আপনার সন্তান কি নিরাপদ

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 10 Jan 2019

1180 বার পড়া হয়েছে

Shoes

কতটা নিরাপদ আপনার সন্তান? তাকে তাড়া করে ফিরছে যৌন নির্যাতনকারীর পাশবিকতা, ব্যর্থ প্রেমিকের আক্রমণ। এই লেখাটি তৈরী করার মাত্র দুদিন আগে দুটি ছোট শিশু যৌন লালসার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। আপনাকে তাড়া করছে আপনারই অমনযোগ, সন্তানকে ঘিরে ধরছে এই অচেনা সময়ের কুঠুরিতে জমা হওয়া অন্ধকার আর বিপদ। আড়াই বছরের শিশুও নিরাপদ নয় যৌন নির্যাতনকারীর হাত থেকে। নিরাপদ নয় আপনার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েটি। ব্যর্থ প্রেমিকের প্রতিহিংসা খুন করতে চায় তাকে। আপনার ছেলেটি ধর্মের ভুল ব্যাখ্যাকারীদের কবলে পড়ে আত্নার আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নিচ্ছে ধর্মীয় জঙ্গীবাদকে। জীবনের সংকট অনুবাদ করতে চাইছে নেশার হাত ধরে। 

পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালে, টেলিভিশন খুললেই জানা যাচ্ছে এইসব ভয়ঙ্কর সংবাদ। মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিজেদের নষ্ট অবয়বের। কোথায় যাচ্ছি আমরা? এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই, নেই খোঁজার চেষ্টাও। এক অস্থির, উদভ্রান্ত সময় অতিক্রম করছে আপনার সন্তান। সেখানে আছে নৈতিকতার ক্ষয়ে যাওয়া মুখ, আছে শিক্ষার মানের অবনতি, আছে সন্তানের প্রতি বাবা মায়েদের অবহেলা।
জানি, এই গভীর সংকটের সমাধান একদিনে সম্ভব নয়। সম্ভব নয় একটি প্রচ্ছদ কাহিনি লিখে সব দায় থেকে অব্যাহতি নেয়া। সংকট একদিনে তৈরী হয়নি। সমাধানও একদিনেই পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন করতে হবে নিজেদের আত্নাকে, প্রশ্ন করতে হবে সমাজ কাঠামোকে। প্রশ্ন করতে হবে নিজেদের জীবন যাপনের প্রক্রিয়াকে। হয়তো উত্তর মিলবে।
এই সংখ্যা প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে ‘কতটা নিরাপদ আপনার সন্তান’।

বহুকাল আগে শেখা একটি লাইন-আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছে এটাই বড় চাওয়া। পৃথিবীর কোন বাবা-মা-ই নির্ভুল নন। কিন্তু সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তাদের গায়ে লেগে যায় একটি তকমা যার নাম দায়িত্ব। এই দায়ভারের বিষয়টা সাম্প্রতিক সময়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন একটি কথা বোধ হয় সহজেই বলা যায়, সন্তানকে মানুষ করতে হলে বাবা-মাকে আগে মানুষ হতে হবে। সন্তানের দুধ ভাতের উৎস নিশ্চিত করা অপরাধ নয়। কিন্তু ভাবতে হবে, সেই দুধ ভাতের আয়োজন কোন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। সেখানে যদি অনৈতিকতার বিষয়টি জড়িয়ে যায় তাহলেই সংকট। অভিযোগের এই তর্জনি এখন অভিবাবকদের দিকে উঠেছে। একজন বাবা অথবা মা নিজের সন্তানকে সবচাইতে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু সেই গুরুত্ব দিতে গিয়ে সন্তানের সব বায়না, সব আবদার মেটানোর কাজটি তারা করে ফেলছেন। ফলে আপনার সন্তানের মধ্যে বাঁধাহীন পাওয়ার আকাঙ্খা ভিন্ন এক পৃথিবীর জন্ম দিচ্ছে। সেই পৃথিবীর সম্রাটে পরিণত হচ্ছে সে। আমরা কি একবারও ভেবে দেখছি এই ঘটনাগুলো তাকে কতটা আধিপত্যবাদী করে তুলছে? না, ভাবছি না। আর ভাবছি না বলেই সন্তান হয়ে উঠছে দুর্বিনীত।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবল সন্তানের দুধভাতের আয়োজন নিশ্চিত করলেই হবে না, সেই আয়োজনের উপায়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে অভিবাবকদের। এসব ক্ষেত্রে তারা আরেকটি বিষয়য়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশী। বিষয়টি হচ্ছে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা।

এই ব্যস্ততার যুগে সবাই নিজের কাজ নিয়ে ছুটছে। সন্তান স্কুলে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরছে। বাড়ি ফিরে ল্যাপটপ অথবা মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে। এখন বহু অভিবাবক বিষয়টা দেখেও দেখছেন না। জানতে চাইছেন না তারা কী করছে? আর এই জানতে-না চাওয়ার বিষয়টাই তাদের অজ্ঞাতে সন্তানের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরী করছে। তার জগৎ আর অভিবাবকের জগৎ আলাদা ও অচেনা হয়ে উঠছে।
মোবাইল আর ইন্টারনেট কি দেখছে আপনার সন্তান? তারা কী দেখছে নেট সার্ফিং করে? এই প্রশ্টনটা আপনার মনের মধ্যে উঁকি দিয়েছে কখনো? ভেবেছেন, আপনার সন্তানের মোবাইল ফোনটা কাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে? হয়তো ভেবেছেন, হয়তো ভাবেননি। কিন্তু কখনও তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে, বিশেষ করে ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলেছেন? না বলে থাকলে, তাদের সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি বলে মনে করছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ। ইউনিসেফ বলছে, শিশুদের সঙ্গে ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলতে হবে। তবে কথা বলার পাশাপাশি কিছু কৌশলও অবলম্বন করতে হবে যা আপনার শিশু সন্তানকে ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি পরিশীলিত দিক নির্দেশনা দেবে।
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ইউনিসেফ, টেলিনর গ্রুপ ও মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন একটি অভিভাবক গাইড প্রকাশ করেছে। গাইডটিতে বলা হয়েছে, শিশুদের (সন্তান বলতে শিশুদের বোঝানো হয়েছে) সঙ্গে কিভাবে ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলবেন। এই গাইডটিতে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, আগামীতে এশিয়ার উন্নয়শীল দেশগুলোর ৫০ কোটিরও বেশি শিশু মোবাইলফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশ করবে। সেই শিশুরা কি ইন্টারনেটে নিরাপদে থাকতে পারবে বা ইন্টারনেট কি তাদের জীবনে কোনও পরিবর্তন বয়ে আনতে পারবে—এসব উত্তর খোঁজা হয়েছে গাইডটিতে।

ইন্টারনেটে কী নেই? ভালো আছে, মন্দও আছে। তাই না বুঝে বা স্রেফ কৌতূহলের বশে শিশুরা বিপথে চলে যেতে পারে। সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায় হিসেবে বলা হয়েছে, জ্ঞান অর্জন ও তথ্য অনুসন্ধান, একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ, বিনোদন ও সুযোগ সৃষ্টির জন্য। তবে একইসঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, কেন শিশুদের সঙ্গে ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলতে হবে। গেম খেলা, ইন্টারনেটে চ্যাট করা, বন্ধুদের মেসেজ পাঠানো—এ সব কিছু এখন প্রায় সবার প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকালের শিশুরা খুব অল্প বয়স থেকেই এসব করতে শিখছে। বাবা-মায়ের উচিত হবে, সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য তৈরি করা। যেন তাদের সন্তান বাস্তব জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও যথেষ্ট সময় দেয়।
বাবা-মায়ের কাজ হবে ইন্টারনেট দুনিয়া এবং বাস্তব জীবনের মাঝে সমন্বয় করা। তাদের দিনের কাজগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া। স্কুল ও হোম ওয়ার্কের জন্য একটি সময়, অনলাইনে গেম খেলা ও বিনোদনের জন্য একটি সময়, বাসার বাইরে গিয়ে খেলার জন্য একটি সময় এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দেওয়া। গাইড পরামর্শ দিচ্ছে, এগুলো ঠিকঠাক করা হলে আপনার সন্তান ইন্টারনেটে নিরাপদে থাকবে এবং সমাজে সবকিছুতেই তার অংশগ্রহণ থাকবে।

অভিভাবকদেরই সন্তানকে গেম খেলা, ডিজিটাল আসক্তি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং ভাইরাস ও ম্যালওয়ারের ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে। বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কনটেন্টের প্রতি তাদের আগ্রহী করে তুলতে বলা হয়েছে।
অভিভাবকদের উদ্দেশে গাইডে আরও বলা হয়েছে, গেম থেকে সন্তানকে দূর রাখতে একটি সময়সীমা বেঁধে দিন এবং তাকে জানান। গেম আসক্তি ঠেকাতে একটি টাইমার বা মনিটরিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন, যেন ওই নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বা কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়।
সন্তান ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে গেলে তার সঙ্গে বসুন, আপনাদের উদ্বেগ নিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশে খোলামেলা ও ইতিবাচক কথা বলুন এবং একটি নীতিমালা তৈরি করে দিন। তবে কখনও আসক্তদের কাছ থেকে কম্পিউটার একেবারে সরিয়ে না নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বরং ধীরে-ধীরে এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। একবারে সরিয়ে নিতে গেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্বিধা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়ারও পরমর্শ দেওয়া হয়েছে।

অভিভাবক গাইডটিতে ফেসবুক, ইউটিউব, স্যাট্টুলেট, আস্ক এফএম, ইন্সটাগ্রাম, টিনডার, ভক্সার, ইক ইয়াক, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট, ভাইন, কিক মেসেঞ্জার, শটস অব মি অ্যাপ ও ওয়েবসাইট সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন (বয়সসীমা সংক্রান্ত নিয়মাবলী দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা) থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিভাবকেরা সন্তানের সঙ্গে কথা বলবেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের শিষ্টাচার সম্পর্কে জানাবেন। সব সময় ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না হলেও তাদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারবিধি তৈরি করে দিতে বলা হয়েছে। তবে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে পাসওয়ার্ড বিষয়ে। বলা হয়েছে, আপনার সন্তানকে বলুন, তারা অন্য কাউকে তাদের পাসওয়ার্ড যেন না দেয়।
তার আগে আপনার সন্তান কোন বয়স থেকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ও কম্পিউটার ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
আপনার সন্তান সঠিক ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক ট্র্যাকে আছে কি না, তা-ও পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তারা শুধু প্রযুক্তিই ব্যবহার করে না, প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ কোনও জ্ঞান রাখে কি না, সে বিষয়েও বাবা-মাকে খোঁজ নিতে হবে। মাঝে মাঝে প্রযুক্তির সাধারণ ব্যবহার বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করা যেতে পারে। ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলে বোঝা যাবে ঠিক ট্র্যাকেই আছে।
অনলাইনে হয়রানি থেকে দূরে থাকার জন্যও তাদের কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে।

কন্যা সন্তান তো সব সময় বাড়ির নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই থাকে। তাই প্রয়োজন নেই তার জন্য বাড়তি সতর্কতার। কিন্তু আসলেই কি বিষয়টা এরকম। চরপাশে আমরা কী দেখছি? দুদিন আগেই দুটি শিশু কন্যা সন্তান প্রাণ হারিয়েছে। তাদের ধর্ষণও করা হয়েছে। এ ধরণের ঘটনা প্রায় প্রতিদিন আমাদের চারপাশে ঘটে যাচ্ছে। তৈরী করছে আতঙ্কের অন্ধকার। ঘটনাগুলো আঙুল তুলে বলছে সমাজে আমাদের মেয়ে সন্তানরা নিরাপদ নয়।
সমাজবিজ্ঞানের গবেষকরা বলছেন, এই প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরী হয়নি। মূল্যবোধ, নৈতিক অবক্ষয়, নিয়ন্ত্রণহীন আকাশ সংস্কৃতি আর ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে পৌঁছে দিয়েছে সর্বনাশের কিনারায়। তাদের অনেকের মতামত বিচারহীনতা আর সামাজিক প্রতিরোধের অভাবও এই সংকটের আরও দুই কারণ।

এখানেও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন পিতা-মাতা ও সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বা তৈরিতে কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরী।
• টিনএজ বয়সে আপনি কি কি করতেন তা আপনার সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন- আমরা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছোট বেলার মধুর স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে থাকি। তাই সেই সব স্মৃতিগুলো জীবিত রাখতে আপনার সন্তানের সঙ্গে বলুন।
• নিজের খারাপ লাগা, ভাল লাগা সন্তানকে বলুন এবং তার ভাল ও খারাপ লাগার এবং মনের কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন- কাজের ব্যস্ততায় সন্তানের সঙ্গে দৈনন্দিন বিভিন্ন অনুভূতি বলা হয়ে ওঠেনা। হয়ত সন্তানেরও পড়াশুনার চাপ, নিত্যদিনের জিনিসের দেয়া নেয়া পূরণ করতে করতেই দিন চলে যায়। কিন্তু যদি একটু সময় বের করে নিয়ে নিজের মনের অনুভূতি আপনার টিনএজ সন্তানের কাছে বলেন তাহলে তার মধ্যে সহমর্মিতা ও শোনার দক্ষতা তৈরি হবে।
• ছেলে-মেয়েদের পছন্দের কাপড়, ট্রেন্ড বা স্টাইল নিয়ে সমালোচনা না করে সমর্থন করুন- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি, পছন্দ, স্টাইল এর পরিবর্তন বা আবর্তন ঘটে। মাঝে মাঝে আপনার টিনএজ সন্তানের পোশাক-পরিচ্ছদ বা বেশভূষা আপনার কাছে অদ্ভুত বা বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু তার কাছে সেইটাই সৌন্দর্য্য প্রকাশ বুঝায়। তাই তার মত করে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে তার পছন্দের যে জিনিসগুলো আপনার কাছে ভাল লাগে তা প্রকাশ করুন।
• সন্তানের দোষ না খুঁজে, তাদের গুণগুলো নিয়ে কথা বলুন- উঠতি বয়সী সন্তানের অনেক রকম অভ্যাস বা আচরণ আপনার জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত গেইম, মোবাইল, বা ইন্টারনেট ব্যবহার। তার দোষত্রুটি একদমই থাকবে না তা আশা না করে, সেটিকে যতটা সম্ভব মেনে নিন এবং তার গুণগুলো নিয়ে কথা বলুন।
• সন্তানের বন্ধুদের প্রতি ইতিবাচক ধারণা রাখুন। তাদের সমালোচনা করা বন্ধ করুন। সন্তানের বন্ধুদের প্রতি মানুষ হিসেবেই শ্রদ্ধা বজায় রাখুন। তাদের খারাপ দিকটি যেমন সমালোচনা করছেন তেমনি ভালদিকগুলোর ও প্রশংসা করুন। এবং ভাল বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে কি লাভ তা বয়োঃসন্ধিকালের আগে থেকেই বুঝিয়ে দিন।
• সন্তানকে বন্ধু বাছাইয়ে সহযোগীতা করুন। এই সময় ছেলেমেয়েরা অনেক বেশী কৌতুহলপ্রবণ থাকে তাই বিতর্কিত বন্ধু তৈরির প্রতি মনোযোগ আসতে পারে। কি রকম বন্ধুদের সঙ্গে আপনার সন্তান চলাফেরা করবে তা বলে না দিয়ে বরং কিভাবে সুস্থ বন্ধুত্ব মানুষকে সহযোগীতা করে, কি কি উপকার হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
• একের অধিক সন্তানের মধ্যে বা সন্তানকে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করুন।
• সন্তানের ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাকে হেলা না করে মূল্যায়ন করুন- টিনএজ বয়সে অনেক রকম অদ্ভুত চিন্তা তাদের মাথায় আসে বা তারা খুব আনন্দ পায় কথাগুলো বলে। যা হয়ত অন্য কোন বয়সে সে চিন্তাই করতে পারত না। এসকল চিন্তাগুলো তাকে লিখে রাখতে উৎসাহীত করুন।
• যখন ব্যস্ত থাকবেন বা মানসিক কোন চাপের মধ্যে থাকবেন তখন সন্তানের সঙ্গে আপনার আচরণ এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন- যখন আপনি নিজেই কোন বিষয় নিয়ে মানসিকভাবে অস্থির অবস্থায় আছেন তখন সন্তানকে শাসন করা থেকে বিরত থাকুন।
• বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সন্তানকে সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন- বয়োঃসন্ধির কিছু আগে থেকেই তাকে সামাজিকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে পারেন। অনেকসময় এই বয়সী বাচ্চারা লোক লজ্জার ভয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান সমূহ এড়াবার চেষ্টা করে কারণ তখন তার মধ্যে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে যা সে মেনে নিতে পারেনা। তার ভীতি এবং অস্বস্তি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। তার পাশে আপনি কিভাবে আছেন তা তাকে বুঝিয়ে বলুন।
• প্রতিদিন অন্তত একবার আপনার টিনএজ সন্তানকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিন বা বুকে জড়িয়ে ধরুন- সন্তান বড় হয়ে গেলে পিতা-মাতা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু এই দূরত্ব কমাতে তাকে হাত দিয়ে মমতা নিয়ে স্পর্শ করুন।
• বয়োঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনজনিত পড়াশুনার বিষয়বস্তু বা বই বা লেখা পড়তে উৎসাহিত করুন এবং যতটা সম্ভব হয় তাদেরকে জানান- অনেক টিনএজ ছেলেমেয়ে এই বয়সের পরিবর্তন সম্পর্কে জানে না, বা জানলেও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে অনেকসময়ই ভুল তথ্য পায়। তাই আপনার সংগ্রহে কোন আর্টিকেল, বই, তথ্যকণিকা থাকলে তাকে পড়তে উৎসাহিত করুন।
• বার বার এক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন- কোন একটি বিষয় তারা অনেকসময কথা শুনছে না বা তার মত করেই কোন কাজ করতে চায়। তখন একই কথা বারবার বলা থেকে বিরত থেকে সে কি কারণে তার মত করে ভাবছে তা দেখুন।
• সন্তানের কোন অন্যায় বা ভুল হয়ে গেলে তা ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলুন এবং এধরনের ঘটনা থেকে আপনার প্রত্যাশা কি তা তাকে পরিস্কার ভাবে জানান।
• পেশা বা পড়াশুনাজনিত পছন্দের ব্যাপারে জোর করা থেকে বিরত থাকুন।
 

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199