অভিমানে কি দেশ ছাড়বেন সাকিব

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 31 Oct 2019

1090 বার পড়া হয়েছে

Shoes
আহসান শামীম

দু:খজনক, অবিচার, দুর্ভাগ্যজনক এমন কয়েকটি শব্দ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে লেখাটি। সাকিব বিষয়ে সর্বশেষ খবর এখন, বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী নিবাস গড়তে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি সেখানে একটা ক্রিকেট স্কুল প্রতিষ্ঠার কথাও ভাবছেন তিনি। সাকিবের স্ত্রী শিশির ও কন্যা আলাইনা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বিয়ের সূত্রে সাকিব সেখানকার গ্রিনকার্ডধারী।

ক্রিকেটে ১ বছর নিষিদ্ধ হওয়ায় পর আলোচিত সাকিব আল হাসান চান দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে।একটানা দুই বছর দেশটিতে অবস্থান করলে সেখানকার নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য হবেন এই ক্রিকেটার। স্ত্রী শিশিরও চান সাকিব এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে থাকুক এবং সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করুন। স্ত্রীর সূত্রে নাগরিকত্ব পেতে আইনগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১৮ মাস টানা বসবাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাকিব সেই সুযোগ গ্রহণ করার  সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছেন। সময়ই বলে দেবে সাকিব আল হাসানের ভবিষ্যত। 

এই খবরটি আগের শব্দ তিনটিকেই ফিরিয়ে আনে। এই শব্দগুলো দিয়ে কি এখন নতুন করে সেলাই করা যায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রিটের ভবিষ্যৎ? বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন একজন মানুষকে ঘিরেই যতো আলোচনা আর বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই মানুষটি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি সাকিবকে বহিষ্কার করেছে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে তিনবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরও তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি) না জানানোর অপরাধে সাকিবকে ২ বছর নিষিদ্ধ করে বিশ্ব ক্রিকেটের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।তদন্ত কাজে সহযোগিতা করায় অবশ্য তারা সাকিবের ওপর যারপরনাই খুশী। আর সে আনন্দলাভের জন্য তারা ইনামও দিয়েছেন সাকিবকে, তার শাস্তির মেয়াদ এক বছরের জন্য স্থগিতও করা হয়েছে।

ঝড় উঠেছে বাংলাদেশে এই অনন্য ক্রিকেটারের উপর নেমে আসা শাস্তির বিধান নিয়ে। ঝড় উঠেছে বিশ্বক্রিকেটের অঙ্গনেও। প্রশ্ন একটাই-সাকিব তো জুয়াড়িদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে কোনো ধরণের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। উল্টো তিনি এ বিষয়ে তদন্তের কাজে সহায়তা করেছেন। তাহলে লঘু পাপে তার এই গুরুদণ্ড কেন?প্রশ্নটি জন্ম দিয়েছে অনেক বিষ্ময় প্রশ্নের। প্রশ্ন উঠেছে বিসিবির ভূমিকা নিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তার ট্যুইট অ্যাকাউন্টে সেই প্রশ্ন উত্থাপনও করে ফেলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিডিয়া এবং ক্রিকেটের অন্দরমহলের তোপের মুখ এখন বিসিবির দিকেই তাক করা।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনেও রইলো দেশের এক সম্পদসম ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ঘিরে দু:খজনক অধ্যায় নিয়ে কিছু কথা।

জুয়াড়ি আগরওয়াল

এই সাকিবকাণ্ডকে ঘিরে জমেছে অনেক প্রশ্ন। এমন অনেক হাইভোল্টেজ প্রশ্নের উত্তর নেই, মিলবেও না কোনোকালে। আবার কিছু প্রশ্ন উত্থাপনও করা সম্ভব নয়। সেসব শুধু অনুমান আর উপলব্ধির খাতাতেই লেখা থেকে যাচ্ছে।

সাকিবের এই বহিষ্কারের ঘটনা নিয়ে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মাইকেল ভন। মঙ্গলবার সাকিবের বিপক্ষে আইসিসির শাস্তির ঘোষনার পরপরই  ভনই প্রথম প্রতিক্রিয়ায় সাকিবকে কেন আজীবন বহিস্কার করা হলো না সেজন্য আইসিসির কঠোর সমালোচনা করেন ভন। পাকিস্তানের রমিজ রাজাও দারুনভাবে উপভোগ করেছেন আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে।এমন প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন তিনি। তবে ভারতের রাহুল দ্রাবির মানতে পারেননি আইসিসির বিধান।এক ট্যুইট বার্তায় তিনি সাকিবের শাস্তি লুঘু পাপে গুরু দণ্ড বলে দাবি করেন। দ্রাবিড় লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য, সাকিবের শাস্তিটা বেশি কঠোর হয়ে গেলো না ? সে কি ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলো? আমার মনে হয়, তার অপরাধ হলো আইসিসি আর এন্টি করাপশন ইউনিটকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে জানায়নি। এজন্য দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা একটু বেশিই কঠিন হয়ে গেছে। আশা করি আইসিসি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।’ ভারতের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ কর্তা সৌরভ গাঙ্গুলি মনে করেন, সাকিব ছাড়াও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। এমন বক্তব্য বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পর বিসিবি সভাপতির মুখেও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার। তাহলে কোথাও কি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিটা কারো কাছে ‍খুব কাম্য ছিলো?

আইসিসির আইনটা বড় বেশি অদ্ভুত।আকসুর বক্তব্যের সঙ্গে কোন খেলোয়াড় একমত না হলে সেই ক্রিকেটারের ক্রিকেট জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে এই আইন। আইনে সুযোগ নেই আপীল করার।  তাই মন থেকে হোক বা চাপে পরেই হোক আইসিসির শাস্তির বিষয়টা জানার পরপরই সাকিব গনমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন—‘যে খেলাটা আমি ভালোবাসি, সেটা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি সত্যিই ভীষণভাবে দুঃখিত। জুয়াড়িদের প্রস্তাবের বিষয়টা না জানানোর কারণে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা আমি পুরোপুরি মেনে নিয়েছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট খেলোয়াড়দের ভূমিকার ওপর নির্ভর করে থাকে এবং এক্ষেত্রে আমি আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করিনি।’ মঙ্গলবার আইসিসির কাছ থেকে নিষেদ্ধাজ্ঞা পাওয়ার পর বিসিবি প্রধানের পাশে দাঁড়িয়ে এমনই লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে হয়েছে সাকিবকে।এমন বক্তব্য দেওয়া ছাড়া সাকিবের হাতে বিকল্প পথ খোলা ছিলো কি?

আইসিসির এগারো পৃষ্ঠার রিপোর্ট জুড়ে আছে জুয়াড়ি আগারওয়ালের নাম। কে এই আগারওয়ার তাঁর কোন পরিচয় দেয়া নেই রিপোর্টে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগারওয়াল মূলত একজন হোটেল ব্যবসায়ী। চেন্নাই শহরে দুটি হোটেল আছে তার। ১২৯ কক্ষের ব্যবসায়িক হোটেল ফরচুন সিলেক্ট পামস আর পাঁচ তারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুর মালিক তিনি। ভিভিএ হোটেল প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান ও আইটিসি হোটেল গ্রুপের সদস্য এই জুয়াড়ি।রিয়েলএস্টেট ব্যবসার করতে করতে হঠাৎ করেই তিনি বনে যান প্রচুর অর্থের মালিক। তিনি দীপক আগারওয়াল নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম বিক্রম আগারওয়াল। তিনি ভারতীয় নাগরিক।। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় থাকা সাকিবের এই ঘটনার সঙ্গে তার নামও ক্রিকেট বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। সাকিবের এক পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন নম্বর পান দীপক আগারওয়াল। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির এই অধিনায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এই জুয়াড়ি।ক্রিকেটে পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আগরওয়াল অতীতে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্জাইজ ভিত্তিক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে বেশ কয়েকবার কারাগারেও গেছেন তিনি।আইসিসির কালো তালিকায় ওপরের দিকে আছে তার নাম। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এই আগরওয়ালের সাকিবের নিজের হোটেল রুমে বলা কথার রেকর্ড কীভাবে আইসিসির হাতে চলে গেলো? তাহলে কি সাকিব বিষয়টা বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তাদের জানিয়েছিলেন? বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী গতকাল দেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে এই বিষয়টি বিসিবির বর্তমান কর্তারা আগে থেকে জানতেন না।

কেউ কেউ ইঙ্গিত করেছেন আরেকটি লোখ টাকা মূল্যের প্রশ্নের দিকে। প্রশ্নটি হচ্ছে, দুই বছর আগে সাকিবকে জুয়াড়ি প্রস্তাব দিয়েছিলো।সাকিব জুয়াড়ির প্রস্তাবে সায় দেননি। তিনি ভুল করেছেন সেই কালো প্রস্তাবটি আইসিসি’কে না জানিয়ে। কিন্তু দুই বছর আগের প্রস্তাব আইসিসি এখন কার বা কাদের কাছ থেকে অবগত হলো?সাবের হোসেন চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড পেজে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় বিসিবি সবকিছুই জানতো এবং পাপন সাহেব যে বলেছেন, তার কোনো ধারণাই ছিলো না, কথাটা সত্য নয়। দু:খ লাগলেও এটাই বলতে হচ্ছে।২২ অক্টোবরের যে ভিডিও ক্লিপটা, তাতে মনে হচ্ছিলো পাপন সাহেব আইসিসির ঘোষণার জন্য অধৈরয হয়ে অপেক্ষা করছিলেন।’

কিছুদিন আগে আচমকাই অশান্ত হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশর ক্রিকেট অঙ্গন। ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য ক্রিকেটাররা ঘোষণা দিয়েছিলে খেলা থেকে সরে দাঁড়ানোর। ভারত সফরের আগে বিনা নোটিশে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের কারন এখনও বোধগম্য না হলেও এই আন্দোলনের সম্মুখভাগে দেখা গেছে সাকিব আল হাসানকেই।এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিসিবি’র বৈঠক, দুইপক্ষের কঠোর অবস্থান এবং ৭২ ঘন্টার মধ্যেই মাত্র মিনিট দশেকের আলোচনায় বরফ গলে যাওয়ার ঘটনা সবার কাছেই ছিলো বেশ বিষ্ময়ের। অনড় দুইপক্ষের সন্তোষজনক সভায়, বিসিবি দাবী মেনে নেন খেলোয়াড়দের। সেই ৭২ ঘন্টায় দুই পক্ষের কথোপকথন বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে সাকিব আল হাসান ছিলেন ঘটনার কেন্দ্রে এবং তার বিরুদ্ধেই এক ধরণের পরোক্ষ রোষ প্রকাশিত হয়েছিলো কোনো কোনো মহলের। পাতানো খেলা নিয়ে দুই পক্ষই গনমাধ্যমের কাছে খোলামেলা কথা বললেও ক্রিকেটারদের সেই আন্দোলনকে সহজে গ্রহন করতে পারেননি বিসিবি বস। কৌশলগত দিক থেকে বিচার করলে নাজমুল হাসান পাপন কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সংকট নিয়ে। কূটনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বনে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ সামনে রেখে খেলোয়াড়দের এমন খেলাবিমুখ আচরণের সমালোচনাও করেছেন তিনি। এমন একটি ঘটনা বাংলাদেশকেও যে আন্তর্জাতিক ভাবে একটু ব্যাকফুটেই ফেলে দিয়েছিলো তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই সাকিব আল হাসানকে ঘিরে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো অনেকের মুখেই তুলে দেয় সেই পুরনো কথা-ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। সাকিব আর দেশের ক্রিকেটানুরাগীদের অভিযোগের আঙুলটিও অবধারিত ভাবে উঠে যায় বিসিবি প্রধানের দিকেই।

আইসিসির অ্যান্টি করাপশন আইন অনুযায়ী সাকিব আল হাসানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি। সাকিবকে সাজা প্রদানের সিদ্ধান্তের ১১ অনুচ্ছেদে অপরাধ সংঘঠনের ৪টি ঘটনা ও ৩টি দিন-তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত ২০১৭ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি আগরওয়ালের সাথে সাকিবের বেশকিছু হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চালাচালি হয়। দ্বিতীয়ত, ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি আগরওয়াল সাকিবকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায়। তৃতীয়ত, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি আগারওয়াল আবার সাকিবকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠায়।  চতুর্থ,  ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সাকিব  আইপিএল ম্যাচ খেলার দিন আগারওয়াল হোয়াটসঅ্যাপে সাকিবকে মেসেজ করে। আইসিসি ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা বিষয়টি নিয়ে।

আইসিসি সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির অ্যান্টি করাপশোন কোড- এর অনুচ্ছেদ ২.৪.৪ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ৩টি ঘটনায় চার্জ আনে। এই তিন অপরাধ সংঘঠনের সময় ও তারিখ আইসিসির সিদ্ধান্তের ১৮ দফায় উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে-

‘namely on 19 January 2018, on 23 January 2018 and on 26 April 2018.’

আইসিসি যে Anti-Corruption Code  এর যে বিধান লঙ্ঘনের জন্য সাকিবকে সাজা দিয়েছে তা কার্যকর হয়েছে ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। যা ICC Anti-Corruption Code এর ১১.৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে-

‘The Anti-Corruption Code shall come into full force and effect on 9 February 2018 (the “Effective Date”). It shall not operate to disturb any decisions and/or sanctions previously made under predecessor versions of the Anti-Corruption Code (including the Code of Conduct) or anti-corruption rules of National Cricket Federations. Nor shall its substantive provisions apply retrospectively to matters pending before the Effective Date. Instead, any case pending prior to the Effective Date, or brought after the Effective Date but based on acts or omissions that occurred before the Effective Date, shall be governed (a) as to substance, by the predecessor to the Anti-Corruption Code that was in force at the time of the alleged offense, subject to any application of the principle of lex mitior by the hearing panel determining the case; and (b) as to procedure, by this Anti-Corruption Code.’

অর্থাৎ এই কোড কার্যকরের তারিখের পূর্বের কোন ঘটনার ক্ষেত্রে  ‘ retrospective effect’ বা ‘পেছনের দিকে কার্যকর’ প্রয়োগ করা যাবে না। তাই এই কোড কার্যকরের তারিখের পূর্বের ঘটনার জন্য বর্তমান কোডের অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাকিবকে সাজা প্রদান করা যাবে না।সাকিবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ঘটনার তারিখগুলো হলো, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ এবং ২৬ এপ্রিল ২০১৮। অর্থাৎ দুটি ঘটনা ICC Anti-Corruption Code কার্যকরের অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির আগের। ফলে উক্ত দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে এই কোড অনুযায়ী শাস্তি প্রদান সম্পুর্ন বেআইনী। কারণ, ১৯ জানুয়ারি ও ২৩ জানুয়ারির ঘটনার সময় ২০১৮ সালের ICC Anti-Corruption Code এর অনুচ্ছেদ ২.৪.৪ এবং ৬.২ এর কোন অস্তিত্বই ছিল না। ফলে উক্ত দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে Code এর অনুচ্ছেদ ২.৪.৪ লঙ্ঘণের অপরাধে ৬.২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাকিবকে সাজা প্রদান সম্পুর্ন বেআইনী।

যদিও আইসিসির ২০১৪ সালের একটি ICC Anti-Corruption Code ছিল। তবে উক্ত কোডের অধীনেও কিন্তু সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যেহেতু বর্তমান কোড অনুযায়ী কেবল ২৬ এপ্রিলের ঘটনা প্রযোজ্য তাই এই কোডের ৬.২ অনুযায়ী খুব বেশী হলে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা হতে পারতো।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাকিব আপিল কিংবা রিভিউ কোনটাই করতে পারবেন না।

আইসিসি’র যে আইনে সাকিব নিষিদ্ধ করা হলো, সেই আইন পাশ হয় ২০১৯ এর  ফেব্রুয়ারী মাসে।এই আইন অনুমোদনের পূর্বের কোন ঘটনায় জড়িত কোন ঘটনার বিচার এই আইনে হওয়ার কথা না। সাকিবের বিষয় এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে তিনটা ইস্যুর দুটি ইস্যুকে জড়িত করে বিতর্কিত হয়েছে আইসিসি। মজার বাপার হচ্ছে যে আইপিএল-এর যে ম্যাচ নিয়ে কথাগুলো রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই ম্যাচে সাকিব ৪ ওভার বল করে ১৮ রানে ২ উইকেট আর ব্যাট হাতে ২৮ বলে ২৮ রান তুলে ম্যাচ সেরার হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের টেষ্ট ও টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের শাস্তির বিষয়টা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে মনে করেন, বিসিবি’র সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘সংকটে ক্রিকেট’ শীর্ষক বৈঠকে তিনি একথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে বোর্ড ও আইসিসির সমন্বয় থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সাবের বলেন, ‘একই তারিখে কয়েকটি ঘটনা ঘটলো। আইসিসির রিপোর্টে আছে বিস্তারিত। ২৯ তারিখ সাকিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেরা করা হলো। ওই তারিখেই সাকিব স্বীকার করলো, লেটার অব এগ্রিমেন্ট সই করলো। একই দিনে আইসিসি এই সংবাদ তাদের ওয়েবসাইটে দিলো। ২৯ তারিখেই বিসিবির মিটিং চললো। একই দিনে এই ঘোষণার পর ইন্ডিয়ার টিম ঘোষণা করা হলো। সব একই দিনে! তার মানে এই কাজটি নিশ্চয়ই আইসিসির সঙ্গে সমন্বয় করে ক্রিকেট বোর্ড করেছে। না হলে ক্রিকেট বোর্ডের সভা কেন বিকাল ৩টা থেকে শুরু হবে? শুরু হলেও কেন আইসিসি’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পর্যন্ত চললো। এত ঘটনা একদিনে কীভাবে হয়? তার মানে তারা জানতো ২৯ তারিখে আইসিসির সিদ্ধান্ত আসবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিসিবি দ্রুত মিডিয়ায় একটি প্রেসনোট দিয়ে দিলো এবং এক ধরনের স্বাগত জানালো। আইসিসির যে রায়, এখানে তারা তিনটি ঘটনার কথা বলছে। আমার মনে হয়, এই রায়ের ময়নাতদন্ত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এরকম আরেকটি ঘটনা না ঘটে। আইসিসির নতুন কোড অব কন্ডাক্ট কিন্তু ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে। কোড অব কন্ডাক্ট চালু হওয়ার পর থেকে ধরলে দুটি অপরাধে সাকিব অভিযুক্ত না। সাকিবের যদি দুটি অপরাধ বাদ হতো তাহলে কিন্তু একটা থাকে। তার জন্য সাজা হতো ছয় মাস। কিন্তু ছয় মাস আর এক বছরের সঙ্গে আরও এক বছরের ব্যবধান অনেক। এই জায়গায় বিসিবির উচিত ছিলো তাদের কাছ থেকে জানা।’

ঘটনা যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেনো আইসিসি প্রদত্ত সাকিবের শাস্তি সংকট সমাধানের শেষ বলে মনে হয় না।হয়তো পরিস্থিতির এক পর্যায়ে সাকিবের সঙ্গে বিসিবি ও চুক্তি ভেঙ্গে দেবে। এমন শঙ্কা থেকেই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে মনের মধ্যে চলে আসে, সাকিব কি আদৌ মাঠে ফিরতে পারবেন?

লেখার শুরুটা হয়েছিলো কয়েকটি নেতিবাচক শব্দ দিয়ে। শেষের লাইনেও রয়ে গেলো আরেকটি তেমন শব্দ-হতাশা।

ছবি: গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199