতে হবে। রাজি তো?” না বলার কোন সুযোগ নেই। তবে কাজের ফিরিস্তি শুনে সুজন বুঝল কাজটা সত্যিই বড়। কাল সকালেই তাকে যেতে হবে দিল্লি। উঠতে হবে বঙ্গভবনে। ঘর আগে থেকেই বুক থাকবে। সুজনের নতুন পরিচয় সে, মন্ত্রীর ভাগনা। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে একজন আসবে পঁচাত্তর লক্ষ টাকা নিয়ে। তাকে বসিয়ে রেখেই দেখে নিতে হবে টাকাটা ঠিক আছে কিনা। লোকটা বেরিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই রিসেপ্সনে ফোন করে গাড়ি চাইতে হবে। কোন মতেই ট্যাক্সি নেওয়া চলবে না। এয়ারপোর্ট পৌঁছে পরের যে বিমান মিলবে তাতেই ফিরতে হবে কোলকাতা। বিমানে উঠে রিসেপ্সনে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে কোলকাতা পৌঁছাবার সময়। তাহলেই এয়ারপোর্টে লোক আসবে টাকা রিসিভ করতে। পুরো প্ল্যানটা শুনে একটাই দুঃখ হল সুজনের। দিল্লি যাবে কিন্তু কিছুই ঘুরে দেখতে পারবে না। বসে থাকতে হবে ঘরের ভিতরে। লোকটা কখন আসবে সেটাই অনিশ্চিত।           

দ্বিতীয় দিন সন্ধেবেলা বঙ্গভবনের ক্যান্টিনে বসে ফিস কবিরাজি খাচ্ছিল সুজন। এমন সময় একজন এসে বলল, “একটা ফোন এসেছিল স্যার। আপনার বন্ধু রাত দশটা নাগাদ আসবেন”। সুজন বুঝল তার দিল্লির মেয়াদ ফুরিয়েছে। যে লোকটা তার সঙ্গে দেখা করতে এলো তাকে নেপালিদের মতো দেখতে। ব্যাগ পাঁচশ টাকার বান্ডিলে ভর্তি। সুজন দেখাল দেড়শটা বান্ডিল রয়েছে। তবে প্রতিটা বান্ডিলে নোট ঠিক আছে কি না। অথবা টাকাটা জাল কিনা সেটা তার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। লোকটা চলে যাওয়ার পর পরিকল্পনা মতো সে এয়ারপোর্টে এসে দেখল রাত তিনটের আগে কোলকাতায় ফেরার কোন বিমান নেই। চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসছে অথচ উপায় নেই। সঙ্গে অনেকগুলো টাকা। ভাগ্যিস এক্স-রে’তে টাকা ধরা পড়ে না।

বিমান মোটামুটি খালি। সুজন চোখ বন্ধ করে বসে ছিল আইল সিটে। এমন সময় নারী কণ্ঠে, “সাইড প্লিজ” শুনে সে চোখ খুলল। আর চমকে উঠে বলল, “আপনি, এখানে”। মেয়েটি জানলার দিকে সিট নিতে নিতে বলল, “আপনি আমাকে চেনেন?”

-“আপনিও চিনবেন। মনে নেই, সেই নয়ডাতে যাদু দেখতে গিয়ে…”

-“হ্যাঁ তাই তো! আপনার নাম সুজন না?”

-“আপনার সঙ্গে যে এমন ভাবে কোনদিন দেখা হতে পারে, আমি তো ভাবতেই পারিনি”।

-“সেদিন আপনিও যাদু দেখতে এসেছিলেন?”

-“না না, আমার দাদা যাদু দেখাচ্ছিলেন। আমি দিল্লিতে একটা কাজে এসেছিলাম। এই এখন যেমন!”

-“কি কাজ করেন আপনি?”

সঙ্গে সঙ্গে সুজনের মনে পড়ে গেল কাপুরের কথা। একটু হেসে সে বলল, “ব্যবসা। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট। মাঝে মধ্যে আসতে হয়। আপনিও কি নিয়মিত দিল্লি আসেন?”

-“হ্যাঁ, আমাকেও মাঝে মধ্যে… আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি তারা মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বানায়। তাই মাঝে মাঝে বড় হাসপাতালে আসতে হয়”।

বিমানের প্রায় প্রতিটা মানুষ যখন ঘুমাচ্ছে তখন সুজন আর প্রণতির ঘুম কেটে গেছে। কথায় কথায় প্রণতি বলল, সে বাবার সঙ্গে থাকে, যোধপুর পার্কে। সুজন বলল, “আমি একাই থাকি, নিউটাউনে। একদিন কাকুকে নিয়ে আসুন না”।

প্রণতি একটু হাসল। কিছুই বলল না। সুজন ভাবছিল সে বলবে, আপনি আমাদের বাড়ি আসুন। আর নাচতে নাচতে সে গিয়ে হাজির হবে।

ধীরে ধীরে সকাল হচ্ছে। বিমান প্রায় এসে পড়েছে কোলকাতার কাছাকাছি। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে প্রণতি। সুজন তাকিয়ে আছে প্রণতির দিকে। তার ভেতরে একটা ঢেউ বার বার উঠছে আর নেমে যাচ্ছে। বিমান থেকে নেমে যাওয়ার পর আর কথা হবে না। সুযোগ জীবনে বার বার আসে না। যখন তা আসে তখন তাকে জাপটে ধরতে হয়। অনেক সাহস নিয়ে সুজন বলল, “আপনার ফোন নাম্বারটা যদি…”। প্রণতি একটু হেসে বলল, “লিখে নেবেন? আর আপনারটা?”

বিমান থেকে নেমে মালপত্র নিতে নিতে প্রণতি বলল, “এখন ট্যাক্সি পাবো?”

-“পাওয়া তো উচিৎ!”

-“আপনিও ট্যাক্সি নেবেন তো?”

-“আমি একটা গাড়ি ডেকেছি”।

-“তাহলে, আপনি এগিয়ে যান”।

-“হ্যাঁ” সুজন কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে ফিরে এলো, “আমি কিন্তু ফোন করবো!”

প্রণতি হালকা হেসে বলল, “বেশ, অপেক্ষায় রইলাম”।(চলবে)

ছবি: গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199