ছয়টি কবিতা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 16 Oct 2025

345 বার পড়া হয়েছে

Shoes
লুৎফুল হোসেন

লুৎফুল হোসেনের ৩টি কবিতা

 

বিরহ দীর্ঘজীবী হোক

স্পর্শের গণিতটা শিখিনি বলে

আঙুল আমার এখনো নিরক্ষর,

তোমাকে কোথাও পাইনি খুঁজে

না নদী না বিস্তীর্ণ চরাচর, তবু

সব কিছুতে তোমার ছায়া প্রখর;

বাতাসে মেলেছি দুহাত আমার

করতলে যদি ধরা দেয় ভোর,

আকাশকে ভেবে আপন ঘর, আমি

প্রতিদ্বন্দ্বী চাঁদের পাশেই আজ -

চলিষ্ণু মেঘের অমল ক্যানভাসে

বিছিয়ে নিয়েছি নিজেরই প্রিয়ার মুখ;

সহনীয় না হলে চাঁদ - জোছনায়

এইবেলা খুব জ্বলে পুড়ে খাক হোক,

বিরহ অগম্য অমাবস্যার মতো

ভেবে নিক চুম্বনে মিশে আছে

অচেনা কেউ - অজানা অন্য জন

অনন্তের হংসমিথুন একাকি সন্ধ্যায়

যপ করে যাক শ্লোক - বিরহ দীর্ঘায়ু হোক।

 

২৩ মার্চ ২০১৯

 

জল-জ্যামিতিক

 

জল ছলকে যায়

বেদনার উদর নিঙড়ে

কান্নার দমকের মতো

গুমরে যাওয়া আকাশ চুঁইয়ে

ফোঁটা ফোঁটা নেমে আসছে

এলোমেলো

নিয়ন্ত্রণহীন

ধীর

মিহিদানা

টলকে অকস্মাৎ

তীরের ফলার মতো

তীব্র

শরীর ফুঁড়ে আচম্বিতে

ক্ষিপ্ত মোষের শিঙে

ছুটে

বিশাল ফোঁটায়

যেনো ক্ষ্যাপা মৌমাছি

গুনগুন কোরাসে সুরে ভেজে

বলে যাচ্ছে-

এখনও বলবে 'ভালো আছি' (!)

 

নির্বিকার ভিজে যাচ্ছি

ভেতরে ও বাইরে তখনো আমি

যেমন ভেজা থাকে জলমগ্ন সকল মাছ

পদ্মপাতা কিংবা সাঁতারু হংসীর মতো

জলের জমানায় দিব্যি শুকনো থাকা

ওসব তোমাকেই মানায়

নদী কিংবা আকাশ অথবা মেঘ

সকলি হয়েছো যদিও

অঝোর বর্ষার জল তুমি হওনি কখনো

নাব্যতার অংক কষে ফুল মার্কসে

ভরিয়েছো খাতা

নৌকা ভাসাতে দাওনি

তবু কোনোদিন

বনভূমি থেকে লোকালয়ে আসবার পথ

খোলা রাখোনি

 

২২ আগস্ট ২০২১

 

 

স্পর্শমদিরিজুয়ানা

 

ওই দুই ঠোঁটে তুমি কি মাখো!

কি সেই নেশা ধরানো মদিরা!

কি তার নাম! কোন সে বসরাই গোলাপ!

ইভ্স সেইন্ট লরেন্স

লোরিয়েল ম্যাক বারবুরি

মিছেই রমণীরা মেখে হয় হুলুস্থুল।

 

বুকে কি সুগন্ধি তোমার

প্লাবনের মতো ছড়িয়েছে কটির সীমান্ত অব্দি!

এলিজাভেদ আর্ডেন র‍্যাল্ফ লরেন

কোকো ল্যানকম শ্যানেল!

তুচ্ছ ওইসব মেখে মেখে হয়রান

নারীরা কেউই জানেনি -

কি এক মদির মোম-স্পর্শ সুবাস

নেশাদ্র অনুভূতির অনুপ্রাস

আঙুলে আমার ছড়িয়ে গেছে

কতোখানি আশ্চর্য মখমলি স্বাদ!

 

চাইলে একে তুমি বলতেই পারো

লাগামহীন অক্ষম অন্ধত্ব,

সেই অন্ধত্বের জন্যে আমি

খুলে দিতে রাজি আছি

এক জোড়া চোখ;

তবু বলোনা কখনো

দিতে হবে এই দুই করতল

দু'হাতের নেশাভ্রান্ত দশখানা আঙুল,

 

বুক ভরে টেনে নেয়া চন্দন গন্ধের ফুল

বলোনা ফিরিয়ে দিতে এক বিন্দু

চুম্বন স্মৃতিঘোর, সেইসব হলে হোক

সবই ভুল, নেশাতুর বিভ্রমের শিকড় উন্মুল

 

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 

সা’দ জগলুল আব্বাস

সা’দ জগলুল আব্বাসের ৩টি কবিতা

 

বেঙ্গল বুকস্, ২৭ ধানমণ্ডি

 

টেবিলটা বসে আছে ঠায়।অপেক্ষায়।

চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়ে গেছে চুমুকে ।অপেক্ষার।

ধোঁয়া ওড়া সিগারেট-জ্বলেজ্বলেউড়ে গেছে।

আ্যাসট্রেতে উশখুশ।

ওপাশে তোমার চেয়ার, জেদ করে নির্নিমেষ দেখছে আমাকে।

ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা।

আধ খাওয়া সিঙাড়ার গায়ে মাছি,

এই বসে, উড়ে গিয়ে চক্কর শেষ করে ফের আসে।

রাগী চোখ ভর্ৎসনা।

কাপে পিঁপড়ের সারির মতো এখানে কতো কে যে আসে যায়…

আড়চোখে আমাকে দেখে।

তোমাকে কবিতা শোনাবো বলে বই খুলে বসে আছি,রোদ ছিলো যখন, সেই থেকে—

বাইরে এখন ভীষণ আষাঢ়!

 

ক্রিমশন কাপ

সে ছিলো, তারা ছিলো-

আমের বোলের মতো মুখগুলো;

ছিলোপকেটভর্তি উচ্ছল কিছু গল্প

আধো আলোয় মোড়েরকফিশপে।

 

টেবিলে সবুজ প্লেট

তেকোণা লাল ‘রেড ভেলভেট’-গল্পের শুরু

পাশে ফেনিল কাপুচিনোর সাদা কাপে ধোঁয়া।

চেয়ারে ঝুলে হাত ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক

হাতফোনগুলোহঠাৎ বেজে ওঠে-এক কিম্বা দু’বার-

ওদেরও কি পাশাপাশি কোন গল্প আছে?

 

তাদের জন্য ওখানে ছড়ায়

গল্পের ধোঁয়া মোড়া কফির মৌতাত

গল্পরাএগোয় কবিতার মতো

তাদের জন্য সময় থামে পাতায় পাতায়।

 

একটা সময় গল্প ফুরায়,

তুই তোকারিরকবিতারা হয় চুপ

হাতে হাত নিয়ে যায় তারা ফিরে।

একাকী পড়ে থাকে টেবিল জুড়ে

মলাট মোড়ানো গল্পের শেষটা।

পথ হতে চেয়ে থাকে রোদ

বিশাল জানালার কাঁচ ছুঁয়ে,

দেয়ালে ঝোলানো ছবির ফ্রেম

আর ভাসে শেষ না হওয়া কবিতার রেশটা।

 

ঝিমায় টেবিল দুবাহু বাড়িয়ে চেয়ার

চুপচাপ চেয়ে আছে

না বলা গল্প কবিতার শেষে।

হঠাৎ দরজার কপাটে দোলা

কফি মেকারে ফের ওঠে শোরগোল -

ফের নতুন কিছু গল্পের শুরু।

মেঘ গুড়গুড়, বাইরে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি।

ফিরে এসে

বইয়ের মলাটে তারা অসমাপ্ত গল্প খোঁজে -কবিতার পাশে।

৪/২/২২

 

চলচিত্রের রকমফের

 

শহরগুলো একেকটা আধুনিক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প

পৃথিবীর শরীর পোড়া ধোঁয়া নগরের চিমনীতেওড়ে।

নিষেধের কাঁটাতার ঘেরা জনপদ,

অসহায় রাতের নিরবতা চিরে উড়ে যায় ট্রেসাররাউন্ড

ভয়ার্ত তারারাও চেয়ে দেখে মৃত্যুর আতশবাজী।

সরে বসে জায়গা দিতে তাদের,

অবশ্যম্ভাবী গন্তব্যে ফিরে যায় যারা

—সাদা কালো ছায়াছবি।

 

উড়ালসড়ক দিয়ে রাস্তা গড়ায়

পৃথিবীর শরীর জাপটে ধরে থাকে অক্টোপাসের হাত-

সভ্যতার ঠিকানা খোঁজার ছুঁতোয়লেনগুলো ভরে যায় রোদে

লেন জুড়ে অন্ধ চালকেরা গন্তব্য জানে না তার

—সিনেমাস্কোপ পর্দায় পুরোটা ধরে না সে ছায়াছবি।

 

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199