পার্সোনাল সার্ভিস পর্ব. ৬

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 4 Jan 2024

4890 বার পড়া হয়েছে

Shoes
দীপারুণ ভট্টাচার্য

ছয়.

কয়েকদিন থেকেই সুজনের মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে। কথাটা বলতে কাপুর বললো, “তোমার কোথায় কি সমস্যা আছে সেটা তো জানা দরকার। না হলে নিজেকে পরিবর্তন করবে কি ভাবে! যেমন সকাল বিকাল বাইরে খেতে যাওয়া তোমাকে বন্ধ করতে হবে। নিজে রান্না করতে শুরু করো। এতে শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে। দরকার হলে খাবার আনাবে। বাড়ির বাইরে বেশি যাবে না। কমপক্ষে চারটে মোবাইল কানেকশন সঙ্গে রাখবে”!

সুজন অবাক হয়ে বললো, “চারটে ফোন দিয়ে কি হবে?”

-“একটাতে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো। একটাতে কাস্টমার। তৃতীয়টা থাকবে বাকি কাজের জন্যে”।

-“আর চতুর্থটা?”

-“ওটা এমারজেন্সি। কখন দরকার হবে বলা তো যায় না”। একটু থেমে কাপুর বললো, “আর একটা কথা, এখন যে নাম্বারে কথা হচ্ছে এটাও কাল থেকে বন্ধ। নতুন সিম গুলোও কিছুদিন পরপর বদলে নিতে হবে। আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ চলবে না। ১-২ বছর পর পর বাড়িও বদল করতে হবে”। 

শুনতে শুনতে সুজন থ’ হয়ে যাচ্ছিলো। কাপুর বললো, “তুমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারো? এই কাজে বাংলা না জানলেও চলবে। হিন্দি আর ইংরেজি মাস্ট! প্রয়োজন হয়ে অনলাইন ক্লাস নাও”। একটু থতমত খেয়ে সুজন বললো, “আচ্ছা”।

-“কেউ যদি প্রশ্ন করে তুমি কি কাজ করো, কি বলবে?” সুজন চুপ করেই রইল। কাপুর বললো, “বলবে ব্যবসা। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট। এটা নিয়েও খানিকটা পড়াশুনা করতে হবে। লোকে কথা বলে যেন বুঝতে না পারে তুমি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিষয়ে কিছুই জানো না! নিজের নলেজ লেভেলটা বাড়িয়ে যেতে হবে ক্রমাগত। যখন যেমন দরকার সেই ভাবে নিজেকে ভেঙ্গে গড়ে নেবে, বুঝেছ?”

এক এক সময় কাপুরের কথা গুলো তার ভালোই লাগে। ছোটবেলা থেকে কেউ তাকে নতুন কিছু শিখতে বলেনি। পাশাপাশি সুজন এটাও জানে কাপুর কথা গুলো বলছে একেবারেই তার ব্যবসার জন্যে। তবে তা করতে গিয়েও যদি সে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে, ক্ষতি কি। সুজন জানে এই কাজটাও সে বেশিদিন করবে না। রাতে কাপুরের ফোন এলো, “টেলিফোন ভবনের সামনে একটা বার আছে। পরশু দুপুর একটা নাগাদ সেখানে যাবে। তোমার নাম শঙ্কর আর যে আসবে তার নাম মিস্টার রায়। তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে”।

-“টাকাটা…”

-“কাল সন্ধ্যায় একজন তোমার বাড়িতে টাকাটা দিয়ে আসবে। এই লোকটাকে ঘরের বাইরে থেকেই বিদায় করবে”।

ছোটবেলা থেকে দুর্নীতি সুজন অনেক দেখেছে। পুলিশ টাকা নেয়, সরকারি লোকেরা টাকা নেয়। কিন্তু টাকার লেনদেনে যে এমন গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয় সেটা সুজন আগে বোঝেনি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুজন একটা ট্যাক্সি ধরে এলো পার্কষ্ট্রীটে। একটা অচেনা গলির মোড়ে হঠাৎ নেমে ভাড়া মিটিয়ে ঢুকে গেলো একটা পুরনো বাড়িতে। না এখানে তার কোন কাজ নেই। তবে তার মনে হচ্ছে, কেউ তার পিছু নিয়েছে। ২৩২৪ নাম্বারের একটা সাদা মারুতি এতটা রাস্তা এসেছে তার পিছু পিছু। ২৩২৪ গাড়ির লোকেরা আবার তার পিছু নেওয়ার আগেই সে বাড়িটার অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে সরু গলির মধ্যে দিয়ে হনহন করে হাঁটতে লাগলো। বাড়ির ভিতরে ঢোকা মাত্র সে একটা চাদরে নিজেকে ঢেকে নিয়েছিলো। তাই এখন চটকরে তাকে চেনা সম্ভব নয়। সরু গলি দিয়ে বেরিয়ে অন্য একটা ট্যাক্সি ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় সুজন দেখলো ২৩২৪ কে সার্জেন ধরেছে। মনে হয় নো প্যাকিং কেস।

বারের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে সুজন ওরফে শঙ্কর ভাবলো, কোথায় সে বসবে! বেয়ারা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো, ‘ওয়ান?” শঙ্কর বলল, “টু”। বেয়ারা তাকে একটা জায়গায় বসতে বলতেই শঙ্কর তাকে বুঝিয়ে দিলো, মিস্টার রায় নামের একজন আসবেন। তাকে যেন বলা হয় তার বন্ধু শঙ্কর সেন অপেক্ষা করছেন। তথাকথিত মিস্টার রায় এলেন দুটো বেজে যাওয়ার পরে। ততক্ষণ শঙ্কর কফি আর পুডিং খেয়েছে এবং গভীর মনোযোগে ইংরেজি কাগজ পড়েছে। মিস্টার রায়ের পরনে কালো কোর্ট প্যান্ট। মাথায় টুপি আর চোখে কালো চশমা। এই বর্ষাকালের কোলকাতায় এমন পোশাক নিতান্তই বেমানান। লোকটা এমন ভাবে হাত বাড়িয়ে দিলেন যেন তিনি শঙ্করকে অনেকদিন থেকে চেনেন। তারপর বসতে বসতে বললেন, “আর, বাড়ির খবর কি?” আগে কুরিয়ারের পার্সেল ডেলিভারি ছিলো, ফেল কড়ি মাখ তেল। এই কাজটা তেমন নয়। এ যেন ছিপ ফেলে মাছ ধরা। সুজন বুঝলো। সে বানিয়ে বানিয়ে বলতে লাগলো বাড়ির কথা। কয়েকটা কথা শোনার পর মিস্টার রায় বললেন, “তা, মাসিমা কি মালপোয়া পাঠিয়েছেন?” শঙ্কর সেন বুঝলো, সময় এসেছে। সে ছোট্ট চামড়ার ব্যাগটা টেবিলে রাখলো। মিস্টার রায় সেটা কোর্টের ভিতরের চালান করে দামি সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বাকি প্যাকেটটা টেবিলে রেখে বললেন, “এটা নো স্মোকিং জোন। বাইরে থেকে খেয়ে আসছি”। তারপরেই চলে গেলেন বাইরে। সুজন এখন কি করবে! টেবিলের বাকি সিগারেট প্যাকেটটারই বা কি হবে! টাকা মিটিয়ে বাকি প্যাকেটটা পকেটে পুরে সুজন ট্যাক্সি ধরল। ট্যাক্সিতে উঠে সিগারেট প্যাকেটটা খুলে দেখলো তাকে একটা চিরকুট করেছে, “গুড জব ডান”। রাতে কাপুরের ফোন এলো, “প্যাকটিস ম্যাচটা দারুণ খেলেছ। তোমাকে আজ সামনে থেকে দেখলাম। ভালো লাগলো। তুমি অনেক দূর যাবে”। সুজন বুঝলো, মিস্টার রায় আসলে কাপুর নিজে। যদিও কাপুরও তার নিজের নাম কিনা কে জানে! লোকটার বাংলায় টান নেই এতটুকু। তাই তাকে কাপুর বলে বিশ্বাস করা কঠিন!

ছবি: গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199