পুরুষ নেই...

ইরাজ আহমেদ

সাহিত্য সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 9 Jan 2025

3525 বার পড়া হয়েছে

Shoes

এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, ক্রমশ কমে যাচ্ছে পুরুষের শরীরে থাকা ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমই রয়েছে পুরুষের জন্মের নেপথ্যে।  অর্থাৎ, এই ক্রোমোজোম না থাকলে পুরুষের জন্মই হবে না। দুনিয়া থেকে মুছে যাবে পুরুষ নামক প্রজাতির চিহ্ন। ভবিষ‌্যৎ থাকবে মেয়েদেরই হাতে। আগামীতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে শুধুই জন্ম নেবেন নারীরা। পুরুষরা হবেন অবলুপ্ত। কী হবে যদি এই পৃথিবী পুরুষ-শূন্য হয়ে যায়? সৃষ্টির চিরাচরিত ধারা যদি পাল্টে যায়? যে আশঙ্কার কথা ২০০৩ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির হিউম্যান জেনেটিক্সের অধ্যাপক ব্রায়ান সাইকসের বই ‘অ্যাডামস কার্স: এ ফিউচার উইদাউট মেন’-এ উল্লেখ করা হয়েছিল।
এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে রইলো ভবিষ্যতের পৃথিবীর অচেনা এক রূপ নিয়ে ‘পুরুষ নেই’।

মানুষ-সহ একাধিক স্তন‌্যপায়ী প্রাণীর লিঙ্গ নির্ধারিত হয় এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোমের মাধ‌্যমে। মহিলাদের ক্ষেত্রে দু’টি এক্স ক্রোমোজোম থাকে। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে থাকে একটি এক্স এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম। এটাই বিজ্ঞানের ধরা-বাঁধা হিসাব। শুধু তাই নয়। এক্স ক্রোমোজামে অন্তত ৯০০টি জিন থাকে, যার যোগসূত্র যৌন কার্যকলাপের সঙ্গে রয়েছে। অন‌্যদিকে, ওয়াই ক্রোমোজোমে অন্তত ৫৫টি জিন থাকে, যা এমব্রায়ো তথা ভ্রূণে পুরুষ বৈশিষ্ট‌্য ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে, এই ওয়াই ক্রোমোজোমের সংখ‌্যাই ধীরে ধীরে কমে আসছে। প্লাটিপ্লাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মেলবোর্নের জিন-বিশেষজ্ঞ অধ‌্যাপক জেনিফার গ্রিভস জানিয়েছেন, গত প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন বছর ধরে মানুষ এবং প্লাটিপাস, উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াই ক্রোমোজোমে ৫৫ থেকে ৯০০ সক্রিয় জিন হারিয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ সংখ‌্যার হিসাবে প্রতি মিলিয়ন বছরে প্রায় পাঁচটি। এই হার চলতে থাকলে ১১ মিলিয়ন বছরে শেষ ৫৫টি জিনও হারিয়ে যাবে। ‘দ‌্য উইক’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশিরভাগ ওয়াই ক্রোমোজোম পুনরাবৃত্তিমূলক ‘জাঙ্ক ডিএনএ’ দিয়ে গঠিত। গ্রিভসের কথায়, ‘এত অশক্ত, দুর্বল গঠনের কারণেই ওয়াই ক্রোমোজোম ক্রমশ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছে না।’ এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ‌্য ন‌্যাশনল অ‌্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’-এ।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মানব সভ্যতার বেঁচে থাকার বিকল্পগুলির মধ্যে একটি হলো মহিলাদের দ্বারা ইউনিসেক্স প্রজনন। সাইকসের বিকল্প পদ্ধতিতে স্ত্রী ডিম অন্য মহিলার পারমাণবিক এক্স ক্রোমোজোম দ্বারা নিষিক্ত এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে রোপন করা হয়। পুরুষত্ব এবং পুরুষ উর্বরতার জন্য দায়ী এসআরওয়াই এবং সংশ্লিষ্ট জিনগুলিকে অন্য ক্রোমোজোমে স্থানান্তরিত করার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, যাকে তিনি ‘অ্যাডোনিস ক্রোমোজোম’ হিসাবে উল্লেখ করেন, যা একটি এক্সএক্স ক্যারিওটাইপ-সহ উর্বর পুরুষদের জন্ম দেয়। অন্যদিকে জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী আসাতো কুরোইওয়ার নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা দু’টি ইঁদুরের বংশ বিশ্লেষণ করেন, যেগুলি ইতিমধ্যেই তাদের ওয়াই ক্রোমোজোম হারিয়েছে এবং পৃথিবীতে এখনও টিকে আছে। কীভাবে? ওয়াই ক্রোমোজোম বিলুপ্ত হওয়ার আগেই তারা একটি নতুন ক্রোমোজোম তৈরি করেছিলো, যা পুরুষ ইঁদুরের জন্মের জন্য প্রয়োজনীয়। মানুষের ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটে গেলে ভালো, নইলে ভবিষ্যতের দুনিয়া শাসন করবে প্রমীলা বাহিনীই। আবার জিন বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে নতুন কোনও লিঙ্গও।

কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন পৃথিবী পুরুষ শূন্য হতে প্রায় ১২৫,০০০ বছর সময় লাগতে পারে। সময়ের এই হিসাব শুনে আজকের পৃথিবীর যে কোনো পুরুষ হাই তুলে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন অনায়াসে। কিন্তু বিষয়টা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে। কারণ গত ৫০ বছরে ওয়াই ক্রোমোজমের সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ধারাবাহিক ভাবে পরিবেশের অবনতি, মানুষের ওপর মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং নানান আসক্তির কারণেই এই প্রবণতা শক্তিশালী হচ্ছে।

আমেরিকার গবেষকরা এই প্রবণতা নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, যদি পৃথিবী একটা সময়ে পুরুষ শূন্য হয়ে যায় তাহলে তাদের দেশের জেলখানাগুলিতে কয়েদির সংখ্যা ৯৭ ভাগ হ্রাস পাবে। সড়ক দূর্ঘটনার হার ৭০ শতাংশ কমে যাবে। অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আকৃতিও কমে অর্ধেক হয়ে যাবে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবী যদি সত্যিই প্রমীলা রাজ্যে পরিণত হয় তাহলে রাজনীতি ও সমাজনীতিতে ব্যাপক রদবদল আসবে। পৃথিবীতে দেশে দেশে যুদ্ধের দামামা কম শোনা যাবে। কিন্তু এতসব ইতিবাচক কথার উল্টো পিঠে  পাল্টা প্রশ্নও আছে।  নারীরা কি তাহলে রাজনীতি করবে না? তারা কি নারীদের দিয়ে সেনাবাহিনী তৈরি করে অন্য দেশ দখলের চেষ্টা করবে না? তাহলে কি আমাদের এই পৃথিবী পুরুষ শূন্যতা নিয়ে এক ধরণের একঘেয়ে, বৈচিত্রহীন জীবনের ভিতরে প্রবেশ করবে?
বিজ্ঞানীদের কাছে এতসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা এ কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

তথ্যসূত্রঃ এবিসি টিভি, রোববার কলকাতা
ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199