গাজা থেকে লেখা কবিতা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 7 Dec 2023

4610 বার পড়া হয়েছে

Shoes
মোসাব আবু তোহা

ফিলিস্তিনি কবি মোসাব আবু তোহা ইজরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হন ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ। তখন তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইজরাইলী বাহিনীর আগ্রাসনে ক্ষতবিক্ষত উত্তর গাজার রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করছিলেন। উদ্দেশ্য মৃত্যুপুরী থেকে পালিয়ে যাওয়া। কিন্তু আটক হবার পর সেনা সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। কয়েকদিন গোয়েন্দাদের টানা জ্ঞিাসাবাদের পর তিনি ছাড়া পেয়ে এখন মিশরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মারাত্নক ভাবে আহত হয়েছেন এই ফিলিস্তিনি কবি।  

আটক হবার আগে ২৯ অক্টোবর তোহা তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ইজরাইলের বিমান বাহিনীর নির্মম বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে বারবার তিনি নিজের ভেঙে পড়া বাড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘এখানেই আমি বাস করতাম। এখানেই আমার ঘর ছিলো। এখন কিছুই নেই। আমার ঘর, আমার বইপত্র সব শেষ হয়ে গেছে।’

গত বছর তোহার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘থিংস ইউ মে ফাইন্ড হিডেন ইন টু মাই ইয়ার’ প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করে সিটি লাইটস নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা। এই বইয়ের একটি কবিতা ‘হোয়াট ইজ হোম’। তোহা তার ভিডিওতে কবিতাটি পাঠ করেন দর্শকদের জন্য। সেখানে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর গৃহহীন মানুষের জন্য আমার এই কবিতা। আমার এই কবিতা মৃত্যু আর ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলবে।’

প্রাণের বাংলার পাঠকদের জন্য কবিতাটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হলো। অনুবাদ করেছে ইরাজ আহমেদ ।

ঘর কাকে বলে   

এখানে পড়েছিলো বৃক্ষের ছায়া

যারা উপড়ে ফেলার আগে ছায়া দিতো আমার ঘরে ফেরার পথে।

এখানেই ছিলো ঘরের দেয়াল

কেঁপে উঠে গুড়িয়ে যাবার আগে

সেখানে ঝুলতো সাদা কালো কিছু ছবি মানুষের।

এখানেই পাতা ছিলো আমার পিতৃব্যর জায়নামাজ

যেখানে কোনো কোনো শীত রাতে ভিড় করতো

অসংখ্য কালো পিঁপড়া।  

এখানেই ছাই হওয়ার আগে

ছিল মায়ের ভালোবাসা মাখা উনুন

যেখানে সেঁকা হতো রুটি আর মুরগি।

এখানেই ছিলো এক পুরনো রেস্তোঁরা

বহুদিন যেখানে উত্তেজিত ফুটবল ম্যাচ

দেখেছি আমিও।

আজ কিছু নেই,

কিচ্ছু নেই।

আমার সন্তান প্রশ্ন করে,

চার অক্ষরের শব্দ

এতসব ধারণে সক্ষম?

এক নক্ষত্রহীন রাতে

কোথাও নক্ষত্র নেই একটিও

আমি কেঁপে উঠে টের পাই

দু‘পায়ের নিচে কাঁপছে জমিন।

তন্দ্রা ছেড়ে উঠে

জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি,

পাশের বাড়িটা নেই;

পৃথিবীর মেঝেতে পুরনো কার্পেটের মতো

পড়ে আছে তার ছায়া।

আমি দেখি, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কারো পায়ে

স্যান্ডেলটা তখনও আছে।

সেই শূন্যতায় আমি দেখি,

প্রতিবেশী বাড়ির পুরনো টেলিভিশন,

দেখি তাদের দেয়ালে ঝোলানো সেই পুরনো ছবিটা

এখন বাতাসে উড়ে যাচ্ছে

যার নিচে গত শীতে একটা বিড়াল মা হয়েছিলো।

আমি সব দেখি এক নক্ষত্রহীন এক রাতে।  

তথ্যসূত্র ও ছবিঃ লিটারেরি হাব

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199