ভোরবেলা কোত্থেকে ঝরে পড়ে শিউলি ফুল? পৃথিবীতে ঝরে পড়ায় এত আনন্দ আর কোথাও দেখা যায় কি? না বোধ হয়। চারদিক আলো করে ঝরে পড়া শিউলির আনন্দ আমাদের মনকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার হদিস এখন কে-ই বা রাখে। আমাদের এই নাগরিক ভোরগুলো জেদি আগুনের মতো ফুঁসে ওঠে প্রতিদিন, প্রয়োজনের ফর্দ হয়ে ঘিরে ধরে আমাদের পোড়ানোর বাসনা নিয়ে। তার মাঝে শিউলি ফুল থাকে তার আগমনী বার্তা নিয়ে। সে ফুল আসে আনন্দের কথা নিয়ে, পূজার বার্তা নিয়ে। কোথায় কোন নিভৃত শহুরে কোণে গাছের তলা আলোকিত করে পড়ে থাকে শিউলির আনন্দ।
আমাদের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ফুলের সঙ্গে। আছে আনন্দের স্মৃতি,বিষাদের স্মৃতি। হয়তো স্মৃতিহীনতার স্মৃতিও।
প্রাণের বাংলার এই সংখ্যা পূজাসংখ্যা। আমাদের প্রচ্ছদ আয়োজনেও তাই রইলো শিউলি ফুল আর পূজার আবহ।
শিউলি ফুল শিউলি ফুল
(অটোয়া থেকে): শিউলি ফুল আমার প্রিয়। সেই ছোটবেলা থেকে। দেশ ছাড়ার পর থেকে শীতকাল ছাড়া আর দেশে ফেরা হয়নি। কয়েক বছর আগে, পার্থ(অষ্ট্রেলিয়া) ঘুরে দেশে গেলাম যখন, শরতের আকাশ দেখে মনে পড়ে গেলো শিউলি ফুলের কথা। আহা কি যে প্রিয় আমার। যেমন সুন্দর দেখতে,তেমনি সুরভিত সুবাস।
আপু সহ রাতের বাসে লালমনিরহাট এ গিয়েছিলাম। বাসার লাগোয়া পূজা মণ্ডপে ভোরবেলা থেকেই শুরু হতো প্রার্থণা সংগীত। খোল,ঢোল বাজিয়ে । সারাদিন মাইকে বাজলো পুরানো দিনের গান। এত পুরানো,যে,মনে হচ্ছিলো আমার পুরো শৈশব,কৈশোর চোখের সামনে চলে আসছে।
একদিন সন্ধ্যাবেলা আমরা দু’বোন ডায়াবেটিক হাসপাতালে গেলাম। অদ্ভুত সুন্দর চেনা এক গন্ধের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লাম। শিউলি ফুলের গাছ। সবুজ পাতার ভীড়ে ছোট ছোট ফুল। আমি গাছটাকে ছুঁয়ে দিলাম। কি এক ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে কতক্ষন যে দাঁড়িয়ে থাকলাম! বাসায় এসে গল্প করলাম আমাদের বাড়ির শিউলিকে সেই ভালোলাগার কথা। সন্ধ্যেবেলা তাই আর গাছ থেকে ফুল নেইনি। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর বসার ঘরে এসে অবাক হয়ে গেলাম। টেবিলের উপর একরাশ শিউলি ফুল। শিউলি আমার জন্য আঁচল ভরে কুড়িয়ে এনেছে। আমি ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কত বছর! কত বছর পর শিউলি ফুল দেখলাম।সেই একই রকম দেখতে। একই রকম গন্ধ। নিজেকে এল চার দুই সাহেব পাড়ার ছোট্ট সাজি মনে হলো। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতো মায়ের পড়া সুরা রাহমানেরা সুরে।‘ ফাবিআইয়্যি আ-লা-য়ি রব্বিকুমা- তুকায্যিবা-ন্( অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে )’ আমি তখন অর্থ জানতাম না। কিন্তু শুনতে শুনতে এই লাইনটা আমার খুব ভালো লাগতো।আমিও মায়ের মতো সুরে করে বলতাম। আমার শরতকালের সকাল শুরু হতো অন্যরকম করে।
বারান্দায় বের হয়ে দেখতাম পাশের বাসার কফিল খালু সামনে হাঁটছেন।আমি গেট খুলে উনাদের বাসার সামনের শিউলি কুড়াতে শুরু করতাম।খালুও এসে যোগ দিতেন। কত গল্প করতেন। খালুর ছোটবেলার গল্প। উনার ভাই-বোনের গল্প। ফ্রকের কোল ভরে যেতো ফুলে।বাসায় এনে বারান্দার টেবিলের উপর রাখতাম। মালা বানাতাম। আর মাঝে মাঝে ফুল দিয়ে টেবিলের উপর নাম লিখতাম। নিজের নাম,ভাইবোনদের নাম। মা এসে বলতেন ,এতক্ষন পড়তে বসলে কত পড়া হয়ে যেতো! আমার একদম পড়তে ইচ্ছা করতোনা
তখন। শিউলি ফুলের সুঘ্রাণে আমার মা-ও নস্টালজিক হয়ে যেতেন।ছোটবেলার ভোরবেলা উঠে শিউলি,বকুল ফুল কুড়ানোর গল্প করতেন।
ভাইজানের সঙ্গে একদিন পূজার মণ্ডপ দেখতে বের হলাম আমি আর আপু।ছোটবেলায় লালমনিরহাটের কালিবাড়িতে পূজা অনেক জমজমাট হতো। আমার ছোটবেলার বন্ধু রেবাদের বাড়িটাই ছিলো কালিবাড়ি। ওর বাবা পন্ডিত স্যার ছিলেন ওখানকার ঠাকুরমশাই। সেবার যেয়ে শুনলাম উনিও প্রয়াত হয়েছেন।
পুজার মণ্ডপগুলোতে এখন শুধু নাচ আর গানের হিড়িক। স্মৃতি হাতড়ে কোন কিছুর সঙ্গে এই পূজার মিল পেলাম না। নারিকেলের নাড়ু খেতে গেলাম একদিন আমার ছোটবেলার বন্ধু মৃণাল এর বাড়ি আর আমাদের থানাপাড়ার বাড়ির কাছের গোপাল কাকুর বাড়ি। কত গল্প আর স্মৃতিকথা হলো সবার সঙ্গে।
সেবার ঘুরে ফিরে আমি মায়ের কাছে এসে বসে থাকতাম। মা আর আগের মত কথা বলতেন না।আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর আমাদের কথা শুনতেন।সারাদিন ভাবনার জগতে ডুবে থাকতেন মা। আমি নিশ্চিত জানতাম সেই জগতে আমরা কেউ থাকিনা। মা ডুবে থাকতেন ছোটবেলায়,মা বাবা,ভাইবোনের সঙ্গে স্মৃতির বাড়িতে। মায়ের স্মৃতিতে আব্বাও কি থাকতেন? মায়ের সংসার? কতো স্মৃতি,বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায়! অবাক লাগে!
আশি বছর বয়স হলে অবসরে কোন সময়ের কথা ভাবে মানুষ কে জানে! আমি আর আপু মায়ের পাশে বসে গল্প করতাম। আপু অনেক গল্প করতে জানে।কথার পিঠে কথা সাজাতে পারে। আমার শৈশবকে এক লহমায় সামনে আনতে এই আপুই পারে। আমি জন্মাবার দিন থেকে শুরু করে আরো কত গল্প। আমি অবাক হয়ে শুনি। এত সুন্দর করে মনে রাখতে পারাটা কম কথা না। আসলে ছোট্ট একটা বোন থাকলে কেমন অনুভূতি হয় সেটা আমার জানা নেই। আমি ছোটবেলায় কেমন জেদী ছিলাম, এমন কত গল্প যে আপুর কাছ থেকে শোনা।
আমরা তিনবোন রাতে বসে আড্ডা দেই।যদিও সময়টা খুব কম, আমাদের স্মৃতির অ্যালবামে জমা হয় কিছু সুন্দর সময়। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিক আর টিপ পড়ে দুষ্টুমী।কে বেশি সুন্দর এই নিয়ে দুষ্টামি।সাজলে আমাদের তিনজনকেই কেমন বোকা বোকা দেখায় এই কথা বলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া। রাত বাড়তে থাকে,আমরা জানি মা কান পেতে আমাদের কথা শোনেন ,হাসি শোনেন।
আহা মা! আহা আমার শিউলী ফুলের মত সুঘ্রাণে ভরা মা।
ভেবেছিলাম একদিন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইবো আমরা। গাইবো, `আমার নয়ন ভোলানো এলে ‘সহ আরো কত গান! আমার হারমোনিয়ামটা যে কোথায় কার কাছে আছে,তা আর জানা হলোনা। `আমি মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি‘ গানটা দিনে কতবার যে বাজতো পূজা মণ্ডপে।একদিন শিউলির ছোট্ট ছেলেকে দিয়ে পুজার মণ্ডপ থেকে একটা ভট ভট গাড়ি কিনিয়ে আনলাম। মাটির হাঁড়ির উপর কোন পশুর চামড়া দিয়ে ঢোলের মত বানানো। ওটাতেই চাকা বানিয়ে ,রশি দিয়ে টানা হয়। ছেলেটা দেখলাম এসবে আনন্দিত নয়। সারাদিন উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে টিভির সামনে। বাতাসা,মোয়া খাবে বলে বায়নাও ধরেনা।
শুধু আমি পছন্দ করবো বলে তড়তড়িয়ে গেছে উঠে কামরাঙা পেড়ে আনে। কি যে সুন্দর সেই কামরাঙা। কোনটা সবুজ,কোনটা। তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যাই।
সেবার সবকিছু ছাপিয়ে সারাদিনমান আমি আমার মাকে দেখেছি।কখনো লুকিয়ে, কখনো জানিয়ে ছবি তুলেছি।
। মায়ের জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা। মায়ের কোরান পড়া। মায়ের খাওয়ার সময়। মায়ের শাকবাছা সময়।মায়ের টিভি দেখা। সন্ধ্যার পর টেলিফোনের মিনি খালাম্মার সঙ্গে কথা বলার সময় মায়ের গলায় অদ্ভুত আনন্দ । আমি চোখ ভরে দেখি,কান পেতে শুনেছিলাম! আর তো দেখা হলোনা এরপর!
এখন এইসব স্মৃতি নিয়ে আবার আমার জাবর কাঁটা। এইসব নিয়ে আমার এই শীতার্ত পৃথিবীর পথ হাঁটা।
শিউলী ফুলের সুবাসে ভরা সেই পূজোর দিনগুলোতে হয়তো আর ফেরা হবেনা। মা নেই। পৃথিবীর আনন্দ,ভালোলাগা,অদ্ভুত সেই গন্ধ আর ভালোবাসার মায়ের বুকটার কাছে আর ফেরা হবেনা।
শিউলী ফুলের মতই অধরা থেকে যাবে মা।পূজা চলবে,ঢোল বাজবে।নাচ হবে। গান বাজবে। আমার চোখের ভিতর জলের মত জমা হয়ে থাকবে স্মৃতিগুলো। সব পুরানো হবে,ফিরিয়ে যাবে।
শুধু শিউলী যখন ফুটবে,একদম আগের মতন। সেই সাদা আর কমলা মেশানো রঙ।
শিউলী ফুল আমাদের সজীব করে রাখবে.........বাঁচিয়ে রাখবে! আমি আমার বন্ধু কলিকে চিঠি লিখবো।
প্রিয় কলি, এখন শরৎকাল। এতদূরে বসেও বাতাসে শিউলীর গন্ধ পাই। শিউলী ফুল মানেই স্মৃতি।
এই স্মৃতিকাতরতায় জুড়ে থাকে কত কিছু!কত ভালোবাসার মানুষ!
আমার এখানে পাতারা দ্রুত বদলাচ্ছে রঙ। ওদের ঝরে পড়ার সময় আসছে। কাঠবিড়ালীরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে। দেশের শরতের আকাশ আর কাশবন দেখতে খুব ইচ্ছে করে। ঢাকঢোল,পূজার গন্ধ,শাঁখের শব্দ আর সবচেয়ে বড় সেই যে শিউলী ফুলের ঘ্রাণ আর সেই উলুধ্বনি ! এক আমি চোখ ভরে দেখি ম্যাপেল পাতার নানান রঙ।
আমি চোখ মেলে থাকি....
আমি গান গাই, শিউলিতলার পাশে পাশে
ঝরা ফুলের রাশে রাশে
শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে
অরুণ-রাঙা-চরণ ফেলে
নয়ন-ভুলানো এলে।
গান গাই আর ঘুরে বেড়াই তোমার পাশে পাশে।ভালোবাসা নিও। ভালো থেকো সবাই! ভালোবাসি।
ভালোবাসি ফুল, শরতের শিউলিমাখা ভুল
এই শিউলি ফোটা শিশির ভেজা ঘাসে আমি সেই বিরহী বালিকা যার স্মৃতির দহন থেকে মুক্তি নেই। একই তো শিউলি, নীল সাদায় মাখামাখি আকাশ, আগমনী ঢাকের অপেক্ষা, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের যা দেবি সর্বভূতেষুর সুরে সূর্যোদয়ের রঙ বদলে যাওয়া.....।আমার অভ্যস্ত চোখ তবু পোড়ায়,স্মৃতির আক্রমনে পোড়ায়। আমি একটা হারিয়ে যাওয়া পাড়া খুঁজি,একটা নিকানো শিউলিতলা, প্রতিমার উজ্জ্বল মুখাবয়বের মায়াবী আবেশে মোড়া একটা মণ্ডপ, ধুপের ধোঁয়ায় উন্মত্ত নৃত্য! সবই তো আছে, শুধু রং বদলে গেছে আমার দেখার!
সেই যে শিউলিতলা, নিকানো গোড়ায় যেখানে অপেক্ষায় থাকতো কৈশোর উত্তীর্ণ প্রথম প্রেম আমার। আদি -অন্তহীন, ভূত ভবিষ্যৎহীন, এইসব সামাজিক হিসাবহীন,গন্তব্য উদ্দেশ্যহীন প্রেম শুধু। সময় আমার কাছে জানতে চাইবে তুমি কাকে বেশি ভালোবাসি এই পূর্ণতা কিংবা সাফল্যের দৌড়ের জীবনে? আমি চোখ বন্ধ করে বলবো সেই দিন। রঙহীন হাজার রঙের সেই দিন। জানতাম না যেদিন অপেক্ষা ফুরাবে কি না তবু অপেক্ষার কী অপার আনন্দ। আচ্ছা আজকের কোন ‘ আমি’ কি এভাবে শিউলি কুড়ায়? রাতজেগে অন্তর্জালে ভাব বিনিময়ের পর আর কোন শিহরণ কি তার জন্য পূবাকাশ রক্তিম হয়ে উঠা ভোরে অপেক্ষা করে থাকে শিউলিতলায়?
আচ্ছা খুব জানতে ইচ্ছে করে,যেরকম ভোরের গায়ে রাত লেপ্টে থাকে, যে রাতের আঁধারটুকু সূর্য খেয়ে নেয় বলে কষ্ট হয়! কষ্ট হয় আগমনীতে ফুরিয়ে যাবার গন্তব্য থাকে বলে। মনে হয় থেমে যাক আহ্নিকগতি বার্ষিকগতির নিয়ম। ভোরটুকু সকাল না হোক। শিউলিতলায় ঝরে পড়া শিউলিগুলো চুপচাপ অপেক্ষায় থাকে প্রেমিক স্পর্শের।
আনন্দ আর অপেক্ষার রঙগুলো হারিয়ে না যাক, হারিয়ে না যাক আমার ভেতরের শিহরণ। এরকম অপেক্ষার আনন্দ কি আছে আর এই সময়ে কারো নতুন জামা আর পাউডারে নিজেকে সযত্নে সজ্জিত করার আয়োজনে?
মণ্ডপে আগমনী ঢাক বেজেছিলো সেদিন। ভোর হয় হয় রং। পুকুরে সবার টুপটুপ ডুব প্রায় শেষ। বউরা সিঁথি ছুঁয়ে আঁকছে সোহাগী আহ্লাদের সিঁদুর। অঙ্গ জুড়ে পাট ভাঙছে শাড়ি। যুবতীরা ব্যস্ত পুষ্পাঞ্জলির প্রস্তুতিতে। সেদিন বেঁহুশ ঘুম আমার কাটছিলো না কিছুতেই। আশ্বিনের শেষে কার্তিকের শুরুতে কাঁথা কানে গুঁজে দিয়েছি ঘুমের কাছে আত্মসমপর্ণে। হঠাৎ টের পাই জানালার শিক গলে নরোম কিছু ঝরে পরছে আমার চোখেমুখ, গালে, গলায়....হাত বাড়িয়ে দেখি সারা গায়ে। ঘুমের ঘোরে কী স্বপ্নে হারাই? আমি কী শিউলিতলায় শুয়ে আছি, গাছ থেকে ঝরছে বোঁটাখসা শিউলি সব! হঠাৎ চমকে ঘুম ভাঙে! অজস্র শিউলি আমার পিঠময়। আমি মুঠোভরে তুলি। আমিতো বিছানায়। চোখ যায় জানালায়। পঙ্ক্ষীরাজ ঘোড়া চড়ে সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে এসেছে রাজকুমার। সন্ধ্যারতির ধোয়াঁয় যে চোখের সর্বনাশা আহবান দেখি দশভুজার সামনে, দেবির পায়ে অঞ্জলিদান প্রত্যাশী নারী পুরুষের ভীড় ঠেলে যে দৃষ্টি ভুল করে দেখে ফেলি আমার দিকে, আজ হাতের নাগলে সেই অধরা দৃষ্টি।করতল ভরতি আরো শিউলি.....। আমি বিহবল, আমি বিমূঢ়। আমি অবশ।
মোহাবিষ্টের মতো হাত পাতি তার কাছে। সে ঘুরে আসে দরজার চৌকাঠ ডিঙিয়ে। আমার পায়ের কাছে করতলের ফুল রাখে। বলে, সবাই মণ্ডপের প্রতিমাকে অঞ্জলি দিচ্ছে আমি দিলাম আমার প্রতিমাকে।
এমন ভোর আর আসে নি আমার জীবনে।
অরুন আলোর অঞ্জলি
(দিল্লী থেকে):শরতের অরুন আলোর অঞ্জলি যখন পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করতে শুরু করে, শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে বিছিয়ে যায় শিউলির চাদর,মনে হয়—প্রকৃতিমায়ের চরণে যেন শরতের পুস্পাঞ্জলি।শরতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির নস্টালজিয়ায় জড়িয়ে যায় শিউলির আঘ্রাণ।শরতের শান্ত স্নিগ্ধ নির্মল সৌন্দর্যের প্রতীক যেন শিউলি ফুল।
সাদা ও জাফরানী রঙে ছোট ছোট তারার মত ফুলগুলো ঝলমলে রোদে শুভ্র বরফ কুচির
মত ঝকঝক করে, চারিদিক ছেয়ে যায় তার সৌরভে।কোন এক অজানা মোহনবাঁশি মনের কোণে সুর তোলে আগমনীর।
শৈশবের স্মৃতিতে আজ ও আছে শিউলির সুঘ্রাণ আমার মামা-বাড়িকে ঘিরে। মামা-বাড়ির উঠোনে এক প্রকান্ড শিউলি গাছ ছিলো। নীচটা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে থাকতো।কত যে শিউলি কুঁড়িয়েছি সাজি ভরে আর আমার দিদার ঠাকুরের জন্য শিউলির মালা গেঁথে দিতাম,সে স্মৃতি বড় মধুর হয়ে মনে গেঁথে আছে। আমাদের বাড়িতে ঘরের জানালার পাশেই ছিলো শিউলি গাছ। ভোরের শিউলি প্রহরে পাড়ার মাসিমা,কাকিমাদের গুঞ্জন শুনতে পেতাম শিউলিতলায়, তাদের ব্যস্ততা ছিলো ফুল কুড়োনোর কাজে।ঘুম ভেঙে শিউলির সৌরভ স্নায়ুকে নাড়া দিয়ে যেত একঝলক আনন্দে, 'শরৎ এসে গেছে, মা আসছেন'। আমাদের গ্রামের বাড়িতে খুব বড় করে দুর্গাপূজো হতো। আমার ঠাকুরমা ঠাকুরদাদার বাড়িতে। আমরা ভাইবোনেরা খুব হৈ-হুল্লোর করে রোজ পূজোর ফুল কুড়োতাম শিউলিতলায়। গাছ ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে সব ফুল শেষ না হওয়া অবধি শান্তি ছিলোনা। শিউলি আজ ও স্মৃতিতে এভাবেই রয়ে গেছে ছোট ছোট খুশীর ঝলকে।
বিয়ের পর প্রবাসে থাকার সুত্রে বাংলার মতো.jpg)
শিউলি গাছ যত্রতত্র দেখতে পাইনা, ইঁট কাঠ পাথরের জঙ্গলে শরতের জন্য ফাঁক-ফোঁকর ও খুব অল্প।তবু সৌভাগ্যক্রমে আমার আবাসনটিতে সবুজের আতিথেয়তা থাকায় ঘরের কাছেই শিউলি গাছ আছে। শিউলির মনোমুগ্ধকর আকর্ষণেই ছুটে যাই শিউলিতলায়।পাত্র ভরে কুড়িয়ে নিয়ে আসি শিউলি ফুল। মাটির পাত্রে জল রেখে ওপরে ছড়িয়ে দিই শিউলির সম্ভার। সজীবতায়,সুঘ্রাণে আজ ও মন ভালো করা এক টুকরো শরতকে এভাবেই ধরে রাখি
অন্দরমহলে। আজকাল প্রকৃতিতে ও অনেক উলট-পালট তাই যথাসময়ে শিউলি ফোঁটে না। মায়ের পূজোর সময় হয়ে গেলে ও শিউলি ফোঁটার সময় হয় না। তবু শরৎ আর শিউলি যেন আজন্ম প্রেমিক প্রেমিকা।শিউলি ছাড়া শরৎ যেন সম্পূর্ন সুসজ্জিত নয়।আমাদের মনে ও শরতের আহবান পৌছায়না— শহুরে সভ্যতার আনাচে-কানাচে শিউলির দেখা না পেলে।আজ ও যেন অনেক নিস্তব্ধতার মাঝে শিউলি ঝরার টুপ-টাপ শব্দকে অনুভব করতে পারি।শারদ শিউলি কাননে,শারদোৎসবের আয়োজনে,শারদ প্রাতের স্নিগ্ধতায় মন তাই গেয়ে ওঠে—'তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে,
তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি—
শিউলি ফুল এভাবেই ফুটে থেকো হৃৎ-কাননে।জীবনের ক্ষয়িষ্ণু বেলাতেও এভাবেই যেন জেগে উঠি শারদ-প্রাতে,তোমার মিষ্টি গন্ধের সুরভিত আবেদনে।
তোমার বিছানো পথে, চরন রাখুক শারদ-প্রাতের পথিক—অরুণ-কিরণ রথে।
শিউলি তলায় ...
(ইংল্যান্ড থেকে): আমাদের হবিগঞ্জ শহরটা খুব প্রাণবন্ত ,আর সবুজ ছিল। শহরের প্রায় প্রত্যেক টা বাড়িতেই ফলমূলের গাছ ছিল। যারা সৌখিন ছিলেন তারা আবার বাড়ির সামনে কিছুটা হলেও ফুলের বাগান করতেন। শহরের পুরাতন হাসপাতালে প্রচুর কাটগোলাপের গাছ ছিল। শহরের কোর্ট প্রাঙ্গনে ছিল অনেক উচু এবং বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ। তবে বেশি ভালো লাগতো বাড়িগুলির প্রাচীরের উপর বা প্রধান ফটকের পাশদিয়ে বাগান বিলাস বা শিউলি ফুলের ঝারের নুয়ে পরা। আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন শহরের একমাত্র সংগীত বিদ্যালয় ছিল সুরবিতান। আমরা তখন শহরের সরকারি স্টাফকোয়াটারে থাকি। আমার বন্ধু দিবা এবং শিল্পী দুই বোন ওরাও আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে থাকতো। ওদের সাথেই আমার সুরবিতানে যাওয়া আসা হত। আমরা সুরবিতানে যেতে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে না গিয়ে পাড়ার ভিতরের শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যেতাম। যাওয়ার পথে পাড়ার টিক ভিতরে একটা পুকুর ছিলো এবং একটা সাদা বাড়ি ছিলো পুকুরটির লাগোয়া। সেই বাড়ির আঙিনায় ছিল বিরাট শিউলি ফুলের গাছ । শরৎকালে যখন শিউলি ফুলে ছেয়ে যেত গাছটিতে ,তখন প্রায়ই বাড়ীর লোকদের অগোচরে কোচর ভোরে শিউলি ফুল নিয়ে ফিরতাম আমরা । শিউলি ফুলের স্নিগ্ধ রং এবং মন অবশ করা ঘ্রাণ আমাকে খুব আকর্ষণ করতে।
আব্বা যখন বাড়ি বানালেন তখন বিভিন্ন জাতের ফলের এবং ফুলের গাছ দিয়ে বাড়ি সাজালেন। আব্বাকে শিউলি ফুলের গাছ এনে দেয়ার বায়না ধরি। একদিন দেখি আব্বা কোথা থেকে একটা শিউলিফুলের চারা গাছ এনে বাসার সামনের লনের এক পাশে গেইট থেকে একটু দূরে , যে চাঁপা ফুলের গাছ ছিলো সেটার পাশে পুঁতে আমাকে বলেন প্রতিদিন যেন পানি দেই আর যত্ন নেই। কয়েক বছরের মধ্যেই গাছটি বড় হয়ে গেলো। তারপর প্রতি শরৎকালে শিউলি তলায় ভোরবেলা শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর টুপটাপ শিউলিফুল ঝরে সাদা আর জাফরান রঙের ছোপ দেয়া চাদর বিছিয়ে দিতো। আমাদের লন থেকে মাঝে মাঝে ভোরবেলা ফুল চুরি হতো। তাই ভোরবেলা সামনের লনে কিছু সময় কাটাতাম। বাসার গেইটের পাশেই রাস্তা তারপর ছিলো লেক যেটা পুরাতন খোয়াই নদীকে কয়েক জায়গায় বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। মাঝে মাঝে ভোরবেলা গেটের পাশে দাঁড়িয়ে সামনের লেকের ছোট ছোট বয়ে যাওয়া ঢেউ গুলো তন্ময় হয়ে দেখতাম।.jpg)
একদিন যখন শিউলি তলায় দাঁড়িয়ে গাছ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে ফুলগুলো মাটিতে ফেলছিলাম তখন মনে হলো কেও গেটের ওপাশ থেকে আমাকে দেখছে। আমি তাড়াতাড়ি ফুলগুলো কোচড় ভরে নিয়ে ঘরে চলে আসি। তারপর মনে হলো একে তো আমি কলেজে আসা যাওয়ার পথে দেখেছি। । একদিন ভোর বেলা গেটে দাঁড়িয়ে লেকের পানি দেখছি এমন সময় দেখি হাঁটতে হাঁটতে তার পাশে দিয়ে চলে যাওয়া ।হঠাৎ থেমে আলতো করে নাম এবং কোন ক্লাসে পরই জিজ্ঞেস করে। আমি কোনমতে উত্তর দিয়ে বাসার ভিতর ঢুকে পরি। দুইদিন পর যখন আবার ভোরে শিউলি তলায় শিশির ভেজা ফুলগুলো কুড়াচ্ছিলাম তখন হঠাৎ শুনি সে বলছে, এখন আর ভোরে বের হও না? আমি লজ্জায় ভয়ে দিক দিশা হারিয়ে ঘরের দিকে ছুট দেই। কিন্তু কেমন জানি একটা প্রজাপতির নাচন হৃদপিণ্ডের ভিতর টের পাই সারাদিন।
পরদিন কি এক নেশায় আবার ফুল কুড়ানোর বাহানায় গেটের সামনে দাড়াই। দূর থেকে ভোরের হালকা নরম আলোয় দেখা যাচ্ছে কেউ একজন আসছে।আমি পিছিয়ে ফুল কুড়ানোর বাহানায় শিউলি গাছে ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে ফুল ঝরাতে ব্যস্ত। সে ডাকলো। আমি একটু খানি এগিয়ে গেলাম। বললো দুইদিন পর চলে যাচ্চে। শুধলাম কোথায় ? বললো চিটাগাং আরো বললো চিটাগাং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ছুটিতে মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। তারপর দিন আর এলো না। কিন্তু মন বলছিলো যাওয়ার আগে নিশ্চয় আসবে। পরের দিন আমি ভোরবেলা গেটে দাঁড়িয়েছিলাম ।শরতের ভোরের আকাশ টা খুব নীল ছিলো । আকাশের সেই অসীম নীলে সাদা সাদা ছেড়া তুলোর মত মেঘ গুলো ভেসে বেড়াচ্ছিলো এখানে সেখানে। আমি লেকের পানিতে আকাশের পুরো ক্যানভাসের প্রতিবিম্ব বিভোর হয়ে দেখছিলাম। হঠাৎ ভিতর থেকে আম্মা ডাকছেন। আমি তাড়াতাড়ি শিউলি তলায় ফুল কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে যাই। হঠাৎ কানে এলো কেউ যেন আলতো করে আমায় ডাকছে। মুখ তুলে দেখি সে কিছু একটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গেইটের পাশে যেতেই একটা লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো তোমার চুলে গেঁথে নিয়ো ,আমি আগামী কাল চলে যাচ্ছি। আমি তাড়াতাড়ি কোঁচর থেকে একমুঠো শিউলি ফুল তার হাতে দিয়ে ঘরে চলে আসি। আর দেখিনি তাকে। আমার ব্যাকুল দুটো চোখ অনেক খুঁজেছে তাকে। অনেকদিন পর শুনেছি ওরা সপরিবারে হবিগঞ্জ থেকে চিটাগাং চলে গেছে।অনেকদিন পর আমার পুরনো ডায়রিতে একটা গোলাপের ফসিল পেয়েছিলাম।
নতুন বউ
তখন সবে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি। আব্বার সরকারি চাকুরীর কারণে বদলী হয়ে এক শহর থেকে আরেক শহরে এলাম। বাসার কাছে হেঁটে যাওয়া যায় এমন একটি স্কুলে আব্বার হাত ধরে ভর্তি হয়ে গেলাম।
এই আমি চিরটাকাল নিজের আঙ্গিনায় অস্তরবির মতো রক্তরাগ ছড়াতে ভালোবাসি। মৌন প্রকৃতির মাঝে হৃদয়ের আবির ঢেলে দেই।
আজকের এই মধ্যবয়সের মতো শৈশবেও কখনো মানুষের প্রতি ভাবোচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসতে পারিনি। আমি জানি এ আমার ব্যর্থতা। তবুও দিনমান উদ্বেল থাকি আত্মোপলব্ধির শিহরণে, নিজেকে আবিষ্কারের প্রাণচাঞ্চল্যে।
লাল-নীল আইসক্রীম কিংবা বরই আর চালতার মিষ্টি আচারের স্বাদেই ছিলো আমার শৈশবে স্কুলে যাওয়ার আনন্দ। তিনতলা স্কুলের দোতলায় ছিলো শ্রেণীকক্ষ। নিয়মিত জানালার পাশে বসতাম। উদাস নয়নে আমি চেয়ে রইতাম দূর আকাশের বিচিত্র বর্ণচ্ছটার দিকে। কখনো জানালার গ্রীল ধরে অপলক তাকিয়ে থাকতাম স্কুলের পেছন দিকের প্রাচীর ঘেরা খোলা জায়গায়।
সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় শিউলি গাছটি আমার হৃদয়কে ভাসিয়ে দিতো। এককোনে পেয়ারার পাশাপাশি দু‘তিনটি আমের চারাও ছিলো। সব গাছ ছাপিয়ে আমার দৃষ্টি পড়তো কেবল ঝরে পড়া শিউলি ফুলের দিকে।
মনে মনে এই জায়গার নাম দিয়েছিলাম শিউলি তলা। হয়তো তখন শরতের সুনীল আকাশে দেখা যেতো মেঘপুঞ্জের নিরুদ্দেশ যাত্রা। আমার খুব ইচ্ছে হতো শিউলি তলায় গিয়ে কমলা বোঁটার রজতশুভ্র শিউলি কুড়িয়ে আনি। কিন্তু বিধিবাম! ওখানে যাওয়ার সহজ উপায় ছিলোনা।
স্কুলের নীচতলায় তিনটি ঘরই ছিলো মোটামুটি পরিত্যক্তের ন্যায়। একটি কক্ষে সবসময় তালা ঝুলতো। বাকী দুটি কক্ষে থাকতো স্কুলের দারোয়ান মুন্সীচাচা এবং তার ছেলে এমরান। এমরান রাতের বেলা স্কুল পাহারা দিতো।
স্কুল ঘরের একপাশে নালা। তার পাড়ে ছোট আরেকটি ভাঙ্গা-চূরা ইটের ক্ষুদ্র কক্ষ। দেখলে মনে হতো সেখানে সাপ-জোক কিলবিল করে। এতো প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে শিউলি তলায় যাওয়ার আশা একদম ছেড়ে দিয়েছি। শিউলি তলার ওই অধরা বিমূর্ত সৌন্দর্যকে নিয়ে স্বপনচারী আমি কেবল কল্পনার বিচরণ করতাম।
একদিন মুন্সী চাচার ঘরের দরজায় এক নারী অবয়ব চোখে পড়লো। সমস্ত দ্বিধা এবং লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে মুন্সী চাচার কাছে দৌড়ে গেলাম।
-`চাচা, আপনাদের বাসায় নতুন একজন আন্টি এসেছেন। আন্টিটা আপনার কি হয়?‘
মুন্সী চাচা একগাল হেসে উৎফুল্ল ভঙ্গীতে বললেন, `আমার ছেলে এমরানের বউ। বেটি, আসো চাচার সঙ্গে। তোমাকে নিয়ে যাই।‘
আনন্দে দিশেহারা আমি চাচার সঙ্গে চলে গেলাম। কোমলতা নতুন বউয়ের সারা মুখ জুড়ে। আমাকে অনেক যত্ন করে বাঁশের টুকরীতে গ্রাম থেকে আনা মুড়ির মোয়া খেতে দিলো। ভিতরে ভিতরে খুশিতে হচ্ছি আমি। মুন্সী চা
চার এই দু‘খানি ঘর আমার কত যে কাঙ্ক্ষিত! কারণ, এই ঘরগুলো ডিঙিয়ে সহজে শিউলিতলায় যেতে পারবো।
তাদের ঘরে খুববেশি আসবাব নেই। যা আছে সবই কমদামী ও শ্রীহীন। দুই কক্ষের দুই চকিতে তোষকের পরিবর্তে কাঁথা বিছানো। তার উপরে সদ্য কিনে আনা স্বল্পমূল্যের দুটো চাদর। কাঁথার জীর্ণতা ঢাকার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিলো চাদরের স্বল্প দৈর্ঘ্য। চকির দুই প্রান্তে অনাবৃত কাঁথার অংশ আমার নজর এড়ালোনা।
ক্রমে নতুন বউয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠলো এবং ও বাসায় গেলেই মনের সুখে শিউলি কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে যেতাম। কখনো নতুন বউ সযতনে আমার জন্য মালা গেঁথে রাখতো। এমনি করে ঋতুচক্রে হেমন্ত-শীত পেরিয়ে আবার এলো শরতের শেফালি-সৌরভ। আমিও তখন চতুর্থ শ্রেণীতে উঠে পড়েছি। শুধু নতুন বউয়ের সঙ্গে গল্প-গুজব আর শিউলি তলার লোভে সময়ের আগেই ছুটে যেতাম স্কুলে।
একদিন নতুন বউ বললো, তার বমি-বমি লাগছে।আমার হাতে একটাকার একটা নোট ধরিয়ে বললো, তার জন্য একটু চালতার আচার নিয়ে আসতে।
নতুন বউয়ের এই আবদার আমার কাছে ঠিক শ্রাবণের বর্ষণবাণী। প্রিয় মানুষের জন্য কিছু করার এ আনন্দ কোনো অবস্থাতেই হাতছাড়া করা যায়না। এরপর থেকে আচারের স্বাদ নেওয়ার সঙ্গী হয়ে গেলাম আমরা দুই অসম বয়সী নারী।
কিছুদিন পরে আবিষ্কার করলাম, নতুন বউয়ের দেহের মধ্যভাগ ক্রমান্বয়ে ঊর্ধে উন্মীলিত হচ্ছে। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো, প্রাণের ভিতরে আরেকটি প্রাণ বেড়ে উঠছে। সময়ে আজ আমি এই দুই জীবনের মায়ার আবেশে বাঁধা পড়েছি।
তারপর একদিন আমাকে বিরহের ভাসিয়ে নতুন বউ চলে গেলো গ্রামের বাড়িতে। মুন্সীচাচা জানালেন, নতুন অতিথির সংসারে আগমন ঘটলেই আবার নতুন বউ শহরে ফিরে আসবে। আমি আশায় বুক বাঁধলাম। আগত নতুন অতিথিকে কিভাবে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলবো তার নকশা আঁকতে লাগলাম।
তারও বহুদিন পর, অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। পূজার ছুটি মাত্র শেষ হলো। যথারীতি স্কুলে গেলাম। ঢুকতেই মুন্সী চাচার সঙ্গে দেখা। আমাকে ডাকলেন।পাশে বসালেন। উনার বলার অপেক্ষা না করেই জিজ্ঞেস করলাম, ` চাচা, নতুন বউ এসেছে? বাবুটাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে? বাবুটা দেখতে কেমন হয়েছে?‘এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করলাম বটে কিন্তু মুন্সী চাচা নিরুত্তর। তার চোখ ছলছল করছে। আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, `বেটিগো! নতুন বউ আর এ দূনিয়াতে নাই। আমার সব শেষ! বাচ্চাডা পেডো লইয়াই বউমা মাটির তলে চইলা গেলো।‘
তখনো আমি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছিলামনা
মুন্সী চাচা আমাকে কি বলেছেন! তবে নতুন বউয়ের যে খারাপ কিছু হয়েছে তা বুঝে গিয়েছি।
আমি দ্রুত মুন্সী চাচাকে বললাম, `নতুন বউকে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন?‘
`মারে! ডাক্তার পামু কই? গঞ্জ থেকে বুহদূরে আমাগো গেরাম। দাই বেটি অনেক চেষ্টা করেছে বউমারে বাঁচাইতে। পারে নাই। পেডের বাচ্চাডাও
খালাশ হয় নাই। মাইনষে কয়, কিয়ামত পর্যন্ত বউমার এই পেড চেঁচাইতে অইবো।‘
নতুন বউ আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা। ভেতর থেকে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠলো। বুকটা মোচড়িয়ে কেবল ধড়ফড় করছে। বাকহারা আমি থরোথরো কাঁপছি।
অসংখ্য মেঘ-গর্জন প্রান্তর ডিঙিয়ে আমার চোখের দিকে ধেয়ে আসছে। আর আমি তখন নতুন বউকে হারানোর অবর্ণনীয় কষ্টে কঠিন হতাশার চক্ররেখায় নিষ্পিষ্ট হয়ে চলেছি।
শিউলির সঙ্গে আমার তেমন সখ্য নেই
পারিজাতিকা কবে যে আমাদের শিউলি ফুল হয়ে উঠলো, সে উপাখ্যানের বিন্দু বিসর্গ জানা নেই আমার। শিউলির সঙ্গেও নেই তেমন সখ্য। শরতের আত্মভোলা দিনপঞ্জিকায় ধুপ ধুনো আর মন্ত্রজপা সন্ধ্যেবেলায় হররোজ ফুটে ভোরের কবিতা লেখার খাতায় ঝরে যায় এ ফুল। কোনও কাকডাকা ভোরে শিউলি কুড়োতে গিয়েছি বলে মনে পড়েনা। আরও অনেকের মতো মায়ের বকুনি খেয়েও জ্বলে ওঠা শ্বাসপ্রশ্বাসে আসি আসি শীতের হিম আর শিউলির সুবাস জড়িয়ে মালা গাঁথা হয়নি কখনো। হয়নি দেয়া নৈবেদ্য, 'আমার ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন'।
আপিসের দেয়ালে পাশের বাড়ির উঠোন থেকে ঝুঁকে এসে পড়েছিলো শিউলির প্রশাখা। তাতে প্রতি আশ্বিনে ঝাঁক বেঁধে ফুলেরা ফুটে ঝরে পড়তো এপাশের নির্মম কংক্রিটের পোর্চে। চব্বিশ ইঞ্চি চাকার তলে পিষে যেতো সেই ফুল, কিংবা অফিসগামী কণ্যার শশব্যস্ত স্টিলেটোর খোঁচায় প্রাণ চলে যেতো ঝরে যাওয়া পারিজাতিকার। যতই ভালোবেসে ফুটুক, বিদীর্ণ হয়ে শিশিরের সঙ্গে আত্মাহুতিই যে তার নিয়তি।
চিনিনা, জানিনা, দূর থেকে তার ঝরে যাওয়া আর ক্ষয়ে যাওয়াই যে পুরো স্মৃতি জুড়ে, এই প্রায় চল্লিশে এসে সেই পারিজাতিকাই হয়ে ওঠে গহনরাতের একান্ত আপন। সে আসে স্বপ্নপুরুষের হাতে চেপে, থরথর কাঁপনে, বেসামাল হৃৎপিণ্ডের তুমুল শোরগোলে, বাষ্প-ওঠা শ্বাসরুদ্ধকর সময়ে। সেই পুরুষের হাতে মথিত হয় পারিজাতিকার কমলা বৃন্ত, ঠোঁটপালিশ হয়ে ঝরে পড়বে বলে কারও ওষ্ঠে। অধরে যার সমাধি আসন্ন অথচ তাতেই যেন তার নির্ভানা, সেই আবীর ছড়ানো রূপান্তরেই তার অসফল প্রেমের মধুরেণ পরিণতি। ভালোবাসাহীন নির্মম শহরে এই নাগরিক নারীর মুক্তিও তাই পারিজাতিকার লাজে রাঙা হয়ে, প্রার্থিত পুরুষের ছায়াশরীরী আপাতঃ শক্ত, কোমল বুকের মাঝে।
ছবি: গুগল



রাগের আগুন
4 Dec 2025
325 বার পড়া হয়েছে

ইতিহাস লেখকের দায়
20 Nov 2025
565 বার পড়া হয়েছে

বাঙালির ছিদ্রান্বেষণ
13 Nov 2025
705 বার পড়া হয়েছে

রোদে লেপ বলে, শীত…
6 Nov 2025
1880 বার পড়া হয়েছে

গোপন গল্প...
30 Oct 2025
1700 বার পড়া হয়েছে

কিছু মায়া রয়ে গেল…
16 Oct 2025
1345 বার পড়া হয়েছে

শীত চায়…
2 Oct 2025
885 বার পড়া হয়েছে

লিখছি তোমাকে শরৎকাল...
26 Sept 2025
2380 বার পড়া হয়েছে

আমি ঝড়ের কাছে…
18 Sept 2025
3495 বার পড়া হয়েছে

ইঁদুর, ইঁদুর…
30 Jan 2025
7135 বার পড়া হয়েছে

হাঁটতে হাঁটতে…
23 Jan 2025
5880 বার পড়া হয়েছে

এই গিটারটা বন্দুক হয়ে যেতে পারে...
16 Jan 2025
6490 বার পড়া হয়েছে

পুরুষ নেই...
9 Jan 2025
5135 বার পড়া হয়েছে

শীতকাল ভালোবেসে…
2 Jan 2025
4795 বার পড়া হয়েছে

এত লোক জীবনের বলী…
19 Dec 2024
4520 বার পড়া হয়েছে

চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস…
12 Dec 2024
2745 বার পড়া হয়েছে

জয়া’র জয়
5 Dec 2024
3775 বার পড়া হয়েছে

দু‘শ সেকেন্ডের সেই টেলিফোন কল
28 Nov 2024
3790 বার পড়া হয়েছে

কাফকার আঁকাজোঁকা
21 Nov 2024
2995 বার পড়া হয়েছে

স্বৈরাচার স্বৈরাচার…
14 Nov 2024
7780 বার পড়া হয়েছে

ডার্ক ট্যুরিজম
7 Nov 2024
7925 বার পড়া হয়েছে

ফেরা…
31 Oct 2024
3500 বার পড়া হয়েছে

অনুজ্জ্বল বিষের পাত্র
24 Oct 2024
3195 বার পড়া হয়েছে

ঋত্বিকের সুচিত্রা সেন
17 Oct 2024
2385 বার পড়া হয়েছে

হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান
10 Oct 2024
3335 বার পড়া হয়েছে

গোয়েন্দা কাহিনি এখন…
1 Oct 2024
2730 বার পড়া হয়েছে

ঝড়ের কেন্দ্র
19 Sept 2024
2650 বার পড়া হয়েছে

তখন হাসপাতালে…
11 Jul 2024
4795 বার পড়া হয়েছে

ছাতার মাথা ...
4 Jul 2024
5070 বার পড়া হয়েছে

আমি, তুমি ও ম্যাকবেথ…
27 Jun 2024
3985 বার পড়া হয়েছে

কফির কাপে ঝড়…
13 Jun 2024
3100 বার পড়া হয়েছে

চশমার কাচে সমুদ্র
6 Jun 2024
2735 বার পড়া হয়েছে

মেরিলিন মনরো আর রুবি রায়
30 May 2024
3610 বার পড়া হয়েছে

খুন জখমের গল্পে নারীরা...
9 May 2024
3180 বার পড়া হয়েছে

পথের মানুষ…
3 May 2024
3180 বার পড়া হয়েছে

দহন
25 Apr 2024
3925 বার পড়া হয়েছে

আয়না অনেক গল্প জানে…
10 Apr 2024
5450 বার পড়া হয়েছে

গোলাপের নিচে...
28 Mar 2024
4530 বার পড়া হয়েছে

মুখে তার...
21 Mar 2024
2575 বার পড়া হয়েছে

লেনিনের যতো ভালোবাসার চিঠি…
14 Mar 2024
3530 বার পড়া হয়েছে

আমাদের ছুটি ছুটি ছুটি...
29 Feb 2024
5865 বার পড়া হয়েছে

যদি নির্বাসন দাও
22 Feb 2024
3425 বার পড়া হয়েছে

শীত চলে গেছে পরশু...
8 Feb 2024
3475 বার পড়া হয়েছে

মনে পড়লো তোমাকে বইমেলা...
1 Feb 2024
4010 বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব নির্জন বারান্দায়...
25 Jan 2024
3165 বার পড়া হয়েছে

ঋত্ত্বিক ঘটকের বউ…
11 Jan 2024
3705 বার পড়া হয়েছে

সুচিত্রা সেনের সানগ্লাস
4 Jan 2024
5765 বার পড়া হয়েছে

স্মৃতি পিপীলিকা…
28 Dec 2023
4620 বার পড়া হয়েছে

হাতে বোনা সোয়েটার আর…
21 Dec 2023
6070 বার পড়া হয়েছে

দেয়ালে উঠছে, দেয়াল ভাঙছে
13 Dec 2023
5380 বার পড়া হয়েছে

শীত এক মায়া
7 Dec 2023
5795 বার পড়া হয়েছে

উঁকি...
30 Nov 2023
4030 বার পড়া হয়েছে

দেশলাই জ্বালতেই…
23 Nov 2023
10090 বার পড়া হয়েছে

তোমার ও আঁখির তারায়...
9 Nov 2023
5445 বার পড়া হয়েছে

পাগল ...
26 Oct 2023
5335 বার পড়া হয়েছে

শীতের খোঁজে...
19 Oct 2023
5665 বার পড়া হয়েছে

বৃষ্টিতে থাকলো নির্জন সাইকেল...
5 Oct 2023
6765 বার পড়া হয়েছে

নারী ভয়ংকর
28 Sept 2023
10185 বার পড়া হয়েছে

তবুও সন্ধ্যা আসে…
14 Sept 2023
7140 বার পড়া হয়েছে

হিটলারের নেশা
7 Sept 2023
9915 বার পড়া হয়েছে

ক্লাপারবোর্ড
31 Aug 2023
13190 বার পড়া হয়েছে

মোনালিসার গোয়েন্দারা
23 Aug 2023
3365 বার পড়া হয়েছে
.png )
খেলা যখন…
15 Jun 2023
3190 বার পড়া হয়েছে

ইতি, চায়ের দোকান...
1 Jun 2023
7615 বার পড়া হয়েছে
(1).png )
লেখকদের ঘরবাড়ি
10 May 2023
3255 বার পড়া হয়েছে

মেয়েরা প্রেমের চিঠি লেখে না
20 Apr 2023
7240 বার পড়া হয়েছে

বৈশাখে আঞ্চলিক খাবার..
13 Apr 2023
2660 বার পড়া হয়েছে

স্ট্রিট ফাইটিং ইয়ার্স...
6 Mar 2023
2815 বার পড়া হয়েছে

হাওয়ায় লেগেছে শরতের গন্ধ।
4 Jan 2023
3130 বার পড়া হয়েছে

রাজনৈতিক ফুটবল
4 Jan 2023
3610 বার পড়া হয়েছে

হাসপাতাল থেকে…
23 Jun 2022
2425 বার পড়া হয়েছে

একলা মাদুর…
16 Jun 2022
2015 বার পড়া হয়েছে

পালাতে হয়েছিলো মোনালিসাকে
7 Jan 2021
3295 বার পড়া হয়েছে

হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান
29 Oct 2020
3370 বার পড়া হয়েছে

গডফাদার ৫২ বছরে
22 Oct 2020
2645 বার পড়া হয়েছে

দানব অথবা দানবীয়...
8 Oct 2020
2485 বার পড়া হয়েছে

দুই শীতের মাঝখানে
1 Oct 2020
2685 বার পড়া হয়েছে

আরেক বিভূতিভূষণ...
17 Sept 2020
1995 বার পড়া হয়েছে

আয়নায় একা উত্তম...
3 Sept 2020
2180 বার পড়া হয়েছে

দ্বিতীয় পথের পাঁচালী
27 Aug 2020
2795 বার পড়া হয়েছে

ভালো না-বাসার কাল
13 Aug 2020
1925 বার পড়া হয়েছে

যতদূর থাকো ফের দেখা হবে
5 Aug 2020
2120 বার পড়া হয়েছে

বিপজ্জনক মানিক
2 Jul 2020
2180 বার পড়া হয়েছে

নিখোঁজ হয়েছিলেন আগাথা ক্রিস্টিও
23 May 2020
1915 বার পড়া হয়েছে

আমাকে মনে পড়ে?
14 Apr 2020
1815 বার পড়া হয়েছে

আমি ইতালী থেকে লিখছি...
29 Mar 2020
2000 বার পড়া হয়েছে

পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন...
12 Mar 2020
2665 বার পড়া হয়েছে

মুখোমুখি বসিবার...
27 Feb 2020
2065 বার পড়া হয়েছে

শীতে ভালোবাসার পদ্ধতি
6 Feb 2020
4275 বার পড়া হয়েছে

হিব্রু ভাষায় কাফকার চিঠি
30 Jan 2020
2060 বার পড়া হয়েছে

ইভা ব্রাউনের অন্তরাল
23 Jan 2020
2450 বার পড়া হয়েছে

শীতের স্মৃতি
9 Jan 2020
2215 বার পড়া হয়েছে

কেক কুকিজের গন্ধে ...
24 Dec 2019
2395 বার পড়া হয়েছে

জুতার ভেতরে...
19 Dec 2019
1900 বার পড়া হয়েছে

খুন হয়েছিলেন আলবেয়ার কামু
12 Dec 2019
2865 বার পড়া হয়েছে

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরিবাকরি
5 Dec 2019
1950 বার পড়া হয়েছে

পৃথিবী বিখ্যাত পোস্টার যত
28 Nov 2019
2970 বার পড়া হয়েছে

পেঁয়াজের পিঁয়াজী
21 Nov 2019
2280 বার পড়া হয়েছে

সিনেমায় দু’চাকার ঝড়
14 Nov 2019
1645 বার পড়া হয়েছে

শেষদৃশ্যে জুলিয়াস ফুচিক
7 Nov 2019
2775 বার পড়া হয়েছে

অভিমানে কি দেশ ছাড়বেন সাকিব
31 Oct 2019
1865 বার পড়া হয়েছে

ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবেরা
17 Oct 2019
3110 বার পড়া হয়েছে

স্বপ্ন, দু:স্বপ্নের পুরুষ
10 Oct 2019
1900 বার পড়া হয়েছে

স্মৃতির রুমালে শিউলি...
3 Oct 2019
6425 বার পড়া হয়েছে

নির্ঘুম শহরে...
26 Sept 2019
2135 বার পড়া হয়েছে

ধূসর পাণ্ডলিপি
19 Sept 2019
2115 বার পড়া হয়েছে

এক্সপোজড...
12 Sept 2019
2165 বার পড়া হয়েছে

নারী ও শাড়ি ...
5 Sept 2019
2685 বার পড়া হয়েছে

পথের পাঁচালী’র ৬৪
29 Aug 2019
2235 বার পড়া হয়েছে

প্রেম আর যৌনতায় তারা
22 Aug 2019
2125 বার পড়া হয়েছে

যৌনতায়, বিদ্রোহে তাঁরা...
1 Aug 2019
2115 বার পড়া হয়েছে

খুনের সময়ে...
25 Jul 2019
2240 বার পড়া হয়েছে

পথ...
11 Jul 2019
1735 বার পড়া হয়েছে

যে কোন দলই ছিটকে পড়তে পারে
27 Jun 2019
2325 বার পড়া হয়েছে

বৃষ্টিকাল কবে আসবে নন্দিনী
20 Jun 2019
2935 বার পড়া হয়েছে

স্নানঘরের গান...
2 Jun 2019
2125 বার পড়া হয়েছে

আমার কোনো ভয় নেই তো...
23 May 2019
2050 বার পড়া হয়েছে

রেখার ফারজানা...
2 May 2019
2020 বার পড়া হয়েছে

হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী
25 Apr 2019
4055 বার পড়া হয়েছে

নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে...
18 Apr 2019
2040 বার পড়া হয়েছে

আপুদের পথের ভাই ...
4 Apr 2019
2400 বার পড়া হয়েছে

আমাদের প্রাণের বাংলা
28 Mar 2019
2360 বার পড়া হয়েছে

ক্যানভাসে ঝরে পড়া অসুখ
21 Mar 2019
1895 বার পড়া হয়েছে

শেষদৃশ্যে লোরকা
14 Mar 2019
2210 বার পড়া হয়েছে

নেশার ঘোরে লেখক
7 Mar 2019
3525 বার পড়া হয়েছে

একটি বইয়ের গল্পের সঙ্গে...
1 Mar 2019
2325 বার পড়া হয়েছে

বই করেছি চুরি...
21 Feb 2019
4470 বার পড়া হয়েছে

সকালবেলার গুলজার
7 Feb 2019
2230 বার পড়া হয়েছে

বইমেলায় প্রেম...
31 Jan 2019
1745 বার পড়া হয়েছে

অ্যান্ড এ স্পাই...
24 Jan 2019
2700 বার পড়া হয়েছে

আপনার সন্তান কি নিরাপদ
10 Jan 2019
1640 বার পড়া হয়েছে

পুষ্পহীন যাত্রাশেষে মৃণাল সেন
3 Jan 2019
2070 বার পড়া হয়েছে

নিষিদ্ধ যতো বই আর সিনেমা
13 Dec 2018
3405 বার পড়া হয়েছে

অসুখী মানুষ
6 Dec 2018
2125 বার পড়া হয়েছে

দাম্পত্য সম্পর্কে #MeToo
29 Nov 2018
2430 বার পড়া হয়েছে

দুই নম্বরি...
22 Nov 2018
2300 বার পড়া হয়েছে

অশ্লীল গল্প
8 Nov 2018
7695 বার পড়া হয়েছে

ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে
1 Nov 2018
3655 বার পড়া হয়েছে

লাভ রানস ব্লাইন্ড
25 Oct 2018
2275 বার পড়া হয়েছে

শেষ দৃশ্যে মান্টো
18 Oct 2018
2420 বার পড়া হয়েছে

আমাদের সেই বারান্দায়...
11 Oct 2018
1850 বার পড়া হয়েছে

শীতকাল কবে আসবে সুপর্না?
4 Oct 2018
2525 বার পড়া হয়েছে

কোমায় আমাদের সিনেমা
20 Sept 2018
1860 বার পড়া হয়েছে

আজো বিভূতিভূষণ...
13 Sept 2018
2050 বার পড়া হয়েছে

ভীষণ অচেনা ও একা...
6 Sept 2018
1890 বার পড়া হয়েছে

গোপন কথা...
9 Aug 2018
2055 বার পড়া হয়েছে

খোলা চিঠি ও চুমু
26 Jul 2018
2700 বার পড়া হয়েছে

ফ্রিডা কাহলো এক সূর্যমুখী ফুল
19 Jul 2018
2055 বার পড়া হয়েছে

ঝিনুক নীরবে সহো...
5 Jul 2018
2275 বার পড়া হয়েছে

ফুটবল- রঙ্গ ভরা বঙ্গে
28 Jun 2018
1950 বার পড়া হয়েছে

জানালা কী জানালো...
11 Jun 2018
3870 বার পড়া হয়েছে

বিষয় বাসনা
19 Apr 2018
2635 বার পড়া হয়েছে

মনের রঙ...
15 Feb 2018
2100 বার পড়া হয়েছে

দাড়ি কান্ড...
18 Jan 2018
3305 বার পড়া হয়েছে

চোর, চোর...
28 Dec 2017
5070 বার পড়া হয়েছে

বাঙালির আহার...আহা রে...
21 Dec 2017
4095 বার পড়া হয়েছে

চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে...
7 Dec 2017
3910 বার পড়া হয়েছে

ব্রুটাস তুমিও!
23 Nov 2017
2555 বার পড়া হয়েছে

কি বললেন সরয়ার ফারুকী...
2 Nov 2017
2365 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199