জুতার ভেতরে...

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 19 Dec 2019

1055 বার পড়া হয়েছে

Shoes

জুতার ভেতরে পা ঢুকিয়ে ফেলতে সময় লাগে বড়জোড় তিন সেকেন্ড। তারপর সেই জুতা পড়ে হাঁটতে শুরু করলেই তো আমরা এক একজন পথিক। মানুষের পায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে জুতা চলে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। জুতাসহ পা পথ হারায় অথবা খুঁজে পায় পথ। মানুষের পথচলার গল্পের সঙ্গে জুতার গল্পও জড়িয়ে থাকে নিবিষ্ট দর্শক হয়ে। সভ্য মানুষের পৃথিবীতে চামড়ার তৈরি এই বস্তুটির প্রয়োজনীয়তা ভীষণ। জুতা ছাড়া চলাফেলার কথা ভাবতে পারে না মানুষ। কবে তৈরি হয়েছিলো এই জুতা? জেুতা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের উত্তর হচ্ছে, ৫ হাজার ৫০০ খ্রিস্টপূর্বে পূর্ণাঙ্গ জুতা তৈরি হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে জুতা আবিষ্কারের সেই আদিতে নারী ও পুরুষ একই ধরণের জুতা পায়ে পরিধা্ন করতো।রূপকথার গল্পে সিন্ডেরেলার ভাগ্য বদলে দিয়েছিলো এই জুতা। আধুনিক পৃথিবীতে সেই জুতাই এখন বিক্রি হয় মিলিয়ন ডলারে। পৃথিবীর ধূলার রাজ্যে জুতা কাহিনী তৈরি করে চলেছে। নারী অথবা পুরুষের জন্য জুতা ভীষণ প্রয়োজনীয় এক উপাদান হলেও নারীর পদযুগলকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে জুতা, পাল্টে দিয়েছে তার শরীরের ভাষা, উপচে তুলেছে তার আবেদনকে। জুতা হয়ে উঠেছে যৌনতার প্রতীকও।

নারীদের এই জুতা কাহিনী নিয়েই এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো, ‘জুতার ভেতরে...’।

পৃথিবীতে সেই বরফযুগে নারী অথবা পুরুষ যখন নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্য অথবা পদযুগলকে বরফের কামড় থেকে রক্ষার জন্য একখণ্ড চামড়া দিয়ে পা জড়িয়ে নিয়েছিলেন তখন কি তারা ভেবেছিলেন তাদের পা মুড়ে রাখা চামড়ার খণ্ডটি একদিন নকশায়, অবয়বে অনন্য হয়ে দুবাইয়ের বাজারে বিক্রি হবে ১৯.৯ মিলিয়ন ডলারে? প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু কিছুদিন আগে এমন ঘটনাই ঘটেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সব চাইতে ব্যয়বহুল এই জুতার নাম রাখা হয়েছে ‘দ্য মুন স্টার’। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা মূল্যের এই জুতা তৈরি করতে ইতালীয় ডিজাইনার অ্যান্টোনিও ভিয়েট্রি ব্যবহার করেছেন ৩০ ক্যারেট সোনা, হীরা এবং ১৫৭৬ সালে আর্জেন্টিনায় আবিষ্কৃত একটি উল্কাপিণ্ডের সামান্য এক খণ্ড।

‘জুতোয় যখন দিলেম পা, বেরিয়ে এলা হাতির ছা’। ছড়ার একটি লাইন। কিন্তু জুতা থেকে সত্যি হাতির ছা বা ছানা বের না হলেও মূল্যের দিক থেকে জুতা হাতির আকৃতিকে ছাড়িয়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আধুনিক পৃথিবীর চাহিদা জুতাকে পরিণত করেছে বিলাসের অংশ হিসেবে।

জুতায় অবশ্য চাওয়ার বিষয়ের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেখা। সম্ভবত এই দেখার দিকটাই জুতাকে একটু একটু করে নারীর পদযুগল বিশেষ করে তাদের শরীরী আবেদনকে ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করলো।

জুতা নিয়ে কিন্তু কম গবেষণা হয় নেই আমাদের এই ধরাধামে। আর বিশেষ করে নারীর পাদুকা তো নিত্য গবেষণার বিষয়। সম্প্রতি ফরাসী দেশে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উঁচু হিলের জুতা পরিহিত নারীর প্রতি পুরুষের আগ্রহ এবং সহানুভূতির পরিমাণ বেশ একটু বেশি। সেই গবেষণা এমনও বলছে, উঁচু হিলের পাদুকা পরিহিত নারীর প্রতি পুরুষের আগ্রহও বেড়ে যায় অনেক। যা সাধারণ চ্যাপ্টা জুতা পড়া নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই জরিপ পরিচালনার সময় উঁচু হিলের জুতা পায়ে নারীরা পুরুষের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছেন বেশি। অন্যদিকে চ্যাপ্টা জুতার মালিকিনরা ছিলেন অবহেলিত। এই হিল তোলা জুতা নারীর শরীরী আবেদনকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই পৃথিবীজুড়ে ‘স্টিলেটো’ নামে বিশেষ ধরণের হিল তোলা জুতা জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

জুতার আধুনিকায়ন শুরু হয়েছিলো ১৮০০ শতাব্দীর দিকে ইউরোপে। তখনও অবশ্য জাপানী নারীরা কাঠের তৈরি এক ধরণের জুতা পায়ে পড়তেন। চীন দেশে তখনও নারীদের পায়ের আকৃতি সংক্ষিপ্ত করে রাখার জন্য তাদের পরানো হতো এক ধরণের লোহার জুতা। তবে নারীর চরণে চ্যাপ্টা জুতার কদর কিন্তু কম নয়। সেই রোমান এবং গ্রিক সাম্রাজ্যের সময়ে নারীরা এক ধরণের চ্যাপ্টা স্যান্ডেল পায়ে পড়তেন। সেই ধারা কিন্তু এখনকার পৃথিবীতেও ফ্যাশনের একটি ট্রেন্ড।

মধ্যযুগে নারী কিন্তু পুরুষের পাশাপাশি ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্যই পরিধান করেছিলেন উঁচু জুতা। তখন রাজদরবারের প্রভাবশালী রাজন্যবর্গ উঁচু গহলের জুতা পড়তো। নারীরাও নিজেদের শক্তির প্রকাশ ঘটনানোর জন্য, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আগ্রহে উঁচু হিলযুক্ত জুতা পড়তে শুরু করেন।কিন্তু ৯০ এর দশকে এসে এই হিল তোলা জুতা পায়ে পড়ে পর্নো ছবির অভিনেত্রীরা ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়াতে শুরু করেন। তখন থেকে উঁচু হিলের জুতা মিশে যায় যৌনতার সঙ্গে আরো গভীর ভাবে।

১৮৫০ সালের আগ পর্যন্ত জুতা পৃথিবীর কোথাও আমদানি বা রপ্তানি করা হতো না। ১৬৬৫-৭০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে তৈরি ‘অক্সফোর্ড স্যু’ বিশ্বের অনেক দেশেই রপ্তানি করতে শুরু হয়। একই সময়ে জার্মানিতে তৈরি ‘ভাল্লুকের থাবা’ নামে পরিচিত জুতাও রপ্তানি শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৮৪৫ সালে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জুতা তৈরির কারখানা স্থাপন করে। এই সময়ই প্রথম যন্ত্রে জুতা তৈরি করা হয়। আর এই যন্ত্র আবিষ্কার করেন এলিস হাও। অবশ্য ১৮৫৮ সালে লেম্যান আর. ব্লেক নামে আরেকজন ইংরেজ পুরুষ জুতা বানানোর আধুনিক যন্ত্র তৈরি করেন।

১৮০০ সালের আগে পর্যন্ত ইউরোপে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কোনো জুতা ছিলো না। একই ডিজাইন এবং দৈর্ঘ্যের জুতা সবাইকে পরিধান করতে হতো। কিন্তু ১৮০০ সাল পরবর্তীকালে জুতার উপরিতলের অংশে চামড়ার বদলে সিল্কের কাপড় ব্যবহার করে নারীদের জন্য পৃথক জুতা তৈরি করা হয়। সিল্কের ব্যবহারের পর জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডও সিল্কের জুতা তৈরি করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে বেলজিয়াম অনেকটাই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। তারা নারীদের জন্য তৈরিকৃত জুতায় সিল্কের উপর বিভিন্ন নকশা করতে শুরু করে, যা সেই যুগের এবং সময়ের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাবাহিকতা ধারন করতো।

তথ্যসূত্র ও ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199