রাগের আগুন

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 4 Dec 2025

295 বার পড়া হয়েছে

Shoes

রাগ-অনুরাগ বলে একটা কথা আছে। সে অবশ্য ভালোবাসার পাত্রে খানিকটা বিরাগের মিশেল।আর তাতেই নাকি ভালোবাসার ব্যারোমিটারের পারদ উর্ধমুখী হয়। কিন্তু সুকুমার রায়ের ছড়ায় আছে, ‘রেগে আগুন তেলে বেগুন’ হয়ে যাওয়ার কথা। পান থেকে চুন খসলেই কারো কারো মাথায় জ্বলে ওঠে আগুন। হিটলার রাগি মানুষ ছিলেন শোনা যায়।ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে বক্তৃতা দিয়ে একটা গোটা জাতিকে ক্ষেপিয়ে তোলার ক্ষমতা তার ছিলো নিঃসন্দেহে। রাগে কেউ একেবারে গুম হয়ে থাকেন আবার কেউ চিৎকার করে শোরগোল ফেলে দেন চারপাশে। পাড়ার সেই রাগি প্রৌঢ়া মহিলাটির কথা মনে নেই? যার চিৎকারে বাড়ির ছাদে কাক-চিল বসতে পারতো না! এত রাগ কেনো হয় মানুষের? রাগ বা ক্রোধ তো আসলে মানসিক অবস্থার একটি বিশেষ স্তর। কিন্তু রাগ সব সময়ই কি নেতিবাচক? মুখ বুজে চলা, মাথা নিচু করে সব সয়ে যাওয়া কি ভালো?

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো রাগ নিয়ে ‘রাগের আগুন’।

শিবরাম চক্রবর্তী কি রাগি মানুষ ছিলেন? সাহিত্যের পাঠক মাত্রেই এই প্রশ্নের উত্তরে মাথা নেড়ে বলতে পারেন, রসের ফোয়ারা সেই মানুষটিকে হয়তো রাগানো অসম্ভবই ছিলো। কিন্তু চারপাশের সব মানুষ কি এমন রসেবশে শিবরাম চক্রবর্তীর মতো জীবন কাটাতে পারেন? পারেন না।

ভয়, লজ্জা, বিরক্তির মতো নানা কারণেই রাগ দেখায় মানুষ। এ ছাড়াও ক্ষণে ক্ষণে রেগে যাওয়ার পিছনে থাকতে পারে অন্য কোনও কারণ। সম্পর্ক বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া মানসিক চাপও রাগের পিছনে একটি বড় কারণ। কয়েক ধরনের মানসিক অসুখও রাগ প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। অস্বাভাবিক রাগ বা ক্রোধ এক ধরণের অসুখও। চিকিৎসকরা বলেন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার নামের অসুখে ভুগলে ক্ষণে ক্ষণে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অতিরিক্ত আনন্দের আবহেও অনেক সময়ে ঘিরে ধরে রাগের অনুভূতি। ফলে খুব ভালো সময়ও মুহূর্তে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে।

অতিরিক্ত রাগ এক ধরণের অসুখ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু রাগি মানুষ মানেই যে এড়িয়ে চলা উচিত তা কিন্তু নয়। মনোবিজ্ঞান বলে, রাগি মানুষরা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। তাই তারা সহজেই নিজের মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তাদের ক্রোধপূর্ণ মনের মধ্যে একটি সরল মানুষেরও বসবাস থাকে। রাগি মানুষরা সাধারণত কম্প্রোমাইজ করতে চান না বলেই চট করে রেগে আগুন হয়ে যান।

এই রাগী, ক্ষিপ্ত মানুষদের আমাদের সামাজিক জীবনে বৈচিত্রও বলে মনে হয়। একটা একঘেয়ে সমাজে, নিস্তরঙ্গ জীবন যাপনের মধ্যে রাগিয়ে দেয়ার মতো মানুষেরও প্রয়োজন আছে। কাকে রাগিয়ে দেয়া? ক্ষমতাধরদের ক্ষিপ্ত করে তোলা। সব সমঝোতার গ্রন্থিকে ছিঁড়ে ফেলা রাগের ক্রুদ্ধ নখে। রাগ না-থাকলে তো বিদ্রোহও মাথা তোলে না সব অস্বীকার করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়।

রাগেরও সৌন্দর্য আছে অনেকেই বলেন। একদা হলিউডের বদরাগী প্রখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো মারকুটে এবং রাগী মানুষ হয়েও দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। ব্রান্ডোর জীবনীকার লিখেছেন, ছোটবেলায় বাড়ির অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই তাকে রাগী মানুষে পরিণত করেছিলো।

রাগের সৌন্দর্যের কথায় মনে হলো, এই রাগ তারুণ্যের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সমাজে চারপাশে বৈষম্য, মিথ্যা কথার ফুলঝুড়ি, প্রেমহীনতা তরুণ মনে রাগের বিষ্ফোরণ ঘটায়। বহুদিন আগে বলিউডের একটি সিনেমা ‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুসসা কিউ আতা হ্যায়’ তরুণদের না-পাওয়া আর রাগের রসায়নকে গেঁথে আলোচিত হয়েছিলো। হিন্দী ভাষায় এই গুসসা শব্দের অর্থ হলো রাগ। ইংরেজিতে বলা হয় অ্যাংরি। সিনেমায় নায়কের অ্যাংরি ইমেজটা দর্শকদের কাছে সব সময়ই করতালি কুড়ায়। কারণ দর্শকের নিজের জীবনের হতাশা, অপমান আর ক্ষোভ তখন ওই রাগী নায়কের ভিতর দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে।

পথ চলতে দেখা যায় যানবাহনের গায়ে লেখা আছে,‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।’ সব সময় রেগে যাওয়া মানেই কিন্তু হেরে যাওয়া নয়। রাগী প্রতিক্রিয়া কখনও অধিকার আদায়ও করে নিতে পারে। আবার রাগ মানুষকে ভুল পথেও পরিচালিত করে। ‘চণ্ডাল রাগ’-এর কথা বিভিন্ন সাহিত্যে পাওয়া যায়। চণ্ডাল রাগ অর্থ চণ্ডালের মতো অসংস্কৃত, বোধবুদ্ধিহীন ক্রোধের প্রকাশ। সেই ক্রোধের সামনে অনেক প্রয়লংকরী ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199