হিটলারের নেশা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 7 Sept 2023

8360 বার পড়া হয়েছে

Shoes

হিটলার প্রচার করতেন তিনি ভেজিটেরিয়ান এবং অধূমপায়ী। সুস্থ, সবল এক আর্য জাতি তৈরির স্বপ্নে বিভোর পৃথিবীর এই ভয়ংকর স্বৈরশাসকের এরকম অনেক ভড়ং ছিলো। ভড়ংটা স্বৈরাচারীদের বড় একটি অস্ত্র।প্রচারণায় আছে কিন্তু বিশ্বাসে নেই। হিটলার তার তত্ত্ব পৃথিবীর মানুষকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা বলে, শেষ দৃশ্যে তাকে বেছে নিতে হয়েছিলো আত্মহননের অন্ধকার পথ।

হিটলারের কাজকারবার নিয়ে পৃথিবীতে আজও গবেষণার শেষ নেই। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে ১৯৪১ সালে হিটলার নানান ধরণের মাদকদ্রব্যের ইনজেকশন নিতেন। আর এগুলো তাকে সরবরাহ করতেন  ব্যক্তিগত চিকিৎসক থিওডর মোরেল।

এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে হিটলারের অদ্ভুত কিছু কায়কারবার নিয়ে ‘হিটলারের নেশা’।

ক্ষমতার আসক্তির বাইরে আর কী কী ছিলো সেই নেশাদ্রব্যের তালিকায়। থিওডর মোরেলের ব্যক্তিগত রোচনামচা জানাচ্ছে, অক্সিকোডিন, মেথামফেটামিন এবং মরফিনের নাম। মেথামফেটমিন এক ধরণের বিশেষ ক্রিস্টাল মেথ যা মানুষের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে। কখনো বিষাদ কাটিয়ে মনে নিয়ে আসে আনন্দ। অক্সিকোডিন ব্যথানাশক ওষুধ। কিন্তু এটি এক ধরণের আসক্তি তৈরি করে মানবদেহে। এখনও বহু মানুষ নেশা করার প্রয়োজনে এই ওষুধ সেবন করে। হিটলার মুখে যতোই ভেজিটেরিয়ান বা অধূমপায়ী তত্ত্ব প্রচার করুক না কেনো তখন মাদকদ্রব্যের প্রশ্রয়ের ওপর তাকে নির্ভর করতে হতো।তার নাজি পার্টির সদস্যরাও তাদের গুরুর মতোই এ ধরণের নেশায় আসক্ত ছিলো। যুদ্ধ ক্ষেত্রে জার্মান সৈন্যদেরও সরবরাহ করা হতো মেথ নামের ক্রিস্টাল। ধারণা করা হয়, তাতে যুদ্ধের মাঠে নাজি বাহিনী আরও বেশি উন্মাদ হয়ে উঠতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন অন্তিম পর্যায়ে তখন হিটলার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না। হাঁটাচলা করার সময় তার শরীর কাঁপতো। হিটলারে বিষয়ে গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন তার পার্কিনসন্স ডিজিজ হয়েছিলো। আবার অনেকের ধারণা, অতিমাত্রায় আসক্তি তৈরি হওয়ার কারণে হিটলারের শরীরে কাঁপুনি দেখা দিয়েছিলো। নেশা করার উপাদান যথাসময়ে না-পাওয়ায় ওই সময়ে হিটলার বাংকারে বেশিরভাগ সময় উত্তেজিত অবস্থায় থাকতেন। গবেষকদের ধারণা নেশাদ্রব্য না পাওয়ায় তার শরীরে উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম তৈরি হতো। অবসাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন স্বৈরাচারের আইকনিক চরিত্র হিটলার।

হিটলারের ব্যক্তিগত চিকিৎসকের ডায়েরিতে উল্রেখ আছে, পার্টি সদস্য এবং জনগণের উদ্দেশ্যে আয়োজিত সভাগুলোতে উত্তেজক ভাষণ দেয়ার আগে এই এই মাদ্রকদ্রব্য গ্রহণ করতেন। হিটলারের ছিলো ইনসমনিয়া। রাতের পর রাত তার ঘুম ছিলো দুঃস্বপ্ন। চিকিৎসক তখন ফুয়েরারকে বারবিচুরেট দিতেন।হিটলারের সেনাপতিরা কেউ-ই ডা. মোরেলকে পছন্দ করতেন না। কিন্তু স্বয়ং হিটলারের অগাধ আস্থা ছিলো তার ওপর।   

স্বৈরাচারী শাসক বা নেতাদের জীবনে সবচাইতে বড় নেশা বোধ হয় ক্ষমতা। এই নেশার অন্য নাম লোভ। ক্ষমতার দাপটে পৃথিবীটাকে তালুবন্দী করার উদগ্র কামনা।হিটলারের মাদকাসক্তির পাশাপাশি অর্থের লোভও ছিলো। ইতিহাস গবেষকরা মনে করেন, হিটলারের ছোটবেলা কঠিন দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে। হয়তো তখন থেকেই তার মনের মধ্যে বিত্তবান হওয়ার বাসনা বাসা বেঁধেছিলো। ক্ষমতার দণ্ড হাতে নিয়েই হিটলার সরকারী অর্থ লোপাট করতে শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি জার্মানীর বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর কাছ থেকে নিয়মিত অনুদান নেয়ার নামে চাঁদাবাজি শুরু করেন তিনি।‘মাইন ক্যাম্ফ’ বইটিও হয়ে উঠেছিলো তার অর্থ আয়ের উৎস। এই বইটি তখন বাধ্যতামূলক ভাবে সকল জার্মানদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অবধারিত উপহার হয়ে ওঠে। ফলে খুব দ্রুত হিটলারের পকেটে জমা হতে থাকে বিরাট অঙ্কের রয়ালটির অর্থ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করতেন বিখ্যাত সব চিত্রশিল্প। এগুলোর অর্থমূল্যও ছিলো অনেক। ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন, সেই সময়েই হিটলারের সম্পত্তির মূল্য ছিলো ৫ বিলিয়ন ডলার।   

হিটলারের আসক্ত জীবনের ওপর বই লিখেছেন জার্মান কথাশিল্পী নরমান ওহলার। ‘ব্লিজৎ; ড্রাগস ইন নাজি জার্মানী’ বইতে তিুনি লিখেছেন, হিটলার প্রচুর পরিমাণে নেশা করতেন। ইনজেকশন দিতে দিতে তার হাতের শিরার এমন অবস্থা হয়েছিলো যে পরে ডা. মোরেল সুঁই ঢোকানোর জন্য শিরা খুঁজে পেতেন না। তার ডায়েরিতে তিনি লিখছেন, ‘‘আজকে দেখলাম বাম হাতের অবস্থা কিছুটা ভালো। কিন্তু ডান হাতে ইনজেকশন দেয়ার অসংখ্য লাল লাল দাগ স্পষ্ট’’।

ডা.মোরেলের ভাষ্য অনুযায়ী, হিটলারকে হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তার নেশায় আসক্তি অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়। ১৯৪৪ সালে এই ঘটনার পর একটা দিনও সেই ভয়ংকর দানবীয় স্বৈরশাসককে স্থির হয়ে এক জহায়গায় বসতে দেখা যায়নি। সেই ঘটনার পর থেকে তাকে ‘ইকুয়েডল’ নামে একটি একটি উপাদান ইনজেকশনে ভরে দেয়া হতো যা উপাদানগত ভাবে হেরোইনের সমার্থক।

ওহলার তার বইতে লিখেছেন, ‘‘জার্মানী নেশায় আসক্ত এক দানবের পাগলামী দেখছিলো তখন। আর সেই দানবের নাম এডলফ হিটলার’’।

তথ্যসূত্রঃ ব্রিটানিকা, ফিনানশিয়াল টাইমস

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199