মেরিলিন মনরো আর রুবি রায়

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 30 May 2024

2490 বার পড়া হয়েছে

Shoes

মেরিলিন মনরো কী  রাষ্ট্রনায়ক, লেখক আর কোটি ভক্তের রুবি রায় ছিলেন? অভিনেত্রী মনরোর নামের পাশে অসাধারণ, সুনিপুন বিশেষণগুলো সহজেই বসে যায়। কিন্তু ব্যক্তি মনরো? এক রহস্যময়ী। যাকে কাছে চেয়েছে হাজার পুরুষ, যার ভালোবাসা চেয়ে অস্থির হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। ভালোবেসে যাকে বিয়ে করে আবারও ছিটকে গেছেন প্রখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলার। এসিডের মতো ছিলো তার উপস্থিতি। পুড়িয়ে দিয়েছেন পুরুষের হৃদয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে নিজেও কি পুড়ে যাননি মনরো? পুড়েছিলেন বলেই ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট নিজের বাড়িতে নিজের জীবন নিজেই নিভিয়ে  দিলেন।এ বছর মনরোর মৃত্যুর ষাট বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু তাকে ভোলা যায়নি। আজও পত্রিকায় শিরোনাম হন, তার আত্মজীবনী নিয়ে তোলাপাড় হয়। গবেষণা হয়, তার জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়। তাহলে কি মেরিলিন মনরো ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ গানের রুবি রায় যাকে মনে রেখেছে সময়?

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো মেরিলিন মনরো আর রুবি রায়কে নিয়ে  ‘মনরো আর রুবি রায়’

‘মনে পড়ে রুবি রায়’ গানটিও পঞ্চাশ পেরুলো। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পেয়ে রাহুল দেব বর্মণের সুরারোপিত এবং গাওয়া এই গান বাঙালিকে যে আবেগ আর ভালোবাসার নৌকায় তুলে যাত্রা শুরু করেছিলো সে যাত্রা আজও থামেনি। পেছনে ফেলে আসা কয়েক দশকে বাঙালি শ্রোতার কাছে গানটি পুরনো হয়নি। শ্রোতারা খুঁজেছেন রুবি রায়ের অস্তিত্ব। মেরিলিন মনরো তো সিনেমা পর্দা আর বাস্তব জীবন-দুই জায়গাতেই হৃদকম্পন হয়ে ছিলেন। কিন্তু রুবি রায়? এক গানের অধরা চরিত্র। বাংলা গানে প্রথম ব্যক্তির নাম ব্যবহার করেছিলেন গীতিকার শচীন ভৌমিক। ম্যাজিকটা হয়েছিলো দারুণ। মন্ত্রমুগ্ধ লক্ষ লক্ষ শ্রোতা।সেই মুগ্ধতা আজও কাটেনি। শেষ হয়নি রুবি রায়কে খোঁজা।

গানটা লিখেছিলেন শচীন ভৌমিক। ছয়ের দশক থেকে টানা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে যিনি ছিলেন বলিউডের অসংখ্য সুপারহিট ছবির লেখক-চিত্রনাট্যকার। এই শচীন ভৌমিকের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিলো রাহুল দেববর্মণের। ছয়ের দশকের মাঝামাঝি মুম্বাইয়ের গানের জগতে শুরু হয়েছে আর.ডি বর্মনের যুগ। একের পর এক হিট গান দিয়ে চলেছেন তিনি শ্রোতাদের। আর.ডি’র ইচ্ছে ছিলো, পূজায় বাংলা গানের একটা অ্যালবাম করবেন। শচীন ভৌমিককে অনুরোধ করেছিলেন একটা গান লিখে দিতে। একাধিক ছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজে ব্যস্ত থাকায় শচীন ভৌমিক বছরখানেক সময় পাননি বন্ধুর অনুরোধ রাখার। সময় পেলেন ১৯৬৯ সালে। লিখলেন ‘মনে পড়ে রুবি রায়’। সুর দিলেন এবং গাইলেন রাহুল দেববর্মণ স্বয়ং। বাকিটা ইতিহাস।

শচীন ভৌমিক

‘রুবি রায়’-এর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার পর গীতিকার শচীন ভৌমিককে একাধিক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, রুবি রায়কে নিয়ে। সত্যিই কী রুবি রায় কোথাও বেঁচে আছেন? শচীন জানিয়েছিলেন, তাঁর নিজের জীবনের ব্যর্থ কিশোর প্রেমের স্মৃতিকে মাথায় রেখেই এই গানের জন্ম। যাঁকে ভালবেসেছিলেন কিশোরবেলায়, এবং প্রতিদানে পেয়েছিলেন প্রত্যাখ্যান, তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনতে চাননি। শুধু নামটা বদলে করে দিয়েছিলেন ‘রুবি রায়’।

নতুন বাড়ি কিনেছিলেন মেরিলিন মনরো। কিন্তু ততদিনে তৃতীয় স্বামী নাট্যকার আর্থার মিলারকে বিদায় বলেছেন।জন এফ কেনেডির সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে যাওয়ার গল্পগাছাও তখন আকাশে উড়ছে প্রবল। তারপর হঠাৎ জীবনের ওপর নামিয়ে আনেন যতিচিহ্ন। সে পর্দায় বুকভাঙা কোনো মৃত্যু দৃশ্য নয়। একেবারে কঠিন বাস্তব।মৃত মেরিলিন মনরো। রহস্যে ঘেরা সেই মৃত্যু। সবাইকে আরেকবার চমকে দিয়ে নিজেই পৃথিবীর হাত ছাড়লেন মনরো। কিন্তু কেনো আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি? এই প্রশ্নটার সমাধান আজও হয়নি। শুধু তার লাল নোট বইকে ঘিরে রহস্য আরও ঘণীভূত হয়েছে। কী লেখা ছিলো সেই নোট বইতে? সেই টোকা খাতাটা আর খুঁজে পাওয়া যায়ানা কেনো!

শচীন ভৌমিক ও রাহুল দেববর্মণ

মনরো তো নিজেই নিজেকে নির্বাপিত করলেন।কিন্তু গানের রুবি রায় কোথায় গেলেন? সেই নারী আহত করেছিলেন শচীন ভৌমিককে কিশোর বয়সে। তারপর আর দু‘জনার দেখা হয়েছিলো কি না কেউ জানতে পারেনি। মনের কৌতুহলে শ্রোতা যতবার গানটা শুনেছেন নিজের মনেই এক নিজস্ব প্রতিমা দাঁড় করিয়েছেন। মনের পর্দায় যেন একটা সিনেমা অথবা নাটকের খণ্ড দৃশ্য চলছে। রুবি রায় চলে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে আর একটি ছেলে সকাল বিকাল তাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস পুঁজি করে।এই গানের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকা একজন রুবি রায় বাঙালির প্রণয় ভাবনার ভিতরে একই বয়সে, একই অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আজও। রইলো বুকের ভিতরে কেমন এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে। কিন্তু মেরিলিন মনরোর জন্য কী থাকলো কোটি ভক্তের হৃদয়ে? কী জমা রইলো তার গোপন অথবা প্রকাশ্যের প্রেমিকদের অন্তরমহলে? অফুরান মেরিলিন মনরোর আবেদন। তাকে ঘিরে আজও পৃথিবীর মানুষ রহস্য হাতড়ে ফেরে। তার ছবিকে পুঁজি করে পণ্যের বিজ্ঞাপন হয়। তার নামে তৈরি হয় ব্র্যান্ড। কিন্তু নিজস্ব নির্জনে মনরো রয়ে যান একা। অস্থিরতা, প্রেম আর জীবনের স্বপ্নের মাঝে নিঃসঙ্গ এক নারী। রুবি রায়ও কী তাই? এই পৃথিবীতে একটা গান যাকে অমরত্ব দিয়েছে সেই চরিত্রের অন্তরালের নারীটি কেমন আছেন এখন? তিনিও কি পৃথিবীকে বিদায় বলেছেন মনরোর মতো? নাকি বেঁচে আছেন পৃথিবীর পথে আরেক বনলতা সেন হয়ে? ব্যর্থ প্রেমের আবহমান মনকেমন গেঁথে আছে এই গানের ছত্রে ছত্রে… ‘দীপ-জ্বলা সন্ধ্যায়, হৃদয়ের জানালায়, কান্নার খাঁচা খুলে রেখেছি/ পাখি সে তো আসেনি, তুমি ভালবাসোনি, স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি… মনে পড়ে রুবি রায়…’ বাংলা গানে রুবি রায় কিংবদন্তী হয়ে গেছে। ‘রুবি রায়’ প্রকাশ পাওয়ার চার বছর পর, ১৯৭৩-এ, সঞ্জীব কুমার-জয়া ভাদুড়ী অভিনীত ‘অনামিকা’ ছবিতে একই সুরে মজরুহ সুলতানপুরির কথায় রাহুল দেববর্মণ তৈরি করেছিলেন ‘মেরি ভিগি ভিগি সি…’। ছবি মুক্তি পাওয়া মাত্রই গান সুপারহিট হয়েছিলো। অনেকেই মনে করেন,  ‘মেরি ভিগি ভিগি সি’-র বাংলা বোধহয় ‘রুবি রায়’। কিন্তু রুবি রায় প্রেমের অনল হয়ে আগে প্রকাশিত হয়েছিলো।

একটি গান, কয়েকটি সিনেমা, বাস্তব আর কল্পনার মিশেল দেয়া দুই নারী চরিত্র। অদ্ভুত ভাবে পৃথিবীতে ভালোবাসাকে উসকে দিয়ে বেঁচে রইলেন আজও।

তথ্যসূত্রঃ রায়োগ্রাফি, আই.ই বাংলা (কলকাতা)

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199