ইতিহাস লেখকের দায়

প্রাণের বাংলা

,

প্রকাশ: 20 Nov 2025

545 বার পড়া হয়েছে

Shoes
কাজী জাওয়াদ
লেখক, সাংবাদিক

“সংঘটিত কোনো ঘটনায় আসলে কী ঘটেছিল সেটা বের করাই ইতিহাসবিদের সম্পাদ্য। এবং ‘ঘটনাটা ছিল এই রকম’ ধরণের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি তা নিষ্পন্ন করেন।”১ টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক উইলিয়াম ড্রে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি কথাটি লিখেছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে খুব কম বইই ড্রে-র সংজ্ঞা অনুসারে ‘ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছিল’ তার ব্যাখ্যা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বিশদ গবেষণা করে লেখা হয়েছে। যে শত শত বই প্রকাশিত হয়েছে তার অধিকাংশই স্মৃতিকথা এবং সাক্ষাৎকার, যা কিনা এক অর্থে স্মৃতিকথাই, ভিত্তি করে লেখা। তবে বেশ কয়েকটি ব্যতিক্রমের মধ্যে একটি চন্দ্রশেখর দাসগুপ্তের ‘ইন্ডিয়া এন্ড দা বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ (India and the Bangladesh Liberation War)।

বইটির মলাটের ভাঁজে তাই বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পরেও কতগুলো প্রশ্ন রয়ে গেছে। যেমন, ভারতের কি পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলার কোন পরিকল্পনা ছিলো? কখন এবং কেন ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো? ভারত কখন সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো? অন্য কোনো দেশ কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করতে চায়নি? নির্লিপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভারত কেমন করে স্বাধীনতার যুদ্ধকে সমর্থন করাতে রাজী হলো? সিমলা চুক্তিতে কি ভারতের হার হয়েছিলো, ইত্যাদি?

প্রথম প্রশ্নটিই বাংলাদেশী পাঠকদের টানে, টানবে। দাবী করা হয়েছে, এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য শ্রী দাসগুপ্ত সূদীর্ঘ ১৮ বছর ধরে গবেষণা করেছেন। অনেক কাল্পনিক কাহিনী অপ্রমান করেছেন।

উপসংহারে শ্রী দাসগুপ্ত লিখেছেন, মিসেস গান্ধী এবং তাঁর প্রধান সহকারী হাকসারের ভূরাজনীতিতে নিক্সন ও কিসিঞ্জারের মত তাত্ত্বিক যোগ্যতা ছিলো না। কিন্তু তাঁরা দূরদৃষ্টির বলে সাফল্য পেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের ফলাফলে ভারতের নীতি নির্ধারকরা যুগপৎ আশাবাদী ও শংকিত হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী গণতন্ত্রে উত্তরণকে নস্যাৎ করতে চাইলে দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধ চীন বা ভারতের নকশালপন্থীদের নিয়ন্ত্রনে চলে যেতে পারে।

ইয়াহিয়া বাঙ্গালীদের আকাঙ্ক্ষা ত্রাসের মাধ্যমে দমন করতে চেয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গনের শেষ আঘাতটি করেন। এর ফলে বিপূল সংখ্যক শরনার্থী ভারতে চলে যায় এবং ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি করে। তাই ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঠিক তখনই তারা ঢাকা দখলের চিন্তা বাদ দেয়। কারণ সেনাবাহিনীর তেমন কোনো আপদকালীন পরিকল্পনা ছিলো না। ভারত বছর ঘোরার আগেই স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা করে যাতে চীন বা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি হয়ে না যায়। আটঘাঁট বেঁধে যুদ্ধ করার কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনা ভারতের আগে থেকে ছিলো না। কিন্তু সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তেমন একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।

যুদ্ধ-কৌশলের মূল পরিকল্পনায়ও ঢাকা দখলের সিদ্ধান্ত ছিলো না। লে. জেনারেল জ্যাকবের পরিকল্পনায় যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকা দখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইগুলোয় ১৬ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পনের দিন পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। শ্রী দাসগুপ্ত যুদ্ধের সমাপ্তিকে সিমলা চুক্তি পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন। বিশ্লেষণ করেছেন, চতুর ভুট্টোর ফাঁদে পড়ে মিসেস গান্ধী যুদ্ধে বিজয়ী হলেও কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন কি না?

পাঠ প্রতিক্রিয়া

বইটি পড়তে গিয়ে ২৬ নম্বর পৃষ্ঠাতেই হোচট খেতে হয় যা ১৮ বছর ধরে গবেষণার দাবীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আইন কাঠামো আদেশ সম্পর্কে শ্রী দাসগুপ্ত লিখেছেন, “এভাবে নির্বাচিত পরিষদ ষাট দিনের মধ্যে একটি নতুন সংবিধান রচনা করবে- . . .” (“The assembly thus elected was to draw up a new constitution within sixty Days- . . .”। অথচ লেখক ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত দুই খণ্ডের ‘বাংলাদেশ ডকুমেন্টস’ (Bangladesh Documents)নামের যে আকরগ্রন্থটি ব্যবহার করেছেন তার প্রথম খণ্ডে আইন কাঠামো আদেশ (LFO)-এর পূর্ণ বিবরণ দেওয়া আছে। সেটার ৫৬ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত ২৪ নম্বর ধারাটা দেখা দরকার ছিলো।

মলাটের ভাঁজের লেখা অনুযায়ী (অনুমান করি) ভারতের পাকিস্তান ভাঙার পরিকল্পনা ছিলো কিনা এই প্রসঙ্গ লেখকের গবেষণার প্রধান বিষয়। বাংলাদেশী পাঠকও বিষয়টা জানতে আগ্রহী। অথচ ৫৩ পৃষ্ঠায় মাত্র দু’টি বাক্যেই এমন কোনো পরিকল্পনা থাকার কথা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের শুরুতে শ্রী দাসগুপ্ত লিখেছেন, “কোনো কোনো বইয়ে ভারতকে তার পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত করার ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে পাওয়া সূবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর কথা বলা হয়। দালিলিকভাবে এই ধারনা অসত্য প্রমানিত হয়েছে।” তার পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, “ভারতের নীতিনির্ধারকরা পাকিস্তানের ভাঙনের পরিণতি সম্মন্ধে সন্দিহান ছিলেন।” কিন্তু কোন কোন বইয়ে অমন দাবী করা হয় এবং কেন সেগুলো ভুল তার পক্ষে কোন দলিলের বরাত দেওয়া হয়নি। ৩২ পৃষ্ঠায় তিনি নিজেই যে লিখেছেন, “( ১৯৬৫-৬৬ সাল থেকেই [অশোক] রায়ের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিলো।)”। কেন এই যোগাযোগ? তার ব্যাখ্যা দেওয়ারও প্রয়োজন ছিলো।

নেহরু যে ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন বেতার ভাষনে ‘অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঐক্যবদ্ধ ভারত’ পাওয়ার ইচ্ছার কথা, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির প্রস্তাবে ‘কাঙ্ক্ষিত ভারতের ছবি হৃদয়ে ধরে রাখার’ কথা, আচার্য কৃপালনির ‘ঐক্যবদ্ধ ভারতের দাবী’র কথা, সর্দার প্যাটেলের ভাষায় ‘আমরা আবার এক হবো’, ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে গান্ধীর ঘোষণা যে ‘ . . . ভারত সরকারকে এর [পাকিস্তানের] বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ করার কথা বলেছিলেন সেগুলোর কোনো রেশ ভারতের সরকারী কার্যক্রমে রয়ে যায়নি এটাও প্রমান করা দরকার ছিলো। অধুনা যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর উল্লেখ নাই বা করলাম।

আবার, শ্রী দাসগুপ্ত যে সভায় নীতিনির্ধারকদের সন্দেহের কথা লিখেছেন, ২৮-৩২ পৃষ্ঠায় ‘ভারতের প্রতিক্রিয়া –জানুয়ারি ১৯৭১’ অধ্যায়ে তার বিবরণ রয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ সুস্পষ্ট ছিলো। তিনি লিখেছেন “কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পাকিস্তান বিভাগের প্রধান অশোক রায় (‘র’ প্রধান) কাওয়ের সঙ্গে একমত ছিলেন।” ৬ জানুয়ারি ১৯৭১ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দুই বিভাগের মধ্যে ভিন্নমতই প্রমান করে ঐ সভার আলোচনা কোনো ‘দালিলিক’ প্রমাণ নয়। আসলে একটি গবেষণা ভিত্তিক ইতিহাসে কোনো ধারণা বা প্রস্তাবনার পক্ষে যতটুকু যুক্তি আশা করা যায় শ্রী দাসগুপ্ত তার কিছুই দেননি।

বইটিতে দেওয়া সব তথ্য নির্ভুল নয় বলেই মনে হয়। অন্তত লেখক অন্য কোনো বইয়ের প্রতিষ্ঠিত তথ্যকে খণ্ডন করার দায়িত্ব পালন করেননি। যেমন, এপ্রিল মাসে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের আহমদের বেতার বক্তৃতা প্রসঙ্গ। শ্রী দাসগুপ্ত লিখেছেন, “. . . ১১ই এপ্রিল তাজউদ্দিন বিএসএফের দেওয়া একটি ছোট বেতার সম্প্রচার যন্ত্র দিয়ে আগরতলা থেকে এক উদ্দীপক বক্তৃতা দেন।” (. . . Tajuddin made a rousing broadcast from Agartala on 11 April on a small radio transmitter supplied by the BSF.) মূলধারা ৭১ বইয়ে মঈদুল হাসান প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের প্রবাসকালীন প্রয়োজনের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত বি.এস.এফ. কর্মকর্তা শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সূত্র উল্লেখ করে লিখেছেন, “১১ই এপ্রিল বাংলাদেশের নিজস্ব বেতার কেন্দ্রের অভাবে শিলিগুড়ির এক অনিয়মিত বেতার কেন্দ্র থেকে তা প্রচার করা হয়। পরে তা আকাশবাণীর নিয়মিত কেন্দ্রসমূহ থেকে পূনঃপ্রচারিত হয়।” জানা যায় শিলিগুড়ি ও আগরতলার আকাশপথে দূরত্ব ৪৩৪ কিলোমিটার। এখানে গবেষক শ্রী দাসগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত তথ্যের পাল্টা একটি নতুন তথ্য উত্থাপন করেছেন। আগের তথ্যটি ভুল প্রমান করার দায়িত্বও তাঁর। তা করেননি।

বইয়ের ২০৪/৫ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, “হাকসার সংকটের শুরুর সময়ে আগে থেকেই সঠিক জানতেন, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভূখণ্ডের অখণ্ডতা এবং হস্তক্ষেপ না করার নীতি গভীরভাবে প্রোথিত।” অংশটুকু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। কারণ এই যুক্তিতেই প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করা হয়েছিল। কিন্তু হাকসার যা জানতেন বা যা বলতেন তা কি ঠিক?

মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রথম প্রকাশিত বই ‘বাংলাদেশ এ স্ট্রাগল ফর নেশনহুড’। বাংলাদেশের সংগ্রামের পটভূমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে জওয়াহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় জন অধ্যাপকের লেখা প্রবন্ধ রয়েছে বইটিতে। দিল্লী থেকে বইটি প্রকাশ করে বিকাশ পাবলিকেশন্স। এতে ‘লিগাল আসপেক্টস’ প্রবন্ধে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রহমতউল্লাহ্ খান আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। উপসংহারে তিনি লিখেছিলেন, “. . . ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে সম্ভাব্য স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইনে কোন বাধা নেই।”

সংকটের গোড়ার দিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে। শ্রীনাথ রাঘবন ‘1971 A Global History of the Creation of Bangladesh’ বইয়ের ৬৫ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন। তিনি লেখেন, “প্রবীন গান্ধীবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ন ‘জেপি’ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী তুললে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।” বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ভারতের সাবেক মন্ত্রী এম সি চাগলা জেপিকে বলেছিলেন, “স্বীকৃতির জন্য সাধারণত প্রয়োজনীয় – ভূখন্ডের উপর নিয়ন্ত্রন এবং সেখানে কার্যকর প্রশাসনের শর্ত – বাংলাদেশের বেলায় খাটে না। বাঙ্গালীরা পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তাদেরকে সংখ্যালঘুদের থেকে বিচ্ছিন্নতার জন্য দায়ী করা যায় না।”

ডেভিড হ্যারিসের ‘কেসেস এন্ড ম্যাটেরিয়ালস অন ইন্টারন্যাশনাল ল’ (টমসন রয়টার্স, লন্ডন, ২০১০ সংস্করণ) বইয়ের ৭৪৫ পৃষ্ঠায় ‘দি ইউনিল্যাটারাল ইউজ অফ ফোর্স বাই স্টেটস’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করে তিনটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে – ১) ভারত কি বাংলাদেশী গেরিলাদের সাহায্য দিতে পারতো? ২)শরনার্থী সমস্যা কী সম্পর্কিত ছিল? এবং ৩) ডিসেম্বরের ৩ তারিখে ভারত আক্রমন করার অধিকার পাকিস্তানের ছিল কি না? এ নিয়ে আত্মরক্ষা বিষয়ে কয়েকটি আকরগ্রন্থ পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাতে অনুমান করা যায় আত্মরক্ষার যুক্তিতেও ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা সরকারের স্বীকৃতি দিতে পারতো। যদিও ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের এক প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে ভারতের পাকিস্তান আক্রমন আত্মরক্ষার মতবাদের অধীনে ন্যায়সঙ্গত বলে দাবী গ্রহণযোগ্য নয় তবে পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকারের ব্যাপক লংঘনের মাধ্যমে ভারতের উপর ক্রমাগত ও অসহনীয় উদ্বাস্তুর বোঝা সৃষ্টি করায় মানবিক হস্তক্ষেপের দাবী করা যেত।

শ্রী দাসগুপ্ত নিজেই ২১৮ পৃষ্ঠায় নিরাপত্তা পরিষদের সভায় শরণ সিংয়ের বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে মি সিং বলেন, “কোন দেশ যদি এত সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের আনুগত্য হারায় . . . এবং তা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে যায় তাহলে আন্তর্জাতিক আইনে সেই রাষ্ট্র [বিচ্ছিন্ন অংশ] প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এগুলো সবই পি এন হাকসারের সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দেয়। শ্রী দাসগুপ্ত এগুলো উল্লেখ না করেই হাকসারের সিদ্ধান্তকে চুড়ান্ত বলে দাবী করেছেন। যে কারনে তাঁর গবেষণা কে পক্ষপাতদুষ্ট বলা যায়।

মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা বইগুলোয় লেখকরা পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের দিনকেই যুদ্ধের শেষদিন বলে দেখিয়েছেন। শ্রী দাসগুপ্ত যুদ্ধের পর সন্ধির বিষয়কেও যুক্ত করেছেন। সিমলা সমঝোতা (agreement) স্বাক্ষরের প্রতিদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্যসব বিষয়ই অন্যান্য বইয়ে পাওয়া যায়।

বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা অনুসন্ধানে ‘কী ঘটেছিল’ মানে শুধু ভারত কী করেছিল তা নয়। ভারত কোনো ভুল করে থাকলে বা তার কোনো ব্যর্থতা থাকলে সেটাও। যা বের করা ইতিহাস লেখকের দায়। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এই বিবেচনায় শ্রী দাসগুপ্তের গবেষণা পূর্ণাংগ নয়। প্রচ্ছদে বইটিকে ‘চুড়ান্ত কাহিনি’ বলে দাবী করা হলেও প্রচ্ছদ দিয়ে বইটিকে বিচার করা যায় না।

India and the Bangladesh Liberation War

Chandrashekhar Dasgupta

Jaggernaut Books

New Delhi 2021

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199