পৃথিবীর জানালা হয়তো আকাশ। কিন্তু মানুষের ঘরবাড়ির তো অনেক জানালা। সে জানালা দিয়ে কত ছবি, কত মানুষ, কত পথ, কত দিনরাত্রি চলে যায়। আবার ফিরেও আসে হয়তো। ভাবতে গেলে মনে হয় জানালা যেন এক নাটকের মঞ্চ, কতকিছু যে দেখায় আমাদের। কত ঘটনা অতীতের কোনো এক জানালার ধারে স্মৃতির সুগন্ধ জমিয়ে রাখে। রাখে ভালোলাগার নির্জনতা, রাখে মনও। তাই জানালার ধারে মন পড়ে থাকে কারো। বহুকাল আগে ফেলে আসা জানালার ধারের গল্প জমে থাকে মনের মধ্যে।
এবার প্রাণের বাংলার ঈদ সংখ্যার প্রচ্ছদ আয়োজনে সেই জানালার গল্প। যারা লিখেছেন তারা সবাই স্ব স্ব ভূমিকায় বিশিষ্ট। তারা জানিয়েছেন তাদের জীবনে জানালার গল্প।
পিছনে ফেলে আসা তিনটি জানালা...
জানালা ০১.
শৈশবকালে তিনটে জানালা খুব প্রিয় ছিল। একটা জানালায় ছিল বাগান। ফুল, ফল আর সব্জী বাগান একসাথে। লাল জবা, মোরগ ফুল, গোলাপ, কামিনীর পাশাপাশি হেসে থাকতো লাল শাক, কাঁচা আর পাকা টমেটোর ঝলমলে রঙ। পালং, বেগুনের বাহারের পাশাপাশি সে বাগানে ছিল পুঁই আর লাউয়ের মাচার শোভা। তারা দুই রকমের সবুজ বলে দেখাতো সুন্দর। সে সুন্দরকে বোধ হয় ঈর্ষা করে খানিকটা আড়াল করে রাখতো জানালার পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা মানকচুর বড় বড় কয়েকটা পাতা। তারা বাতাস পেলে দুলে দুলে আহ্লাদী ঢংয়ে জানান দিত- দেখো, আমরাও দুই রঙে রাঙানো। জানালার বাম দিকের কোনায় ছিল মাঝারি সাইজের একটা ডালিম গাছ। সবার মধ্যে সে ছিল থেকেও নেই ধরণের, নিরীহ প্রকৃতির। পাতার রঙ সুন্দর, তবু তা নিয়ে মোটেও ছিল না গর্ব। টুনটুনি, বুলবুলি, ভ্রমর ও মৌমাছিদের বিশেষ প্রিয় ছিল সেই ডালিম গাছটা। সবাই তার ডালে ডালে, পাতায়, ফুলে ও ফলে মেতে থাকলেও গাছটাকে দেখাতো উদাস। তার কবি কবি ভাবটা কখনো কাটতে দেখিনি। গাছেরা কি কবিতা লেখে, লিখতে পারে?
জানালা ০২.
দ্বিতীয় জানালায় ছিল টলমলে জলের একটা পুকুর। তার পাড় ঘেঁসে উত্তর দক্ষিন লম্বালম্বি সরু একটা পথ। বড় রাস্তা থেকে নেমে বাজারের দিকে যাওয়া সে পথের কিনারায় ছিল একটা চাপ কল। জানালায় বসে সে চাপ কল ঘিরে শতেক কান্ডকারখানা ঘটতো, অসীম কৌতুহল নিয়ে দেখতাম সেসব। কেউ আসতো হাতমুখ ধুঁতে বা তেষ্টায় কলিজা ভরে পানি খেতে। মাছের খালি ঝুড়ি, মাছের পানিতে ভিঁজে যাওয়া গামছা ধুঁয়ে নিতে হবে ভেবে আসতো কেউ কেউ। বর্ষাকালে প্রায় সবাইকে সে কলতলায় আসতেই হতো হাতল চেপে জুতো অথবা পায়ের কাদা পরিষ্কার করে নেবার জন্য। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে পানি নিতে আসা মেয়েরা ভীড় জমাতো, হাসি, গল্পে মেতে উঠতো। আবার সে আসর মুহূর্তেই রঙ বদলে হয়ে যেতো ঝগড়াক্ষেত্র। রাগ, বিদ্বেষ, চিৎকার ও চেঁচামেচিতে চেনা মানুষদের চেহারা কেমন অচেনা হয়ে যায় দেখতাম অবাক হয়ে, কৌতুহল নিয়ে। যে মুখেরা রূপ, চেহারা বদলে বিদায় হতো, দেখা যেতো পরদিনই তারা আবার একই মানুষদের সাথে মহাহাসিখুশী। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, যে কোনও কালে বা ক্ষণে নির্বিকার থাকতে দেখেছি সে চাপ কল আর তার নিকটসঙ্গী পুকুর পাড়ের পথটাকে। নিশুতি রাতে, চুপিচুপি জানালা খুলে দেখার কৌতুহল জেগেছে- যখন সবাই ঘুমিয়ে তখন কি ঐ দুজনের কোন কথা হয় ?
জানালা ০৩.
তৃতীয় জানালায় তিন দিক ঘেরা এক টুকরো জমি প্রায় সারাটা বছর ঝিমিয়ে, হাই তুলে কাটাতো। ধান কাটার সময় এলে দেখতাম বাড়ির ও বাইরের কাজের লোকেরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তার চেহারা বদলে দেবার জন্য। তিন চারদিনে চেহারা একেবারে অন্যরকম হয়েও যেতো। আগাছা, অযত্ন উপড়ে ফেলে গোবর লেপে দিলে জায়গাটা হয়ে উঠতো হাস্যোজ্জ্বল উঠোন। সেখানে উঠতো ধান। তিনদিকে দাঁড়িয়ে যেত নানা আকারের সোনালী ধানের গাদা। ফাঁকা জায়গাটার মাঝখানে ধান মাড়াই করার জন্য বসানো হতো চার, সাড়ে চার ফুট উচ্চতার বাঁশের খুঁটি। সে খুঁটিতে পাশাপাশি চার পাঁচটা গরু জুড়ে দিলে তাদের চক্করে শুকনো ধানগাছ থেকে আলাদা হয়ে যেতো ধান। ধানগাছ হয়ে যেতো খড়। চড়ুই পাখিরা ছটফটানি,কিচির মিচিরে মেলা বসিয়ে ফেলতো যখন খুশী তখন। সারা বছর প্রানহীন পড়ে থাকা জমির টুকরোটা এ সময়ে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রাণচাঞ্চল্যে। খালি চোখে যা, যেমনটা দেখা হয়েছে- তা পুরোটা দেখা নয়। এখন মনে হয় সে জানালা জুড়ে ছিল জীবন, আনন্দ বেদনার কাব্য। যখন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন প্রথম জানালার পাশে আর একটা জানালা মেলে।সে পর্দা ঢাকা জানালার ফাঁক দিয়ে কখনো কখনো একজন মানুষের আগ্রহ, কৌতুহল, অস্থিরতা টের পাওয়া যেতো। অনুভব করতে পারি, একসময় সে জানালা, তার ভিতরের ছায়া আমাকেও টানাটানি শুরু করেছে। অদৃশ্য হাওয়া মানুষের অনুভব আদান প্রদান করতে ভালোবাসে। একদিন খুব ভোরবেলায় যখন চারপাশের মানুষেরা জেগে ওঠেনি, মুখোমুখি দুটো জানালায় দুটো মানুষ ফ্রেমে বাঁধানো ছবি হয়ে ওঠে। তারা নড়ে চড়ে না ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে। তাদের চোখ পলকহীন হয়ে যায় মুছে যাওয়ার আশঙ্কায়। সংকোচ, দ্বিধা, লজ্জা ভেঙ্গে প্রেমের শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে জগতে। নতুন আনন্দে, মাধুর্যে ও সৌরভে মেতে ওঠে ভূবন। পিছনে ফেলে আসা তিনটি জানালার সকল স্মৃতি, সৌন্দর্য একাকার হয়ে যায় অষ্টম শ্রেণীর একখানা সরল মুখ ভরা জানালায়। সেটাই হয়ে ওঠে নিকানো উঠোন, চাপ কল ও পথের অশ্রুত কথোপকথন, সে মুখখানাতে পৃথিবী হয়ে ওঠে বিস্ময়কর সুন্দর।
জানালার বাইরে নক্ষত্র, চাঁদ আর সূর্য ভরা আকাশ
আজকে শহরের জানালা। বাংথাইয়ে মোড়া, ভারী পর্দায় আবৃত আর প্রকৃতিকে না না বলা এক স্থাপত্য সংযোজন বিশেষ। বেচারি জানালার ভাগে বা ভাগ্যে কদাচিৎ পড়ে কিছু টুকরো টুকরো চৌকো আকাশ, দু‘তিনটে তারা বা চাঁদের আলোর করুণ দাক্ষিণ্য। সূর্যিমামার যেন আরোই নাকাল অবস্থা। ভোর হয়েছে, সকাল হচ্ছে, ইত্যাদি জানালা দিয়ে জানান দেবার কী আকূল আবেদন তার। সারাদিন তাই শহুরে ঘরবাড়ির ভেতরকার বৈদূত্যিক বাতির সঙ্গে লড়তে লড়তে এক সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
কাঠঠোকরার তালজ্ঞান
আমার তিন অথবা চার বছর বয়সে প্রথম ঘুমভাঙ্গানিয়া পাখি ছিলো কাঠঠোকরা। বাবার চাকরির কারণে আমরা তখন যশোরের পিপলস জুটমিলের বাসস্থানে। সেই বাড়ির দোতলায় ছিলো আমাদের পাঁচ ভাইবোনের শোবার ঘর। ঘরটা ছিলো বেশ বড়, দুধারের জানালাগুলো বিশাল। কাঠের জানালা। পর্দার কোনো প্রয়োজন ছিলো না কারণ উঁকিঝুকি মারা আশপাশে গায়ে লাগা কোনো বাড়ি ছিলো না। আমাদের বাড়ির বাগান পেরিয়েই উন্মুক্ত মাঠ আর মাঠের দুইপাশে লম্বা লম্বা সোনামুখী ডাব গাছের সারি। অনেক কাঠঠোকরা পাখি সকাল থেকেই তাদের ঠোকর শিল্প নিয়ে সেইসব গাছে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়তো। আমিও আধো ঘুমের ঘোরে তাদের জানালা দিয়ে দেখতাম, শব্দ শুনতাম। ঠুক ঠুক ঠুক-কোনোদিন তাল কাটতো না!
চলচ্চিত্রের গহীন বন
অপর দিকের জানালাটি ছিলো, আমরা যাকে বলি ইংরেজিতে ‘ফ্রেঞ্চ উইন্ডো’। সামনে মাঠ, মাঠের ধারে আম, জাম, লিচু আর কাঁঠাল গাছ সারি সারি সাজানো।আমি জানালা দিয়েই তাক করতাম কোন ফলটি খাবার উপযোগী হয়েছে। ঠিক করতাম কোন গাছের ডালে বসে কারো কাছ থেকে কেড়ে নেয়া আচার খাবো। ওই জানালাটি রাতে আমাদের পাঁচ ভাইবোনের কাছে হয়ে উঠতো দারুণ ম্যাজিক্যাল এক বিস্ময়। বিশেষ করে আকাশ কাঁপানো জ্যোৎস্না রাতে। আমরা আমাদের বিছানার পায়ের দিকে অপর দিকের দেয়ালপানে তাকিয়ে বসতাম। আর দেয়ালে ম্যাজিক্যাল জানালার তৈরী চলচ্চিত্র দেখতাম মুগ্ধ হয়ে। কখনো গাছের ডালপালা, পাতা, ফুল নাচছে আবার কখনো গম্ভীর মুখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসব ছায়া আকৃতির মাঝে কতো যে চরিত্র গঠন করতাম আমরা! রাক্ষস, মেঘ, ঘোড়া, বানর, পাখি-আরো কতো কী!“ জানালা দিয়ে আকাশ পানে চেয়েও সেই একই মেঘ চলচ্চিত্র...! ছোটবেলার জানালা চলচ্চিত্র আমার!
উঁকি দেওয়া মৃত্যু সংবাদ
জীবনে প্রথম মৃত্যু সংবাদটিও সেই সময়ে পাওয়া। আমরা তিন বোন কী কারণে যেন সেই মৃত মানুষটিকে দেখতে আগ্রহী হয়েছিলাম তা মনে নেই। সেই বাড়িতে বেশ ভীড়। মৃতদেহ দেখতে দরজা দিয়ে বাচ্চাদের প্রবেশের কোনো অনুমতি নেই। অগত্যা জানালা। কিন্তু জানালাটি ছিলো বেশ উঁচুতে আমি আর আমার ছোটবোন নিপা কোনোমতেই যে জানালার কার্নিশে চড়ে চোখের সদ্বব্যবহার করতে পারবো না সেটা বুঝে গেলাম। রিনি ওর বয়সের তুলনায় বরাবরই লম্বা। তাই ও জানালা দিয়ে মৃতদেহ দেখলো। তারপর বিস্ফারিত চোখে বললো,‘দুটো ইয়া লম্বা দাঁত! হাতদুটো পা পর্যন্ত লম্বা। পা অজগর সাপের মতো।’ তিনবোন দে দৌড় দে দৌড়। একমাস ভয়ে রাতে ঘুম আসতো না।
সাদা প্যাঁচার বিজ্ঞ চাহনী
সিলেটের বাড়িতেও অনেক জানালা আর প্রচুর গাছের ছায়ায় জানালার দৃশ্যগুলোতে বড়ো শান্তি। আমার বিছানার সঙ্গে লাগোয়া জানালার বাইরে বেশ কিছু গাছ পার হয়ে দেয়ালে হেলান দেয়া এক বটগাছ। প্রতিরাতে সেখানে গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বসতো এক’শ বছরের প্রজ্ঞা সম্পন্ন এক সাদা প্যাঁচা। নিশ্চল চেয়ে থাকতো আমার পানে, আমি তার পানে।
উদার খোলা জানালা
শান্তিনিকেতনে আমার ঘরের জানালাগুলো বড় বড়। জানালার গরাদের ওপারেই মাঠ। আর বলাই বাহুল্য, নক্ষত্র, চাঁদ আর সূর্য ভরা আকাশ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুধুই কতরকম গাছ। আমার সবচাইতে প্রিয় জানালা দৃশ্য ছিলো যখন তুলোর মতো খুব আলতো শব্দে বৃষ্টি নামতো আর সোঁদা মাটির গন্ধে ভরে যেতো আমার ঘর।
বর্ধমানে আমার ওস্তাদজী পন্ডিত ধ্রুবতারা যোশীজি‘র কাছে যখন ছিলাম, ভোরে জানালার সামনে রেয়াজে বসতাম। একদিন রেয়াজ করতে করতে বোঁজা চোখ মেলতেই দেখি পাশের বাড়ির জানালায় দাঁড়ানো দুই দাঁত বিশিষ্ট দশ মাসের এক শিশু। তিনি জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন হাসি মুখে, আর ওনার মা ধরে আছেন উনাকে। কী দারুণ বন্ধু পেলাম! তিনি রোজ ভোরে জানালায় দাঁড়িয়ে আমার রেয়াজ শুনতেন আর মিটিমিটি হাসতেন।
সত্যি বলতে কী, জানালার এই মিটমিটে হাসিটি আবার বড্ড পছন্দ। জানালা আসলেই কত কিছুর জানান দেয় সমাজের, প্রকৃতির, সম্পর্কের...।
পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে মান্না দে‘র গান ভেসে আসে
এখনো ইদের ছুটি শুরু হয়নি।
তবু চারপাশের বাতাসে ছুটি ছুটি গন্ধ।
আমার ঘরের জানালায় চোখ পড়ল, আর মনটা খুশি হয়ে উঠল।
ওপাশের বাড়ির জানালাটা আমার জানালার সমান্তরালে প্রায়...
আমি জানি পুরো ছুটির সময়টা ও বাড়ির জানালা দিয়ে ভেসে আসবে প্রিয় মান্না দের গান।
আর আমার ভেতরটা হাহাকার করে উঠবে অনেক সুখে আর অনেক দুঃখে।
স্মৃতিকাতরতা ভর করবে আমাতে...
পাশের বাড়ির রেডিও থেকে ভেসে আসা গান অন্যরকম ভালোলাগা এনে দেয়।
ছোটবেলা থেকেই আমার ভীষণ প্রিয় মান্না দে। বাড়িতে সারাক্ষণ গান বাজত।
সবচেয়ে বেশি বাজানো হতো মান্না দের গানগুলো।
‘সে আমার ছোট বোন’ গানটা যখন শুনতাম আমার চোখ ভিজে যেত।
‘শিল্পের জন্যেই শিল্পী শুধু, এছাড়া নেই যে তার অন্যজীবন’। তখনো আমি শিল্পী হইনি।
আদৌ শিল্পী হতে পেরেছি কিনা জানি না...
শীতের ছুটিতে নানাবাড়ি যেতাম যখন, রোজ আসর বসতো নানীদের দক্ষিণের ঘরে।
হায়দু মামা ছিলেন আমার খালা-মামাদের বন্ধু।
কী অনায়াসে তার কণ্ঠ আর আঙ্গুলগুলো ঘুরে বেড়াত হারমোনিয়ামের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত!
‘তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ, দিতে পারোনি’
সত্যি কি হায়দু মামাকে যিনি দুঃখ দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর দেওয়া সেই দুঃখ মামাকে স্পর্শ করতে পারেনি?
তাহলে কেমন করে মামার কণ্ঠ থেকে বিষন্ন গানগুলো অমন মধুর হয়ে ঝরে পড়তো!
হায়দু মামা নিশ্চয়ই ভাবতে পারবেন না কখনো যে দশ বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে এমন করে তাঁকে মনে রেখেছে।
মান্না দের গানের জন্য ভালোবাসা হায়দু মামাই তৈরি করে দিয়েছিলেন।
‘তুমি নিজের মুখেই বললে যেদিন সবই তোমার অভিনয়, সত্যি কোনো কিছু নয়, আমি দুঃখ পেলেও সুখি হলাম জেনে’।
বুঝে পেতাম না দুঃখ পেয়েও সুখি হওয়া যায় কীভাবে?
কী অপূর্ব করে যে গাইতেন মামা! সব কথা বুঝতাম না, কিন্তু সুরের মায়াজাল আর গায়কী মুগ্ধ করে রাখত।
হায়দু মামা কার কাছ থেকে কীভাবে দুঃখ পেয়েছিলেন সে গল্পটাও জানতাম আমি।
খালারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতেন...
সেই রূপকথার রাজকন্যার মতো সুন্দরী মেয়েটিকেও আমি দেখেছি।
আমার তাকেও দুঃখী মনে হতো।
মনে হতো হায়দু মামা মান্না দের গানকে আশ্রয় করে দুঃখ ভুলেছেন, সুখি হয়েছেন, মেয়েটি তা পারেনি...
পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে মান্না দের গান ভেসে আসে...
আমি ভেসে যাই স্মৃতিকাতরতায়...
নানাবাড়ি গিয়ে খুঁজে বের করতে ইচ্ছে হয় হায়দু মামাকে।
সামনে বসে আবার শুনতে ইচ্ছে হয় -
‘পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন, ফিরে আর আসবে কি কখনো’...
পাশের বাড়ির জানালা আর নানাবাড়ির দক্ষিণের ঘর একাকার হয়ে যায়...
জানালাই ছিলো তখন আমার জীবনের বড় বন্ধু...
আমার যাত্রশিল্পী বাবা সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে যাত্রা করতেন বলে দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা বাবাকে বলেছিলেন মেয়েকে নিয়ে এভাবে ঘোরাঘুরি করলে মেয়ের পড়াশোনা হবে না। তাই বাবা আমাকে মির্জাপুর ভারতেশ্বরী হোমস-এ ভর্তি করে দেন।তখন ১৯৭১ সাল।আমার বয়স মাত্র তিন সাড়ে তিন।সবে হোমস-এ ভর্তি হয়েছি।এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।চারিদিকের অবস্থা খুব খারাপ।বয়স অল্প থাকাতে তেমন কিছু বুঝতে না পারলেও চারিদিকে কিছু একটা ঘটছে বুঝতে পারতাম কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারতাম না।আশেপাশে তেমন কেউ ছিলোও না।পরে শুনেছি স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে।অনেকের বাবা-মা এসে তাদের সন্তানদের বাড়ি নিয়ে গেছে, কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে নিতে আসেনি। স্কুলে আমরা গুটি কয়েকজন ছাত্রী মাত্র।তখন আমার একটাই কাজ ছিলো জানালার পাশে গ্রীল ধরে বসে থাকা, আর বাইরে মানুষের চলাচল দেখা।খুব অল্প মানুষেরই চলাচল ছিলো তখন।সবার মুখে আতঙ্ক।আমাদের সঙ্গে কিছু বড় ক্লাসের মেয়ে আর কয়েকজন মহিলা টিচার তখন স্কুলে।দেখতাম বড় ক্লাসের দিদিদের লুকিয়ে রাখা হতো।আমার তখন একমাত্র বন্ধু ছিলো জানালা।কালো গ্রীলগুলোর সঙ্গেই আমি একা একা কথা বলতাম। মা-বাবার কথা। ছোট ভাই মিঠুর কথা।আমার জানলা দিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল ফুল দেখা যেতো।দূরে একটা শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর ছিলো।আমি ওগুলো দেখতাম আর ছোট্ট মনে অনেক কথার ভীড় জমাতো।তখন তো নিজে কিছুই করতে পারতাম না।হোস্টেলে টিচার আর আয়া যারা ছিলো তারাই স্নান করানো,খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো সবই করে দিতেন।লেখাপড়া তেমন একটা হতো না।তখন বড়দের সবারই মন খারাপ থাকতো।আমি দিনের বেশির ভাগ সময়ই থাকতাম জানালায়।আশেপাশের রূমের জানালায়ও তখন কেউ না কেউ থাকতো। ওদের সঙ্গে চোখের ইশারাতেই কথা হতো।জানালাতে বসেই কাপড় দিয়ে পুতুল বানাতাম।অন্য জানালার আমার সমবয়সীরাও দেখে দেখে পুতুল বানাতো।মা-বাবা ছোট ভাইয়ের জন্য অবিরাম হাহাকার নিয়ে এভাবেই সময়গুলো কেটে যাচ্ছিলো। টিচাররা বড়, আপারা মাতৃস্নেহে আগলে রাখতেন।
হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম ভেঙে গেলো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে।দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দেখি রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ।কোথা থেকে এতো মানুষ এলো বুঝতেই পারলাম না।মনে হলো সবাই মাটির নিচে, দেয়ালের আড়ালে লুকিয়েছিলো।ছোট হলেও অনুভব করতে পারলাম কিছু পাওয়ার আনন্দ যেন আকাশে বাতাসে ছড়াচ্ছে ।
কয়েকদিন পর একজন এসে বললো, তোমার বাবা তোমাকে নিতে এসেছেন।আমি কিছু বুঝতে পাছিলাম না।আমাকে আমাদের প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি ফোন করে তার রূমে নিয়ে গেলে দেখি সেখানে বাবা বসে আছেন।দেখা মাত্রই আমি চিৎকার করে বাবা বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরি।বাবাও আমাকে এমন ভাবে আকড়ে জড়িয়ে ধরেন যেন আমি আবার হারিয়ে না যাই।সেদিনের সে অনুভূতি আমি আজ লিখে বা বলে বোঝাতে পারবো না।বাবার কাছে মা-ভাইয়ের কথা জানতে চাই।বাবা বললেন তোকে নিয়ে এখন চট্টগ্রাম যাবো ওখানে কিছু কাজ বাকী আছে।চলে গেলাম বাবার হাত ধরে। পেছনে ফেলে গেলাম আমার বন্ধু জানালা, কৃষ্ণচূড়া গাছ আর শান্ত কোমল সেই পুকুর পাড়।
বড় হয়ে বাবার ডায়েরি পড়ে জেনেছি, কেন বাবা-মা আমাকে এতদিন নিতে আসেনি...।আমার জন্য তারা পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু উনারা ছিলেন অসহায়।সব ব্রিজ, কালভার্ট উড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো, তাই বাবা বারবার চেষ্টা করেও আমাকে নিতে আসতে পারেননি।
সেদিন চলে এলাম বাবার হাত ধরে চট্টগ্রাম।আমি মা কে খুঁজি। ভাইকে খুঁজি। কোথায় সব? বাবা জানালেন, ওরা কলকাতায়। এখানে দু’এক দিনের কাজ আছে, সেরেই আমরা কলকাতা যাবো।আমরা একটা হোটেলে উঠেছিলাম।তখন সবকিছুই ধ্বংসস্তুপ হয়ে আছে।বাবা তখন তার আত্মিয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজছিলেন।আমাদের সীতকুণ্ডের ঘর-বাড়ি সব তছনছ।বাবা আমাকে হোটেলের রূমে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে সব আপনজনদের খুঁজতে যেতেন।আমাকে সঙ্গে নিলে কোথায় খাবো, কোথায় রাখবেন? তাই হোটেলের লোকজনদের বলে যেতেন যেন আমার কোন অসুবিধা না হয়। এবারও দেখা পেলাম অন্য এক জানালার। আমি রূমের জানালা দিয়ে ডেকে ডেকে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতাম।জোরে জোরে গান করতাম।
দু’দিন পর রওয়ানা দিলাম কলকাতার উদ্দেশে যেখানে আমার প্রাণপ্রিয় মা আর আমার ছোট ভাই অপেক্ষায় আছে আমার।বাসে উঠেও জানালা হলো আমার সঙ্গী।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে থাকি সবুজ মাঠ, দিগন্তজোড়া আকাশ। আর কানে বাজে ,শোন একটি মুজিবরের থেকে...।
মধ্য দুপুরে উনি শিস বাজালে আমি চলে আসতাম জানালায়
কিশোরী না, ঠিক উঠতি কিশোরী। সেই বেলাতে কত স্মৃতি আছে, কত স্মৃতি মিলিয়ে গেছে জীবনের চলন্ত ট্রেনের দৌড়ে। বলা হয়েছে লিখতে হবে কিছু স্মৃতি জানালা নিয়ে। তৎক্ষণাৎ ঠোঁটের ফাঁকে বাঁকা চাঁদের মতো এক চিলতে হাসি ফুটেছিলো।মনে পড়ে গেলো কত কথা, মধ্য দুপুরে সকলে কর্ম শেষে কী ভীষণ ঝিমিয়ে পড়া, ঘুমে চোখ ঢুলু, ঢুলু, কেউ কেউ বেঘোর ঘুম। আর আমি কী ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে তখন চোখ পিটপিট করছি আর অপেক্ষা করছি কখন সেই সন্ধিক্ষণ আসবে। হ্যাঁ, আসবে, কানে বাজবে কোনো গানের শিস। তখনই শুরু হয়ে যাবে কেমন ছটফট অস্থিরতা, আমাকে কেউ দেখে ফেলবে না তো? বাড়ির ভেতরের অথবা বাইরের কেউ?
এবার তবে বলি, পাশের বাড়ি নয় ঠিক, উল্টোদিকের বাড়ির জানালা। মধ্য দুপুরে একজন কেউ শিস বাজাবে আর খেলবে তার পোষা বিড়ালটার সঙ্গে বসে একটা টেনিস বল নিয়ে।স্পষ্ট দেখতে পাই আমি। মাঝে মাঝে তাকাবে আমার জানালার দিকে।এই দৃশ্য দেখার আগ্রহের পেছনে আরেকটা কারণ ছিলো। আমাদের ছিলো পাড়া কালচার-নাচ, গান আর খেলাধূলা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বিশাল মাঠে। মাঝে মাঝে বড় ছোট সবাই মলে একসঙ্গে খেলতাম। তখন একটা খেলা ছিলো ‘টিলো এক্সপ্রেস’। জানি না এখনো কেউ খেলে কি না। সে খেলায় একজন চোখ বন্ধ করে থাকবে, সবাই লুকাবে। তারপর চোখ খুলে সে আমাদের খুঁজবে। যাকে পাবে বলবে, টিলো। আর তখন সে-ই হয়ে যাবে চোর।
একদিন খেলার শুরুতে সবাই লুকাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছিলাম না কোথায় লুকাবো। হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললো-এদিকে এসো। নিয়ে গেলো একটা সিঁড়ির আড়ালে। সেখানে আরো কেউ কেউ লুকিয়ে ছিলো। উনি ছিলেন পাড়ার বড় ভাই। কেমন যেন অনুবূতি হলো। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আড়ষ্টতা কাজ করছিলো।
সেদিন বাড়ি ফেরার পর অভিযোগ চলে এলো। তাকে নিয়ে পাড়ায় অনেক অভিযোগ ছিলো। আমাদের ওপর কড়া নির্দেশ জারি হলো মাঠে না-যাওয়ার। কিন্তু আমার মধ্যে অন্য অপেক্ষার পালা শুরু হলো। মধ্য দুপুরে উনি শিস বাজালে আমি চলে আসতাম জানালায়। আমি বুঝতাম সে আমাকে মাঝে মাঝে দেখছে। বিড়াল নিয়ে তার খেলার ছলটা আমাকে দেখার জন্য কি না আজো জানি না। তবে অদ্ভুত বিষয়, লিখতে বসে মনে করতে পারছি না সেই দেখাদেখির খেলাটা শেষ হয়েছিলো কবে? অদ্ভুত, কিছুতেই মনে করতে পারছি না!
একটা দীর্ঘশ্বাস ওই জানলায় আটকে আছে
হঠাৎ করেই একদিন এ-পাড়ায় বাসা বদল করে আসতে হলো আমাদের। বাবা নিরিবিলি পরিবেশ দেখে বাড়ি খুঁজে বের করেন। সেইসঙ্গে পেয়ে যান বাড়ির সামনে রাস্তার গা- ঘেঁষে একটি স্বচ্ছ পানির ঝিল। যা দেখে বাড়িটিকে লুফে নিতে একমহূর্তও বিলম্ব করেননি বাবা! নতুন বাড়িতে ওঠার পর মাসখানেকের মধ্যে পাশের বাড়ির জানালায় কিছু ব্যাপার আমার নজর কাড়ে। বরাবরই আমার ভীষণ জানালা প্রীতি! বাড়িতে থাকলেই যখন তখন জানালার পাশে এসে বসি। দেখি পৃথিবীর কত রূপ! কত মানুষের আনাগোনা! আমার ভেতর তখন একটি ঘোরলাগা অনুভূতি কাজ করে। বিশেষ করে... দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে বাসার সবাই যখন ভাতঘুমে; আমি চুপিচুপি এই কাজটা করতাম। বাবা বিষয়টা লক্ষ্য করে প্রায়ই আমাকে খাতা পেন্সিল দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলতেন, ঘুম না এলে লেখো। বাইরে তাকিয়ে যা দেখতে পাচ্ছো; তা লিখে ফেলো। আমিও মাঝেমাঝে বাবার কথা শুনতাম, আবার শুনতামও না। কারণ তখন আমি দেখতাম পাশের বাড়ির জানালায় নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা এক মধ্যবয়সী নারীকে। সৌম্য, শান্ত শুভ্রবসনা সেই নারী জানালার গ্রিলে হাত রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন পথের দিকে। ভাবটা এমন ছিল; হয়তো ওই পথে কারও আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি! পাড়ায় নতুন এসেছি বলে কারও সঙ্গে তেমন ভাব জমে ওঠেনি। তাই পাশের বাড়ি গিয়ে আর জানাও হচ্ছিলো না। কিন্তু তার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা আমাকে ক্রমেই আবিষ্ট করে তুললো। আমিও তাকে নিয়ে অনেককিছু ভাবতে বসে গেলাম। সেই সময় এই নিয়ে কিছু একটা লিখেও ফেলেছিলাম। যা পড়ে বাবা একটু অবাক হয়েছিলেন।
এভাবে দিন চলতে চলতে... একদিন দেখি সেই মহিলাটি আর ওই জানালার ধারে নেই। বিগত ছয়মাস তাকে ঠিক একইভাবে দেখে আসছি প্রতিদিন। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে গেলেন কোথায়? বুকের ভেতর একটা অস্থিরতা কাজ করতে শুরু করলো। বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করি; ছোট ভাইবোনদের জিজ্ঞেস করি; কেউ কিছু বলতে পারেনি। একদিন ভরদুপুরে সাহস করে কাউকে কিছু না-জানিয়ে পাশের বাড়ির দরজায় গিয়ে নক করি। বয়স্ক এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন; কাকে চাই? আমি একটু ভয় পেলাম; কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। তারপরেও মনের সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে জিজ্ঞেস করলাম-সেই মধ্যবয়সী মহিলার কথা। আরও বললাম যে; তাকে প্রতিদিন জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি । কয়েকদিন যাবৎ দেখছি তিনি নেই। তাই- তার ব্যাপারে জানতে এসেছি।'
পরে যা জানতে পারলাম, তাতে আমি মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামে... সেখানেই তিনি মারা যান।
মহিলা আমার কেউ নন। অথচ এখন কত আপন মনে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে এই দম্পতির একমাত্র ছেলে যুদ্ধে যায়। যুদ্ধ শেষে আর ফিরে আসেনি। কিন্তু এই মহিলার বিশ্বাস ছিলো; একদিন তার ছেলে ফিরে আসবে। সেই আশায় এভাবে জানালা ধরে পথচেয়ে থাকতেন। কারণ এই পথ ধরেই ছেলেটি যুদ্ধে চলে যায়। দেশ স্বাধীন হবার ছয় বছর পরেও ছেলে তার ফিরে আসেনি। আর এদিকে মা অপেক্ষার প্রহর গুনতে-গুনতে ছেলের কাছে অনন্তলোকে চলে গেছেন। এখন সেই শূন্য জানালার দিকে তাকালে মনে হয় একটা দীর্ঘশ্বাস ওই জানলায় শার্শিতে আটকে আছে!
আমি জানালায় বালিশে হেলান দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম
মফস্বলের মেয়ে আমি, ক্যাসেট প্লেয়ার...খয়েরী ফিতের অডিও ক্যাসেট...ল্যান্ডফোন...কাগজ-কলমে লেখা চিঠি...হলুদ-সাদা এয়ারমেইল খাম... লোহার মোটা শিকের জানালায় হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজা...ভরা পূর্ণিমায় হাত বাড়িয়ে জ্যোৎস্না ধরতে চাওয়া.. .এ সবই ছিল নিত্য দিনের ভাল লাগার এক চরম অনুভূতি...।
আমার দাদী বড় সৌভাগ্যবান..সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে অবিবাহিত আর ছোট মেয়েকে নিজ পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়া ছাড়া বাকি পাঁচ ছেলে মেয়ে নিজ পছন্দেই বিয়ে করেছেন... সবচেয়ে ভয়াবহ কাজ করেন আমার বড়ফুপু.. অল্প বয়সে তারই এক দু:সম্পর্কের চাচাকে বিয়ে করে ফেলেন। ফলাফল, আমার দাদী-বাপ-চাচা-ফুপাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছেদ হয়...যদিও আমার ফুপুর শশুর বাড়ি ঠিক আমাদের পাশের বাড়িটাই...।
আমাদের সব ভাই বোনদের পাশের বাড়িতে বসবাস করা আমার বড় ফুম্মার পরিবারের প্রতি আগ্রহ ছিল সীমাহীন। স্বাভাবিক ভাবেই বড়ফুম্মার ছেলে-মেয়েরা আমার থেকে বয়সে বড়। বড়ফুম্মার তিন নম্বর ছেলে থাকতো তাদের চিলেকোঠায়। ওই চিলেকোঠার প্রতি আমার আগ্রহের বিশেষ কারণ হলো ঠাকুরমারঝুলির কেশবতী কন্যার মতো। যদি আমি ওই চিলেকোঠাতে থাকতে পারতাম আর কোন এক রাজকুমার আমার লম্বা চুল বেয়ে উঠে আসতো চিলেকোঠাতে! তবে..আমি খুঁজে পেতাম ভালবাসার রাজকুমারকে। উঠতি বয়সের স্বপ্ন যাকে বলে...। জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির চিলেকোঠাটা দেখলেই আমার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার রোগটা প্রকট হয়ে উঠতো...।
ওই চিলোকোঠাটায় আমার ভাইয়ের অবস্থান দেখে বেশ চমৎকৃত হতাম। একসময় নেশায় পেয়ে বসলো । প্রতি রাতে নিয়ম করে আমি জানালায় বালিশে হেলান দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম উনি কি কি করেন... উনি বই পড়েন...একের পর এক সিগারেট ধরান...কি কি যেন লিখতেন এবং এক সময় লাইট অফ করে বুকের নীচে বালিশ নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং গান শুনতেন। ক্যাসেট প্লেয়ারের ভলিয়্যুম থাকতো হাই...।আচমকা খেয়াল করলাম উনার ঘর থেকে একটা গানই বারবার ভেসে আসছে। এটা ওই সময়ের আমাদের রোগ ছিল। কোন একটি গান যদি মনে ধরে যায় তবে ওই একটাই গান ক্যাসেটের এ সাইড বি সাইড জুড়ে রেকর্ড করানো হতো। তবে আমার ভাইয়ের ওই একটি গান ছিল মান্না দে’র “আমি সারারাত শুধু যে কেঁদেছি..”। বিষয়টায় বেশ বিরক্ত এবং কৌতুহলী হয়ে উঠলাম কেননা, তখন আমাদের চরম রোমান্টিকতার বয়স..এমন একটা গান বারবার শুনলে পরিবেশ কেমন যেন ভারী হয়ে যায়। আর কৌতুহলী হলাম..কারণ.. এত গান থাকতে এই গান কেন..??
পরদিন সকালেই ভাই বোনদের জরুরী মিটিং তলব করা হলো। সেই মিটিংয়ে আমার বড় ফুপুর ছেলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেয়া হলো... সেদিন সন্ধ্যার মধ্যেই দূত খবর দিলো...আমার বড় ফুম্মার তিন নম্বর ছেলে মানে সেজ ছেলে “ছ্যাঁকা খেয়েছে..” এবং দূতের খবর পাক্কা..এরপর থেকে আমাদের ভাই বোনদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল পাশের বাড়ির ওই চিলেকোঠার জানালা। কয়েকদিন পর আবার গান পরিবর্তিত হয়ে যায় “যে ভালবাসায় ভোলায় মোরে.. মিছে আশায় ভোলায়না... সেই তো আমার প্রিয়...”। খবর নিয়ে জানা যায় উনি আবার আরেকজনের প্রেমে পড়েছেন..তার কয়েক মাস পর আবার “মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়... আবারো ছ্যাঁকা..।
এখন ভাবতে বড় অদ্ভুত লাগে। সে সময় তো আর সেল ফোন বা ইন্টারনেট ছিল না...একজন মানুষের মনের ভাব প্রকাশের কত শৈল্পিক স্টাইল ছিল...আর আমরাও একজন মানুষকে বোঝার জন্যে কতটা সময় ধৈর্য্য ধরে ব্যয় করতাম। আর আজ..বড় অস্থির আমরা... ফেসবুক লগইন করলেই খুব সহজে একজন মানুষের মনের অলিগলির খবর পাওয়া যায়। আর যদি কাউকে জানতে গিয়ে অনেকটা সময় ব্যয় হয়.. অস্থির হয়ে...বিরক্ত হয়ে... মনগড়া একটা মন্তব্য করে বসি...।
আহারে অমন চিলেকোঠাও আর দেখতে পাওয়া যায় না... লোহার শিকের এক দেয়াল জোড়া জানালাও দেখতে পাওয়া যায় না। আর ওই পাশের বাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে একজন মানুষের মানসিক অবস্থা বোঝার মতো ধৈর্য্যও আর হয় না..আর তাই ওই দিনগুলো আমার কাছে আনন্দময় রূপকথার দিন..
ছবিঃ প্রাণের বাংলা
ইঁদুর, ইঁদুর…
30 Jan 2025
6030 বার পড়া হয়েছে
হাঁটতে হাঁটতে…
23 Jan 2025
4945 বার পড়া হয়েছে
এই গিটারটা বন্দুক হয়ে যেতে পারে...
16 Jan 2025
5400 বার পড়া হয়েছে
পুরুষ নেই...
9 Jan 2025
4010 বার পড়া হয়েছে
শীতকাল ভালোবেসে…
2 Jan 2025
3970 বার পড়া হয়েছে
এত লোক জীবনের বলী…
19 Dec 2024
3640 বার পড়া হয়েছে
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস…
12 Dec 2024
2050 বার পড়া হয়েছে
জয়া’র জয়
5 Dec 2024
2930 বার পড়া হয়েছে
দু‘শ সেকেন্ডের সেই টেলিফোন কল
28 Nov 2024
2835 বার পড়া হয়েছে
কাফকার আঁকাজোঁকা
21 Nov 2024
2375 বার পড়া হয়েছে
স্বৈরাচার স্বৈরাচার…
14 Nov 2024
6910 বার পড়া হয়েছে
ডার্ক ট্যুরিজম
7 Nov 2024
5460 বার পড়া হয়েছে
ফেরা…
31 Oct 2024
2435 বার পড়া হয়েছে
অনুজ্জ্বল বিষের পাত্র
24 Oct 2024
2265 বার পড়া হয়েছে
ঋত্বিকের সুচিত্রা সেন
17 Oct 2024
1665 বার পড়া হয়েছে
হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান
10 Oct 2024
2290 বার পড়া হয়েছে
গোয়েন্দা কাহিনি এখন…
1 Oct 2024
1865 বার পড়া হয়েছে
ঝড়ের কেন্দ্র
19 Sept 2024
1755 বার পড়া হয়েছে
তখন হাসপাতালে…
11 Jul 2024
4035 বার পড়া হয়েছে
ছাতার মাথা ...
4 Jul 2024
3450 বার পড়া হয়েছে
আমি, তুমি ও ম্যাকবেথ…
27 Jun 2024
3285 বার পড়া হয়েছে
কফির কাপে ঝড়…
13 Jun 2024
2370 বার পড়া হয়েছে
চশমার কাচে সমুদ্র
6 Jun 2024
2160 বার পড়া হয়েছে
মেরিলিন মনরো আর রুবি রায়
30 May 2024
2855 বার পড়া হয়েছে
খুন জখমের গল্পে নারীরা...
9 May 2024
2525 বার পড়া হয়েছে
পথের মানুষ…
3 May 2024
2335 বার পড়া হয়েছে
দহন
25 Apr 2024
3380 বার পড়া হয়েছে
আয়না অনেক গল্প জানে…
10 Apr 2024
4670 বার পড়া হয়েছে
গোলাপের নিচে...
28 Mar 2024
2880 বার পড়া হয়েছে
মুখে তার...
21 Mar 2024
1895 বার পড়া হয়েছে
লেনিনের যতো ভালোবাসার চিঠি…
14 Mar 2024
2660 বার পড়া হয়েছে
আমাদের ছুটি ছুটি ছুটি...
29 Feb 2024
5075 বার পড়া হয়েছে
যদি নির্বাসন দাও
22 Feb 2024
2650 বার পড়া হয়েছে
শীত চলে গেছে পরশু...
8 Feb 2024
2630 বার পড়া হয়েছে
মনে পড়লো তোমাকে বইমেলা...
1 Feb 2024
3235 বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব নির্জন বারান্দায়...
25 Jan 2024
2425 বার পড়া হয়েছে
ঋত্ত্বিক ঘটকের বউ…
11 Jan 2024
2945 বার পড়া হয়েছে
সুচিত্রা সেনের সানগ্লাস
4 Jan 2024
5110 বার পড়া হয়েছে
স্মৃতি পিপীলিকা…
28 Dec 2023
4050 বার পড়া হয়েছে
হাতে বোনা সোয়েটার আর…
21 Dec 2023
4765 বার পড়া হয়েছে
দেয়ালে উঠছে, দেয়াল ভাঙছে
13 Dec 2023
4445 বার পড়া হয়েছে
শীত এক মায়া
7 Dec 2023
4920 বার পড়া হয়েছে
উঁকি...
30 Nov 2023
3390 বার পড়া হয়েছে
দেশলাই জ্বালতেই…
23 Nov 2023
7760 বার পড়া হয়েছে
তোমার ও আঁখির তারায়...
9 Nov 2023
4720 বার পড়া হয়েছে
পাগল ...
26 Oct 2023
4550 বার পড়া হয়েছে
শীতের খোঁজে...
19 Oct 2023
4785 বার পড়া হয়েছে
বৃষ্টিতে থাকলো নির্জন সাইকেল...
5 Oct 2023
6115 বার পড়া হয়েছে
নারী ভয়ংকর
28 Sept 2023
9540 বার পড়া হয়েছে
তবুও সন্ধ্যা আসে…
14 Sept 2023
6395 বার পড়া হয়েছে
হিটলারের নেশা
7 Sept 2023
8775 বার পড়া হয়েছে
ক্লাপারবোর্ড
31 Aug 2023
12470 বার পড়া হয়েছে
মোনালিসার গোয়েন্দারা
23 Aug 2023
2705 বার পড়া হয়েছে
খেলা যখন…
15 Jun 2023
2570 বার পড়া হয়েছে
ইতি, চায়ের দোকান...
1 Jun 2023
5815 বার পড়া হয়েছে
লেখকদের ঘরবাড়ি
10 May 2023
2270 বার পড়া হয়েছে
মেয়েরা প্রেমের চিঠি লেখে না
20 Apr 2023
5780 বার পড়া হয়েছে
বৈশাখে আঞ্চলিক খাবার..
13 Apr 2023
2000 বার পড়া হয়েছে
স্ট্রিট ফাইটিং ইয়ার্স...
6 Mar 2023
2070 বার পড়া হয়েছে
হাওয়ায় লেগেছে শরতের গন্ধ।
4 Jan 2023
2620 বার পড়া হয়েছে
রাজনৈতিক ফুটবল
4 Jan 2023
2760 বার পড়া হয়েছে
হাসপাতাল থেকে…
23 Jun 2022
1890 বার পড়া হয়েছে
একলা মাদুর…
16 Jun 2022
1445 বার পড়া হয়েছে
পালাতে হয়েছিলো মোনালিসাকে
7 Jan 2021
2615 বার পড়া হয়েছে
হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান
29 Oct 2020
2160 বার পড়া হয়েছে
গডফাদার ৫২ বছরে
22 Oct 2020
1965 বার পড়া হয়েছে
দানব অথবা দানবীয়...
8 Oct 2020
1745 বার পড়া হয়েছে
দুই শীতের মাঝখানে
1 Oct 2020
1890 বার পড়া হয়েছে
আরেক বিভূতিভূষণ...
17 Sept 2020
1510 বার পড়া হয়েছে
আয়নায় একা উত্তম...
3 Sept 2020
1510 বার পড়া হয়েছে
দ্বিতীয় পথের পাঁচালী
27 Aug 2020
2060 বার পড়া হয়েছে
ভালো না-বাসার কাল
13 Aug 2020
1455 বার পড়া হয়েছে
যতদূর থাকো ফের দেখা হবে
5 Aug 2020
1675 বার পড়া হয়েছে
বিপজ্জনক মানিক
2 Jul 2020
1480 বার পড়া হয়েছে
নিখোঁজ হয়েছিলেন আগাথা ক্রিস্টিও
23 May 2020
1445 বার পড়া হয়েছে
আমাকে মনে পড়ে?
14 Apr 2020
1365 বার পড়া হয়েছে
আমি ইতালী থেকে লিখছি...
29 Mar 2020
1435 বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন...
12 Mar 2020
1945 বার পড়া হয়েছে
মুখোমুখি বসিবার...
27 Feb 2020
1455 বার পড়া হয়েছে
শীতে ভালোবাসার পদ্ধতি
6 Feb 2020
3035 বার পড়া হয়েছে
হিব্রু ভাষায় কাফকার চিঠি
30 Jan 2020
1505 বার পড়া হয়েছে
ইভা ব্রাউনের অন্তরাল
23 Jan 2020
1685 বার পড়া হয়েছে
শীতের স্মৃতি
9 Jan 2020
1670 বার পড়া হয়েছে
কেক কুকিজের গন্ধে ...
24 Dec 2019
1310 বার পড়া হয়েছে
জুতার ভেতরে...
19 Dec 2019
1250 বার পড়া হয়েছে
খুন হয়েছিলেন আলবেয়ার কামু
12 Dec 2019
2095 বার পড়া হয়েছে
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরিবাকরি
5 Dec 2019
1290 বার পড়া হয়েছে
পৃথিবী বিখ্যাত পোস্টার যত
28 Nov 2019
2115 বার পড়া হয়েছে
পেঁয়াজের পিঁয়াজী
21 Nov 2019
1660 বার পড়া হয়েছে
সিনেমায় দু’চাকার ঝড়
14 Nov 2019
1295 বার পড়া হয়েছে
শেষদৃশ্যে জুলিয়াস ফুচিক
7 Nov 2019
1930 বার পড়া হয়েছে
অভিমানে কি দেশ ছাড়বেন সাকিব
31 Oct 2019
1255 বার পড়া হয়েছে
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবেরা
17 Oct 2019
2315 বার পড়া হয়েছে
স্বপ্ন, দু:স্বপ্নের পুরুষ
10 Oct 2019
1460 বার পড়া হয়েছে
স্মৃতির রুমালে শিউলি...
3 Oct 2019
3875 বার পড়া হয়েছে
নির্ঘুম শহরে...
26 Sept 2019
1625 বার পড়া হয়েছে
ধূসর পাণ্ডলিপি
19 Sept 2019
1720 বার পড়া হয়েছে
এক্সপোজড...
12 Sept 2019
1395 বার পড়া হয়েছে
নারী ও শাড়ি ...
5 Sept 2019
1690 বার পড়া হয়েছে
পথের পাঁচালী’র ৬৪
29 Aug 2019
1590 বার পড়া হয়েছে
প্রেম আর যৌনতায় তারা
22 Aug 2019
1295 বার পড়া হয়েছে
যৌনতায়, বিদ্রোহে তাঁরা...
1 Aug 2019
1355 বার পড়া হয়েছে
খুনের সময়ে...
25 Jul 2019
1495 বার পড়া হয়েছে
পথ...
11 Jul 2019
1440 বার পড়া হয়েছে
যে কোন দলই ছিটকে পড়তে পারে
27 Jun 2019
1585 বার পড়া হয়েছে
বৃষ্টিকাল কবে আসবে নন্দিনী
20 Jun 2019
2015 বার পড়া হয়েছে
স্নানঘরের গান...
2 Jun 2019
1585 বার পড়া হয়েছে
আমার কোনো ভয় নেই তো...
23 May 2019
1355 বার পড়া হয়েছে
রেখার ফারজানা...
2 May 2019
1325 বার পড়া হয়েছে
হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী
25 Apr 2019
3010 বার পড়া হয়েছে
নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে...
18 Apr 2019
1510 বার পড়া হয়েছে
আপুদের পথের ভাই ...
4 Apr 2019
1700 বার পড়া হয়েছে
আমাদের প্রাণের বাংলা
28 Mar 2019
1695 বার পড়া হয়েছে
ক্যানভাসে ঝরে পড়া অসুখ
21 Mar 2019
1370 বার পড়া হয়েছে
শেষদৃশ্যে লোরকা
14 Mar 2019
1705 বার পড়া হয়েছে
নেশার ঘোরে লেখক
7 Mar 2019
2295 বার পড়া হয়েছে
একটি বইয়ের গল্পের সঙ্গে...
1 Mar 2019
1780 বার পড়া হয়েছে
বই করেছি চুরি...
21 Feb 2019
3275 বার পড়া হয়েছে
সকালবেলার গুলজার
7 Feb 2019
1475 বার পড়া হয়েছে
বইমেলায় প্রেম...
31 Jan 2019
1255 বার পড়া হয়েছে
অ্যান্ড এ স্পাই...
24 Jan 2019
2155 বার পড়া হয়েছে
আপনার সন্তান কি নিরাপদ
10 Jan 2019
1340 বার পড়া হয়েছে
পুষ্পহীন যাত্রাশেষে মৃণাল সেন
3 Jan 2019
1290 বার পড়া হয়েছে
নিষিদ্ধ যতো বই আর সিনেমা
13 Dec 2018
2425 বার পড়া হয়েছে
অসুখী মানুষ
6 Dec 2018
1540 বার পড়া হয়েছে
দাম্পত্য সম্পর্কে #MeToo
29 Nov 2018
1685 বার পড়া হয়েছে
দুই নম্বরি...
22 Nov 2018
1580 বার পড়া হয়েছে
অশ্লীল গল্প
8 Nov 2018
3930 বার পড়া হয়েছে
ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে
1 Nov 2018
2600 বার পড়া হয়েছে
লাভ রানস ব্লাইন্ড
25 Oct 2018
1490 বার পড়া হয়েছে
শেষ দৃশ্যে মান্টো
18 Oct 2018
1595 বার পড়া হয়েছে
আমাদের সেই বারান্দায়...
11 Oct 2018
1320 বার পড়া হয়েছে
শীতকাল কবে আসবে সুপর্না?
4 Oct 2018
1760 বার পড়া হয়েছে
কোমায় আমাদের সিনেমা
20 Sept 2018
1450 বার পড়া হয়েছে
আজো বিভূতিভূষণ...
13 Sept 2018
1425 বার পড়া হয়েছে
ভীষণ অচেনা ও একা...
6 Sept 2018
1285 বার পড়া হয়েছে
গোপন কথা...
9 Aug 2018
1445 বার পড়া হয়েছে
খোলা চিঠি ও চুমু
26 Jul 2018
1940 বার পড়া হয়েছে
ফ্রিডা কাহলো এক সূর্যমুখী ফুল
19 Jul 2018
1125 বার পড়া হয়েছে
ঝিনুক নীরবে সহো...
5 Jul 2018
1555 বার পড়া হয়েছে
ফুটবল- রঙ্গ ভরা বঙ্গে
28 Jun 2018
1325 বার পড়া হয়েছে
জানালা কী জানালো...
11 Jun 2018
2655 বার পড়া হয়েছে
বিষয় বাসনা
19 Apr 2018
1875 বার পড়া হয়েছে
মনের রঙ...
15 Feb 2018
1490 বার পড়া হয়েছে
দাড়ি কান্ড...
18 Jan 2018
2455 বার পড়া হয়েছে
চোর, চোর...
28 Dec 2017
3935 বার পড়া হয়েছে
বাঙালির আহার...আহা রে...
21 Dec 2017
2565 বার পড়া হয়েছে
চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে...
7 Dec 2017
2915 বার পড়া হয়েছে
ব্রুটাস তুমিও!
23 Nov 2017
1770 বার পড়া হয়েছে
কি বললেন সরয়ার ফারুকী...
2 Nov 2017
1665 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199