পার্সোনাল সার্ভিস পর্ব. ৪

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 21 Dec 2023

4700 বার পড়া হয়েছে

Shoes
দীপারুণ ভট্টাচার্য

চার.

উত্তর প্রদেশে কাঞ্চনের শো চলতে থাকলো একের পর এক। দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেল দারুণ ব্যস্ততায়। সুজন কাঞ্চনের সঙ্গে কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখে ফেললো। পাশাপাশি কানপুর, আলীগড়, নয়ডার মতো নতুন নতুন শহর চেনা। এটাও তার কাছে এক বড় পাওনা। একসময় মনে হতো কৃষ্ণনগরেই তার জীবন শেষ হয়ে যাবে। এখন তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলে গেছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাঞ্চনের থেকে সে হিপনোটিজমও শিখে নিয়েছে। শিখে নিয়েছে বেশ কয়েকটা হাত সাফাইয়ের খেলা। যাদু শেখার পর যাদুর আর কোন মজা থাকে না। সুজন এটা এখন বুঝে গেছে। কাঞ্চন মাঝে মধ্যে কোলকাতায় যায়। বাড়িতে তার অসুস্থ মা’কে নিয়ে নিভা একা থাকে। সুজনের পরিবার নেই। কাজেই তাকেই কাঞ্চনের দল আগলে রাখতে হয়। ফোন বদলে ফেলাতে বীথি আর যোগাযোগ করতে পারেনি। সুজনও দারুণ ব্যস্ত। তাই সেও খবর দিতে পারেনি। কাজেই কৃষ্ণনগরে যে বীথির বিয়ের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে, সেই খবরটা সুজনের কাছে আসেনি।

নয়ডার শো’তে সেদিন একটা ঘটনা ঘটলো। খেলার একে বারে শেষে কাঞ্চন সম্মোহনের খেলা দেখায়। একজন দর্শককে মঞ্চে ডেকে আনা হয়। কাঞ্চন তাকে সম্মোহন করে। এরপর তাকে প্রশ্ন করে অন্য দর্শকরা। যিনি সম্মোহিত হয়েছেন তিনি একে একে প্রশ্নের উত্তর কাগজে লেখেন। খেলাটা এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে লোকেরা এটা দেখতেই বার বার আসেন। সেদিন কাঞ্চন ডেকে নিলো প্রথম সারিতে বসে থাকা একটি মেয়েকে। খেলা কিছুক্ষণ চলার পরে মেয়েটি মাথা ঘুরে পড়ে গেলো মঞ্চের উপর। বিষয়টা সামাল দিতে সুজন তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে গেলো নার্সিং হোমে। মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলে কফি খেতে খেতে তার সঙ্গে আলাপ হলো। নাম প্রণতি। কোলকাতাতেই বাড়ি। এখানে এসেছে অফিসের কাজে।

প্রণতিকে রাতে হোটেলে ছেড়ে সুজন ফিরে আসতেই কাঞ্চন তাকে দুঃসংবাদটা দেয়। চিলেকোঠার ঠিকানায় বীথি নামের কার যেন বিয়ের কার্ড এসেছে। কাঞ্চনের মাথা ঘুরে যায়। সারারাত ঘুমাতে পারে না সে। পরদিন দিল্লি থেকে বিমানে কোলকাতা হয়ে যখন সে কৃষ্ণনগর পৌঁছায় তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বীথিদের বাড়িটা আলো দিয়ে সাজানো। তবে তালা বন্ধ। পাশের বাড়ির মণিলাল কাকু সেজে গুঁজে পরিবার নিয়ে বেরিয়েছেন। সুজনকে দেখে বললেন, “আরে সুজন যে, তুমি এখানে?” তারপর, উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন, “বীথির বিয়েতে এসেছ তাই তো? জামাই শুনলাম বিরাট বড়লোক। দিল্লিতে চাকরি করে”। পাশ থেকে কাকিমা তাড়া দিয়ে বললেন, “দেরি হয়ে যাচ্ছে। এরপর তো বিয়ে দেখতেই পারবো না”। মণি’কাকু একটু এগিয়ে আবার ফিরে এলেন, “তোমার মামার খবর শুনেছ তো? কি আর বয়েস হয়েছিলো বল! সবই নিয়তি”।

সুজন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো। কয়েক বছর আগেও এই রাস্তাঘাট, বাড়ি, আশেপাশের দোকান, ল্যাম্পপোস্ট কত চেনা ছিলো। এখন কিছুই ভালো লাগছে না। খুব কান্না পাচ্ছে তার। একটা রিক্সা ধরে সে মামার দোকানের সামনে এলো। বাজার এখন বন্ধ। দোকানের নামটা বদলে গেছে। বোঝা যাচ্ছে হাতবদল হয়েছে। কৃষ্ণনগরে তার এখন দম বন্ধ হয়ে আসছে। এখুনি তাকে কোলকাতায় ফিরতে হবে। পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেই বিপদ। কি বলবে সে? কোলকাতায় কোকেন ডেলিভারির কাজ করে! নাকি বলবে, কাঞ্চনের ম্যানেজার! কোথায় যাবে সুজন! বীথির সঙ্গে তার যৌথ মুহূর্ত গুলো মনে পড়ছে এখন। তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে কোলকাতায় বাসে উঠে বসলো সে। এই কোলকাতাতেও তার কেউ নেই। কাঞ্চনের ম্যানেজার হয়ে উত্তর প্রদেশে যেতে এখন আর ইচ্ছা করছে না। অথচ এখন তার চাকরিও নেই। ভীষণ ফাঁকা লাগছে। কথা বলার একটা মানুষ পর্যন্ত নেই কোথাও। ভিতরটা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে এই কৃষ্ণনগর থেকে চোরের মতো পালিয়ে গিয়েছিলো সে। আজ দ্বিতীয়বার পালাচ্ছে বীথির থেকে, তার ভালবাসার থেকে, পরিচিত মানুষের থেকে। কেঁদে ফেললো সুজন। বাসের শব্দে তার কান্না চাপা পড়ে গেলো। (চলবে)

ছবি: গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199