খুন জখমের গল্পে নারীরা...

ইরাজ আহমেদ

সাহিত্য সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 9 May 2024

2235 বার পড়া হয়েছে

Shoes

পৃথিবী জুড়ে নারী লেখকরাই এখন লিখছেন বাজার মাৎ করা সব ক্রাইম থ্রিলার। পিস্তল হাতে অথবা মগজাস্ত্র ব্যবহার করে এ ধরণের কাহিনির একজন সাধারণ নারী চরিত্রই মুখোমুখি হচ্ছেন ভয়ংকর সব ঘটনার। কাহিনির প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের একান্ত গৃহকোণও।সাহিত্যের বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংতা বাড়ছে। বাড়ছে তাদের অনিশ্চয়তা। আর এ ধরণের ঘটনারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে নারী ক্রাইম থ্রিলার লেখকদের প্লটে।

বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা গল্পের লেখক আগাথা ক্রিস্টির প্রথম উপন্যাস ১দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাক্রয়েড প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে।তখনকার সমাজ বাস্তবতায় ক্রিস্টি গোয়েন্দা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পুরুষ চরিত্র এরকুল পয়রোকে। আজকের সমাজে নারীর প্রতি যে গার্হস্থ্য সহিংসতা ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, বাড়ছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক অস্থিরতা।এই পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ রোগের দুনিয়া জোড়া আগ্রাসন লেখকদের মনের জগতে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।    এ ধরণের পরিস্থিতির চাপ ক্রিস্টির সময়কার সমাজে ছিলো না। বাংলাদেশে বহু বছর ধরে ‘দস্যু বনহুর’ নামে ধারাবাহিক ফ্যান্টাসী থ্রিলার কাহিনি লিখেছেন রোমেনা আফাজ।ব্যবসা সফল হয়েছিলো তার এই ধারাবাহিকটি। কিন্তু সে সব কাহিনিতে সমাজের উৎক্ষিপ্ত, অস্থির অবয়ব ছায়া ফেলেনি। তবে তার কাহিনিতে প্রধান দুই নারী চরিত্র যেমন ছিলো প্রেমময়,সাত চড়ে রা করে না টাইপ আবার শক্তিশালীও। কিন্তু পাল্টেছে সমাজের অবয়ব। আর সেই পাল্টে যাওয়া প্রেক্ষাপটই হয়তো নারী লেখকদের কলমে ধরা দিচ্ছে ভিন্ন ধরণের ক্রাইম থ্রিলার হয়ে।যদিও বাংলাদেশে এখনও নারী থ্রিলার লেখকদের সংখ্যা হাতে গোনা।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো নারী থ্রিলার লেখকদের ভিন্ন ধরণের প্লট নিয়ে ‘খুন জখমের গল্পে নারীরা’।

একদা খুনোখুনীর কাহিনি আর অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন পুরুষ গোয়েন্দা অথবা গুপ্তচরের কোনো চরিত্র। ইংরেজি ভাষায় শার্লক হোমস বা এরকুল পয়রোর পাশাপাশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে আরও কিছু চরিত্র। আয়ান ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ড চরিত্রের হাত ধরে বাংলা ভাষায় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে কাজী আনোয়ার হোসেন নির্মিত মাসুদ রানা চরিত্রটিও।কিন্তু পুরুষ গোয়েন্দা বা তলোয়ারের মতো ঝকঝকে স্পাইদের ভিড়ে নারী চরিত্রের জায়গা কোথায়! রোমেনা আফাজের চরিত্র ‘দস্যু বনহুরের ছিলো দুই স্ত্রী। এই দুই নারী চরিত্র একে অপরের উপস্থিতির কথাও জানতো দস্যু চরিত্রটির জীবনে। কিন্তু তারা মেনে নিয়েছিলো শান্তিপূর্ণ সহবস্থান। বাংলা ভাষায় শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী গোয়েন্দা চরিত্রের স্ত্রী হিসেবে সত্যবতীর কার্যক্রম ছিলো ঘরের চার দেয়ালের ভিতরে সংসারধর্ম পালন আর বাচ্চা সামলানোর মধ্যেই সীমিত। সত্যজিৎ রায়ের তুখোড় গোয়েন্দা চরিত্রের আশপাশে দেখা যায় না কোনো নারী চরিত্র। আর জেমস বন্ড তো নারীদের প্রণয়ের জালে জড়িয়ে নিজের মিশন সফল করতেই ছিলো বেশি ব্যস্ত। তাই হয়তো একবিংশ শতাব্দীতে খুনোখুনীর গল্পে নারী লেখকরাই হাতে তুলে নিয়েছেন কাহিনির নিয়ন্ত্রণ।সেখানে নিজের অস্বিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে, রহস্যের জট খুলতে বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারী চরিত্ররাই হয়ে উঠছে ভয়ংকর।

এরিন কেলী এখন পশ্চিমা বিশ্বে ক্রাইম থ্রিলার লেখক হিসেবে সুপরিচিত। তার লেখা ‘পয়জন ট্রি’ যথেষ্ট হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে পাঠক মহলে। কেলী মনে করছেন, একটি নারী চরিত্র থ্রিলার কাহিনিতে কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছে তার বড় একটি কারণ কাহিনির বৈচিত্র। এতদিন এ ধরণের পুরুষ চরিত্র একটি পরিচিত অবয়ব ধারণ করে এবং একই কায়দায় রহস্যের সমাধান করে একঘেয়েমী তৈরি করছিলো। নারী চরিত্র সেই পুনরাবৃত্তির বৃত্ত ভেঙে গল্পকে অন্য আঁচ দিতে সক্ষম হয়েছে। আর এটা ধরে ফেলেছেন প্রকাশকরাও। মোট কথা, বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে নারী লেখকদের লেখা ক্রাইম থ্রিলার। পশ্চিমা প্রকাশনা সংস্থা ওরিয়ন ইমপ্রিন্টের সম্পাদক স্যাম এডসের ভাবনাটা এখানে ভিন্ন। তার ভাষ্য হচ্ছে, ক্রাইম থ্রিলারের পাঠকের লিঙ্গ পরিবর্তিত হয়েছে। নারীরাই এখন এ ধরণের কাহিনি বেশি পাঠ করছেন। আর সহজ নিয়মে নারী লেখকদের প্রধান্য বাড়ছে। স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারী লেখকের পক্ষে নারী পাঠকদের চাহিদাটা ধরা সহজ। তাই তাদের প্রতি প্রকাশকদের পক্ষপাতও বাড়ছে।

তবে পাশাপাশি নারী লেখকদের পক্ষে সংসারের ভেতরকার রাজনীতিটা ধরতে পারা, বৈষম্যের জায়গাটাকে উন্মোচিত করার কৌশলের দিকটা অনেক সহজ। ফলে তাদের প্লটগুলো প্রাণবান হয়ে উঠছে দ্রুত। কারো কারো মতে নারী লেখকরা তাদের খুন জখমের কাহিনিতে পুরুষদের দৃষ্টিতে অপরাধ বা অপরাধীকে দেখেন না। তারা অপরাধের শিকার যে চরিত্রটি তাকেও ভিন্ন দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করছেন। কারণ নারী তো পৃথিবীর সমাজে নিজেই শিকার।

তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
ছবিঃ গুগল, সিএনএন  

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199