খেলা যখন…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 15 Jun 2023

2560 বার পড়া হয়েছে

Shoes

দশ দিনে একটা উপন্যাস লিখে দিতে পারবে এই নতুন প্ল্যাটফর্ম? ছন্দ মিলিয়ে কবিতা তো লিখেই দিচ্ছে, লিখছে প্রেমপত্রও। তাহলে এমন একটা সময় আসলেও আসতে পারে যখন লিখে ফেলা যাবে জয়েসের নতুন উপন্যাস, কাফকার গল্প অথবা লোরকার নতুন একটি কবিতা?

অর্ন্তজালে খবর নিয়ে জানা গেছে, দুনিয়া জুড়ে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ  এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন এখন। এমন বিদ্যুৎগতিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর নজির অন্য কোনও তথ্যপ্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের নেই। পরিসংখ্যান বলছে, সবার ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়ার মাত্র ১২০ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ লক্ষ স্পর্শ করে ফেলেছিলো ওপেন এআই সংস্থার চ্যাটজিপিটি। ফেসবুকের এই সংখ্যা ছুঁতে লেগেছিল দশ মাসের বেশি সময়।  

চ্যাটজিপিটি চিরাচরিত সার্চ ইঞ্জিনের থেকে আলাদা। গুগলে কোনও প্রশ্ন করলে রেজাল্ট হিসাবে আসে নানান পেজের লিংক। চ্যাটজিপিটি আমাদের পরিশ্রম থেকে রেহাই দিয়েছে। কোনও কিছু জানতে চাইলে নিজেই এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ লিখে তার উত্তর জানায়। সফটওয়্যারের কোনও কোড নিখুঁতভাবে লিখতে চাইলে ভুলভ্রান্তি ধরে দেয়। চিঠি লিখতে চাইলে ব্যাকরণগত গলদ ধরে দিয়ে তাকে শুদ্ধ করে তোলে। কোনও চিঠির প্রাপকের সঙ্গে নিজের রসায়ন কয়েক লাইনে বুঝিয়ে দিলে নিজের থেকেই ভাষার গঠন পাল্টে নতুন করে লিখে পাঠায়।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে নেট দুনিয়ায় রব তোলা মাধ্যম চ্যাটজিপিটি নিয়ে রইলো ‘খেলা যখন’।

চ্যাটজিপিটি নিয়ে হুল্লোড়টা বেশ ভালোই উঠেছে। চলতি বছরে প্রায় ৪০% মার্কিন পুরুষ তাদের ভালোবাসার নারীর জন্য ভ্যালেনটাইন নোট এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে লিখেছেন। ফলাফল কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো! সেই সমস্ত পুরুষের প্রেমিকারা এমন মধুর প্রেমপত্র পেয়ে রীতিমতো আনন্দিত। প্রাপকদের বড় অংশই বুঝতেই পারেননি এই চিঠি কোনও যন্ত্র লিখে দিয়েছে।

চ্যাটজিপিটি এখন নেট দুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে। এই সার্চ ইঞ্জিনের হাত কতদূর যাবে তা নিয়েও মানুষের জল্পনার শেষ নেই। অনেকে মন্তব্য করেও ফেলেছেন যে ভবিষ্যতে বড় বড় সাহিত্যিকদের নাম দিয়ে তাদের নতুন লেখা চাইলে হয়তো এই প্ল্যাটফর্ম তা-ও হাজির করে দেবে। আবার তর্ক করতে গিয়ে কেউ বলছেন, মানবিক আবেগ তৈরি করতে চ্যাট-জিপিটি অক্ষম। আর যাই হোক সে তো আর মানুষ নয়্। বিজ্ঞানীরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের পরীক্ষায় নাকি দেখা গেছে চ্যাট-জিপিটি যেমন ভয়ের পরিস্থিতি অথবা হাস্যকৌতুকের সৃষ্টি করতে পারে, তেমনই আলঙ্কারিক ভাষার প্রয়োগ অথবা ছন্দোবদ্ধ কবিতাও লিখে ফেলতে সক্ষম।  ইন্টারনেটে প্রাপ্ত যাবতীয় শিল্প-সাহিত্য তার মেমরিতে উপস্থিত এবং তাকে শেখানো হয়েছে কোন্‌ শব্দ বা কী ধরণের বাক্যগঠন কোন্‌ ধরণের আবেগের উদ্রেক করতে পারে। এরপর শুধু তার বিশাল স্মৃতিভাণ্ডার হাতড়ে কিছু উপাদান সংগ্রহ করে প্রস্তুত করা শিল্প আমাদের চমকে দেবার জন্য যথেষ্ট। চমকে ওঠার মতো তথ্যই বটে। এমন যদি কখনো হয়, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা তার ফর্মুলা অনুযায়ী একটা প্রাথমিক ছাঁচ তৈরি করে নিলো, তারপর কোনও মানুষ সেই সৃষ্টিতে মানবিক যোগের অভাবটুকু যোগ করে দিলো। শেষে, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আরও কিছুটা ‘অ্যাডজাস্ট’ করে তৈরি হয়ে গেল নতুন গল্প-নাটক-কবিতা? প্রশ্ন হল এক্ষেত্রে শিল্পী হিসেবে সেই মানুষটির কতটা কদর প্রাপ্য বা আদৌ তাকে আর মৌলিক লেখার কৃতিত্ব দেয়া যাবে তখন? আবার শিল্প যদি মানুষের চিন্তা-বুদ্ধি-মনন-এর প্রকাশ হয়ে থাকে, সেই শিল্প-কর্মে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার অংশীদার হওয়াটা কতোটা যৌক্তিক?

এই সময়ে শিল্প বা সাহিত্য যারা সৃষ্টি করছেন তাদের কাছে এমনতর প্রশ্নের খুব একটা মূল্য এখনও দাঁড়ায়নি এ কথা সহজেই বলে দেয়া যায়। কিন্তু তাতে ভবিষ্যতের একটা সময়ে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর শিল্পীর সংখ্যা না বাড়ার কোনও কারণ নেই। আর কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর শিল্প জনপ্রিয় হলে প্রকাশকরাও হয়তো সেদিকেই ঝুঁকে পড়বেন।

চ্যাট-জিপিটির পুরো নাম হল চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল টুলস্’। অর্থাৎ, এটি আলাপচারিতা বা চ্যাট করার একটি অ্যাপ বা চ্যাটবট সিস্টেম। এখানে ‘জেনারেটিভ’ শব্দের অর্থ তৈরি করা, ‘প্রি ট্রেন্ড’ অর্থাৎ প্রশিক্ষিত ট্রান্সফর্মার। চ্যাট জিপিটিতে ট্রান্সফরমার এমন একটি মেশিন লার্নিং মডেল, যা কোনও কিছুর বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারে। চ্যাট-জিবিটি হল একটি চ্যাটবট।

চ্যাট-জিপিটির একটি নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার আছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে এটি কাজ করে। এটি এখনও গুগলের মতো সরাসরি ইন্টারনেটে কাজ করতে অক্ষম। 

এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে স্মার্ট অ্যাপলিকেশন এই চ্যাট-জিপিটি। যেমন গুগলে আপনি কিছু সার্চ করলে সেটি বিভিন্ন লিংক, ছবি বা তথ্য দেয়। এই সার্চ ইঞ্জিন এত বেশি তথ্য সম্বলিত হয় যে, অনেক সময় আমরা যে তথ্য চাইছি সেটা না এসে সম্পূর্ণ আলাদা কোনও তথ্য আসে। এগুলোকে বলা হয় ইনফরমেশন পলিউশন। চ্যাট-জিপিটিতে এই সমস্যাগুলো নেই, সেকেন্ডের মধ্যে টেক্সট ফরম্যাটে যথাযথ উত্তর, এবং প্রয়োজনে ব্যবহারকারীর কথা মেনে সেই উত্তরকে আরও বেশি উন্নত করার ক্ষমতা রাখে এই অ্যাপটি। পোষ্যের বিরল রোগ সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, অ্যালগোরিদিম, আইনের জটিল প্রশ্নের উত্তর, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছে।

এই চ্যাটবক্সটিতে রয়েছে তিনশ বিলিয়ন শব্দের ভাণ্ডার। ব্যবহারকারী চ্যাট-জিপিটিতে গিয়ে যখন কোনও প্রশ্ন করছে তখন এটি সবসময় নির্ভুল উত্তর দেবে। উত্তরটির কোনও অংশ সঠিক বা পরিমার্জিত করার প্রয়োজন  হলে এটি সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিষয়টি সিস্টেমে রেকর্ড করে নেয়, ফলে এটির জ্ঞানের ভাণ্ডার ক্রমশ নির্ভুলভাবে বাড়ছে।

আমাদের ভাবনার জগৎটুকু আগামী পৃথিবীতে কোথায় নিঃশ্বাস ফেলবে কে জানে? খেলার মতো করেই বেড়ে উঠছে এক দানব যা একদিন আমাদের অন্দরমহলকেও গ্রাস করবে।

তথ্যসূত্র ও ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199