গডফাদার ৫২ বছরে

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 22 Oct 2020

1955 বার পড়া হয়েছে

Shoes

বললে কেউ বিশ্বাস করবে দ্য গডফাদার উপন্যাস লেখার আগে মারিয়ো পুজোর ব্যাংক আর আত্মীয়স্বজন মিলে বাজারে দেনা ছিলো কুড়ি হাজার ডলার। দেনা পরিশোধের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারতেন না এই লেখক। অথচ গডফাদার প্রকাশের পর প্রথম দু’বছরে ৯০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিলো, টানা ৬৭ সপ্তাহ ধরে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার লিস্ট’-এ ছিলো বইটি। ১৯৬৮ সালের জুলাই মাসে উপন্যাসটি লেখা শেষ করেন মারিও পুজো। ১৯৬৯ সালে বইটি প্রকাশিত হবার পর এর গ্রন্থস্বত্ত্ব নিয়ে অন্য প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে দরাদরিতে দাম উঠেছিলো ৪ লক্ষ ১০ হাজার ডলার। সেই বই ৫১ বছর অতিক্রম করলো। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে গেলো ১৫ অক্টোবর এই উপন্যাসের প্রয়াত লেখকের বয়স হলো ১০০ বছর।

মারিও পুজোর পৃথিবী কাঁপানো সেই উপন্যাস নিয়ে এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো ‘গডফাদার ৫২’

মারিয়ো পুজো নিউইয়র্ক শহরের মানুষ। ১৯২০ সালের ১৫ আক্টোবর এই শহরে তাঁর জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মারিও পুজো ছোটখাট চাকরি করতেন বিমান বাহিনীতে। কিন্তু নিজের পেশার থেকে একেবারেই বিপরীত একটা শখ ছিলো তাঁর। পুজো গল্প লিখতে ভালোবাসতেন। কাজের ফাঁকে সময় পেলে টুকটাক লেখালেখি যাকে বলে। কিন্তু এই লেখা নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন পুজো। শেষে সেই স্বপ্ন সফল হয়ে গেলো একদিন। ১৯৫০-এ ‘অ্যামেরিকান ভ্যানগার্ড’-নামে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো তাঁর লেখা প্রথম ছোটগল্প ‘দ্য লাস্ট ক্রিস্টমাস’। পত্রিকায় গল্প ছাপিয়ে মারিও পুজো লেখার ব্যাপারে আরও আশাবাদী হয়ে উঠলেন। পরের পাঁচ বছরের মধ্যে লিখে ফেললেন একটি উপন্যাস ‘দ্য ডার্ক অ্যারেনা’। আর সেই উপন্যাস বই হয়ে প্রকাশ পেলো। কিন্তু লিখে তো পেট চালানো কঠিন। সংসার পরিচালনা করা আরও শক্ত কাজ।পুজো তখন বিবাহিত। পাঁচ পাঁচটি সন্তানের বাবা। বিমান বাহিনীর সামান্য আয়ে সংসার চালানো তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছিলো। তখন১৯৬০ সাল। ‘মেন্‌স পাল্প ম্যাগাজ়িন’ সম্পাদনা করতেন ব্রুস জে ফ্রেডম্যান নামে এক ভদ্রলোক। পুজ়োকে ডেকে সহকারী-সম্পাদকের চাকরি দিলেন। জানালেন, পত্রিকার সম্পাদনার কাজ করলেই হবে না। পাশাপাশি বললেন, পুজোর বিশ্বযুদ্ধ দেখার অভিজ্ঞতা, আর অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনিও লিখতে হবে। তবে ভদ্রলোক শর্ত জুড়ে দিলেন, লেখালেখির কাজটা পুজোকে করতে হবে ছদ্মনামে। তখন ওই প্রস্তাবটাই ছিলো পুজোর কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। রাজি হয়ে হয়ে গেলেন তিনি। মারিয়ো ক্লেরি নামে শুরু হলো তাঁর লেখালেখি।

বছর পাঁচ সেই পত্রিকা অফিসে কেটে গেলো। প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য ফরচুনেট পিলগ্রিম’। কিন্তুউপন্যাসটি বাজারে পাত্তা পেলো না।বই লিখে তেমন কোনো রোজগারও হলো না।পুজোর তখন ব্যাংক আর আত্নীয়স্বজনদের কাছে অনেক টাকা দেনা। কুড়ি হাজার ডলার ধার শোধ করার ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন না তিনি। তাঁর অবস্থা দেখে সম্পাদক ফ্রেডম্যানই একদিন পরামর্শ দিলেন মাফিয়াদের নিয়ে উপন্যাস লিখতে। তখন ওই ধরণের কাহিনির চাহিদা ছিলো পাঠকদের কাছে। শুরু হলো মারিও পুজোর নতুন চেষ্টা।

পুজো তার এক লেখক বন্ধুকে দ্বিতীয় উপন্যাসটি উপহার দিয়েছিলেন। বন্ধুটি উপন্যাস পাঠ করে মুগ্ধ। তিনিই পুজোকে বলেছিলেন, লেখা চালিয়ে যেতে। সেই হতাশার মধ্যে বন্ধুর কথায় উৎসাহ ফিরে পান পুজো। সঙ্গে রাখা নতুন উপন্যাসের খসড়া দশটি পৃষ্ঠা শুনিয়ে ফেলেন তাকে। শুনে চমকে উঠেছিলেন বন্ধু। পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেছিলেন,‘‘এরকম লেখা লিখে ফেলে রেখেছো! আমি এখনই তোমাকে কথা বলিয়ে দিচ্ছি ‘জি পি পাটনামস সন্স’ প্রকাশনার সঙ্গে। ওরা তোমার বই প্রকাশ করবে।’’কিছু দিনের মধ্যেই ‘জি পি পাটনাম’স সন্স’-এর সম্পাদকদের সঙ্গে পুজ়ো আলোচনায় বসলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সম্পাদকরা মন দিয়ে তাঁর মাফিয়ার গল্প শুনলেন। পুজ়োর গল্প শেষ হতে সবাই একবাক্যে পুজোকে লেখা দ্রুত শেষ করার জন্য বলে দিলেন। আর তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন পারিশ্রমিকের একটা বড় অংক। সেটা ছিলো ৫,০০০ ডলার! টোকাটা কিন্তু সেদিন পুজো খরচ করতে পারেননি। তাঁর মনে শংকা ছিলো যদি উপন্যাসটা লিখে শেষ করতে না-পারেন তাহলে তো টাকাটা ফেরত দিতে হবে প্রকাশককে। একটা সময় সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পুজ়ো মন দিলেন লেখায়। শুরু হলো মাফিয়াদের নিয়ে উপন্যাস লেখার কাজ। টানা তিন বছর ধরে দিন-রাত জেগে ১৯৬৮ সালের জুলাই মাসে পুজো শেষ করলেন তাঁর উপন্যাস, নাম দিলেন—‘দ্য গডফাদার’।

উপন্যাস তো লেখা হলো ১৯৬৮ সালে। কিন্তু লেখককের কাছ থেকে স্বত্ত্ব কেনা নিয়ে অন্য প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কিছু দরাদরি হয়। গ্রন্থস্বত্বের দাম উঠেছিলো প্রায় চার লক্ষ দশ হাজার ডলার। আনন্দে আত্মহারা পুজ়ো ম্যাগাজ়িন-অফিসের চাকরি ছেড়ে দেন। ইটালীয়-আমেরিকান সাহিত্যিক ও চিত্রনাট্যকার মারিয়ো পুজ়ো পরে তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন— ‘গডফাদার’ উপন্যাসটি পুরোপুরি গবেষণাভিত্তিক। আমি কখনও সত্যিকারের কোনও গ্যাংস্টারের সঙ্গে দেখাও করিনি!

১৯৬৯-এর ১০ মার্চ ‘জি পি পাটনাম’স সন্স’ থেকেই ‘দ্য গডফাদার’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন এস নেল ফুজিতা। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় গডফাদার। প্রকাশের পর প্রথম দু’বছরে ৯০ লক্ষ কপি উড়ে গিয়েছিলো বইয়ের দোকান থেকে। টানা ৬৭ সপ্তাহ ধরে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার লিস্ট’-এ ছিলো এই বই।

নাটকীয় কাহিনির মুখ্য চরিত্র নিউ ইয়র্ক শহরের টির মাফিয়া ভিটো কর্লিয়নি, যিনি ডন নামে খ্যাত। দুটি মাফিয়া পরিবারের মাঝে সংঘাত, খুন আর ডনের পরিবারের ছোট ছেলে মাইকেল কর্লিওনির ধীরে ধীরে নতুন গডফাদার হিসেবে উত্থানের ভয়ংকর গল্প লিখেছিলেন পুজো তার বইতে। আর তাতেই রাতারাতি উপন্যাসটি পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে যায়। আলোচনার তালিকায় উঠে আসেন মারিয়ো পুজো।

গডফাদার উপন্যাস নিয়ে হলিউডের সিনেমা পাড়ায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা ছবি তৈরির প্রস্তাব নিয়ে আসেন পুজ়োর কাছে। পুজ়ো এই প্রস্তাবে খুব একটা অবাক হননি। উপন্যাসটি নিয়ে সিনেমা তৈরির প্রস্তাব তাঁর কাছে আগেই এসেছিলো। কিন্তু তিনি ফিল্ম রাইটস বিক্রি করতে রাজি হননি। কিন্তু ফ্রান্সিস কপোলার কথা আলাদা। কপোলা পুজোকে প্রস্তাব দেন যৌথ ভাবে চিত্রনাট্য লেখার। রাজি হয়ে যান পুজো।

গডফাদার সিনেমা হিসেবে পর্দায় আসার আগে নানান ঝামেলার মাঝেও পড়েছিলো। ভিটো কর্লিয়নির ভূমিকায় মার্লন ব্রান্ডোর কাস্টিং নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছিলো পরিচালকের। শেষে অনেক ঝামেলা অতিক্রম করে ব্রান্ডো অভিনয় করেন এই ইটালিয়ন মাফিয়া নেতার চরিত্রে। ১৯৭৩ সালেই ছবিটির জন্য ৪৫তম অ্যাকাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে নির্বাচিত হন যথাক্রমে ব্র্যান্ডো, কপোলা ও পুজ়ো। এর পর কপোলার পরিচালনায় ও পুজ়োর সঙ্গে মিলিত চিত্রনাট্য অবলম্বনে ‘দ্য গডফাদার’-এর আরও দু’টি সিকুয়েল নির্মিত হয়— ‘দ্য গডফাদার সিজ়ন টু’ (১৯৭৪) ও ‘দ্য গডফাদার সিজ়ন থ্রি’ (১৯৯০)। এই ট্রিলজি মোট ন’টি অ্যাকাডেমি পুরস্কার জিতে নেয়।

মারিও পুজো ১৯৯৯ সালের ২ জুলাই নিউইয়র্কে মারা যান।


তথ্যসূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট
ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199